Spread the love

ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের (ISCCM) ৩০ বছর পূর্তিতে সেপসিস নিয়ে সচেতনতা মূলক আলোচনা সভার আয়োজন

রাজকুমার দাস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০১৭ সালের হিসেবে প্রতি বছর বিশ্বের ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষ সেপসিসে আক্রান্ত হন।সেপসিস শরীরে যে কোনও infection জনিত কারণে ঘটতে পারে। যার কারণে অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এঁদের মধ্যে অর্ধেক ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। সেপসিস সংক্রমণে ২৯ লক্ষ ৫ বছরের কম বয়সী শিশু সহ ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। কোভিড পরবর্তী সময়ে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতবর্ষের মত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সেপসিস সংক্রমণ হলে মৃত্যুর হার উন্নত দেশগুলির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। তবে কিছু সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলে সেপসিস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশা। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের (ISCCM) ৩০ বছর পূর্তিতে সেপসিস নিয়ে সচেতনতা মূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আইএসসিসিএম –এর কলকাতা শাখার চেয়ার পার্সন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা সৌরেন পাঁজা ও সেক্রেটারি ডা সাস্বতি সিনহা জানালেন যে মারাত্মক এই সংক্রমণ প্রতিরোধে ও রোগীর প্রাণ বাঁচাতে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ এর ওপরে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। Early স্টেজ এ চিকিৎসা শুরু করলে মৃতুর হার কমানো যেতে পারে। ডা পাঁজা ও ডা সিনহা আরও জানালেন যে কোনও বয়সে সেপসিসের সম্ভাবনা থাকলেও এক্সট্রিম এজ গ্রুপ অর্থাৎ শিশু, বয়স্ক , গর্ভবতী ও প্রসূতি এবং ক্রনিক অসুখে যারা ভুগছেন (ডায়বিটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখ, ক্যানসার ইত্যাদি ) ও কেমোথেরাপি চলছে তাঁদের মধ্যে সেপসিসের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। আইএসসিসিএম –এর কলকাতা শাখার কার্যকরী সমিতির সদস্য ডা. আসিফ ইকবাল,ডা. সৌতিক পান্ডা ও অন্যান্য উপস্থিস সদ্যাসারা জানালেন যে আর্লি স্টেজে রোগ নির্ণয়ে করে দ্রুত মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসার সাহায্যে নিলে সেপসিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন নয়। মারাত্মক সংক্রমণের ফলে যখন মানুষের প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গের (যেমন ফুসফুস , হৃৎপিণ্ড , মস্তিষ্ক , কিডনি , লিভার ইত্যাদি ) কার্যক্ষমতা লোপ পায় সেই অবস্থার ডাক্তারি নাম সেপসিস উইথ মাল্টি অর্গান ফেলিওর। এই অবস্থায় পৌঁছনর আগেই চিকিৎসার সাহায্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে রোগীর বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা বাড়ে। মূলত ব্যাক্টেরিয়া , ফাঙ্গাস , ভাইরাস এবং প্যারাসিটের সংক্রমণ সেপসিসে পরিণত হতে পারে। ফুসফুস , লিভার, হার্টের মত ভাইটাল অরগ্যানের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করলে সর্বোত্তম চিকিৎসা দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও চল্লিশ শতাংশ রোগীকে বাঁচান যায় না বলে জানালেন ডা. দীপাঞ্জন ও ডা. পার্থ গোস্বামী । ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের কলকাতা শাখার অভিজ্ঞ সদস্যরা অতি সম্প্রতি কলকাতার ৭ টি হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এ ভর্তি থাকা 300 জনেরও বেশি রোগীদের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে জেনেছেন এঁদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সেপসিসে আক্রান্ত । এই রোগীদের ৫২ শতাংশর কমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন অর্থাৎ সাস্থ্য পরিষেবার বাইরে থেকে সংক্রমণ হয়েছে, বাকি ৪৮ শতাংশ সাস্থ্য পরিষেবা চলাকালীন অবস্থায় সংক্রমিত। এই সমীক্ষা অনুসারে সব থেকে বেশি সংক্রমণ হয়েছে ফুসফুসে ( নিউমোনিয়া ) ও তারপর ইউরিনারি ট্র্যাক্টে।
আজকের এই সভায় ডা. সুদিপ্ত মুখার্জি, ডা. জে শর্মা ও অন্যান্য বহু বিশেষজ্ঞ এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। এখান থেকে এই বিষয়ে চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার ডাক দেওয়া হয়। আরো জানান হয় যে রোগ প্রতিরোধের পন্থা অবলম্বন এর সঙ্গে কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট infection হলে রোগীর অবস্থা আরো সংকটজনক হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *