Spread the love

ভোটে ‘কালো টাকা’ রুখতে দামোদর – অজয় নদের বালিঘাটে অভিযান? 

মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

চলতি লোকসভা নির্বাচন আবহে কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলির অতি সক্রিয়তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।আয়কর দপ্তর থেকে এনআইএ, কিংবা সিবিআই থেকে ইডি।প্রত্যেক কেন্দ্রীয় সংস্থায় গত একমাস ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে টানা অভিযান চালাচ্ছে।কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য  অনুযায়ী, ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হওয়া নগদের পরিমাণ ৭ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। উদ্ধার হয়েছে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার লিটার মদ। যার বাজারমূল্য ৩৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের মাদক উদ্ধার হয়েছে যার দাম প্রায় ১৮ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। ভোটের মুখে ২৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা মূল্যের দামী ধাতুও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এপর্যন্ত ২৪ কোটিরও বেশি টাকা বিলি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়াও প্রায় ৩৬ কোটি টাকা অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ-সহ ১৪৭.১৯ কোটি টাকার সামগ্রী।ভোটের বিনিময়ে টাকা কিংবা মদ! নির্বাচনের আগের রাতে টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনে নেওয়ার ট্রেন্ড চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এবছরের তার অন্যথা হচ্ছে না। তবে সেই প্রবণতা রুখতে এবার বাংলার ছটি কেন্দ্রকে ‘আর্থিক স্পর্শকাতর’ বলে ঘোষণা করেছে  নির্বাচন কমিশন। স্বাভাবিকভাবেই এই ছয় কেন্দ্রে কড় নজর রাখছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দামোদর ও অজয় নদের বেআইনী বালিঘাট গুলিতে অভিযান চলতে পারে। কেননা বেআইনী অর্থ এবং এই অর্থে পুষ্ট ম্যাসলম্যানদের প্রভাব প্রতিটি নির্বাচনে দেখা যায়।অর্থ বিনা ম্যাসলম্যানরা যেন ‘মণিহারা ফণী’। তাই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত আর্থিক নজরদারি কমিটি এই সব বেআইনী বালিঘাট গুলিতে নজর রাখতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।গত একমাসে জেলার ডিএলআরও, এসডিএলআরও, বিএলআরও অফিস সহ পুলিশ – প্রশাসনের আধিকারিকদের বেআইনী বালিঘাট নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে ।সেইসব দাখিল অভিযোগ  গুলির পরিপেক্ষিতে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?.তাও নাকি অনেকে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কে কেউ কেউ এইসব বালিঘাট সংক্রান্ত জমাকৃত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তাই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কট্টর বিরোধী হিসাবে পরিচিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা শুভেন্দু এইবিধ অভিযোগ গুলি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকবেন,তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না।যদিও শাসক দলের নেতা – কর্মীরা জানিয়েছেন – ‘তারা এইসব বে আইনী বালিঘাটে যুক্ত নয়, তাই তাদের এইসব নিয়ে ফালতু চিন্তার কোন প্রসঙ্গ আসেনা’। আগামী ১৩ মে সারা দেশে লোকসভার চতুর্থ দফা নির্বাচন রয়েছে। এই রাজ্যে ৮ টি লোকসভা আসনে ভোট হবে।এর মধ্যে বোলপুর, বর্ধমান পূর্ব এবং বর্ধমান দুর্গাপুর, আসানসোল আসন অন্যতম। দক্ষিণবঙ্গের দুটি প্রধান নদী দামোদর ও অজয় নদের উপকূলীয় এলাকার মধ্যে পড়ছে এই চারটি লোকসভার অধীনে একাংশ এলাকা।বোলপুর লোকসভার অধীনে নানুর -কেতুগ্রাম – আউশগ্রাম, বর্ধমান পূর্ব লোকসভার অধীনে কাটোয়া – রায়না,বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভার অধীনে গলসি  প্রভৃতি এলাকা গুলিতে দামোদর – অজয় নদের বালিঘাট দখল – বেদখল ঘিরে হানাহানির ইতিহাস রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনে বোমাবাজি – সশস্ত্র বাহিনীর দৌরাত্ম দেখা যায় নদ – নদীর চরে।কিছু বালিঘাট ভুমি সংস্কার দপ্তরের অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগ বালিঘাট চলে বেআইনী ভাবে । আবার বৈধ ঘাট গুলি যে পরিমাণ জায়গা উল্লেখ থাকে, তা থেকে বেশি জায়গা জুড়ে চলে বালিলুট। এই বালিলুট নিয়ে গত একমাসে পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএলআরও, এসপি,ডিএম,এসডিও,এসডিএলআরও, আইসি,বিএলআরও অফিসে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে । অভিযোগ, নির্বাচনী ব্যস্ততা দেখিয়ে সিংহভাগ অভিযোগ সেভাবে গুরত্ব দেয়নি পুলিশ – প্রশাসন। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে,  এই নিস্ক্রিয়তা সামনে রেখেই বিরোধী রাজনৈতিক দল সর্বপরি শাসক দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আসরে নেমে পড়েছে। বিস্নুপুর লোকসভার বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষে দামোদরের বালিলুট নিয়ে প্রায়শই সরব হয়েছেন।উল্লেখ্য, আগামী ২৫ মে সারা দেশে লোকসভার ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে বিস্নুপুর লোকসভা আসনে নির্বাচন রয়েছে। এই লোকসভার অধীনে পড়ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ।বিশেষ সুত্রে আরও জানা গেছে যে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কে অনেকেই পুলিশ – প্রশাসনের কাছে জমা হওয়া বালিলুট নিয়ে অভিযোগপত্র গুলি পাঠিয়েছেন।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে লোকসভা নির্বাচনে কালো টাকা এবং ম্যাসলম্যান রুখতে এইসব অভিযোগ গুলি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের গোচরে আনা হতে পারে। আগামী চতুর্থ দফা নির্বাচনে বোলপুর – বর্ধমান পূর্ব – বর্ধমান দুর্গাপুর আসনের সিংহভাগ বিধানসভা এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষত বিজেপি সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল। তাই এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এজেন্সির টার্গেট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলাস্তরের শাসক দলের কোন কোন বর্ষীয়ান নেতা আশঙ্কা করছেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন  আর্থিক নজরদারি কমিটি রেখেছে। এই কমিটিতে নবতম সংযোজন কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সাম্প্রতিক সময়কালে সর্বপরি লোকসভা নির্বাচন আবহে  যেভাবে সিবিআই – ইডি – এনআইএ – আয়কর দপ্তর অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দামোদর ও অজয় নদের বেআইনী বালিঘাটের রসদ খুঁজতে এবং ম্যাসলম্যান রুখতে অভিযান চালাতে পারে কমিশন নিযুক্ত আর্থিক নজরদারি কমিটি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *