Spread the love

(কয়েকদিন আগেই পালিত হয় ‘বিজয়দিবস’। সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবির কলমে ফুটে উঠল এই শ্রদ্ধাঞ্জলি।)

মুক্তিযোদ্ধার মা
অপূর্ব চক্রবর্ত্তী

আমিই সেই মেয়ে,
আমি আমার এই বুকের মধ্যে
বারবার খুঁজে পাই-
ত্রিশ লক্ষ মৃত সন্তানের স্বপ্নপোড়া ছাই,
আর লাখো মা, বোনের আব্রুর বিনিময়।
বুলেটের এক একটা ঘায়ে
একটু একটু করে শক্ত করেছি
শিরদাঁড়াটাকে,মন হয়েছে চাবুকের মতো শক্ত।

হে আমার জন্মভূমি…..
তুমি ফুল ফুটাতে পারোনি সেদিন
অত্যাচারের বাগিচায়,
আমার পাখিরা গায়নি কোনো গান বহুদিন,
শুধু পদ্মা বয়ে’ছে মুক্তধারায় ভাইয়ের রক্ত মেখে।

যেদিন আমার প্রিয় সন্তান
আমার কপালে চুমো দিয়ে বলেছিল
“স্বাধীন বাংলায়” দেখা হবে আমাদের,
আমি কাঁদিনি, হৃদয় শক্ত করে-
এঁকেছিলাম রাজতিলক তার কপালে,
বলেছিলাম ‘ভালো থেকো’।
তারা নিশুতি পৃথিবীর এক কোনায় বসে,
তিলে তিলে তোমাকে দিয়েছে অবয়ব,
ভবিষ্যতের তুমিকে বহু ঘুমহারা রাতে,
নিষ্পলক চোখে এঁকে গেছে বুকের ভিতর,
তারুণ্যের সবুজে সবুজে।

হে আমার প্রিয় জন্মভূমি…..
বহু জাত, গোত্র, পরিচয়হীন দধিচির হাড়ের
অগ্নিস্ফুলিংগ দিয়ে, ঘোর অমানিশা রাতে
তারা দেখে গেছে তোমার ভবিতব্য মুখ।
তোমাকে এঁকেছে, শত সহস্র ভাই, বোন, মা, বাবার
বুকে রাখা লাল রঙ দিয়ে।
সেই মহাযজ্ঞ শেষে, হাহাকার আর রক্ত নদী পাড়ি দিয়ে ফেরেনি সে, ফেরেনি সে আমার বুকেতে,
শুধু পাঠিয়েছে ‘তোমার বিজয়’।

হে আমার প্রিয় জন্মভূমি….
আমিই সেই মেয়ে……..আজও কাঁদিনা,
আমাকে কাঁদতে নেই, আমি যে মুক্তিযোদ্ধার ‘মা’
তবুও যখন বুকের ভিতর উথাল পাথাল করে
শুধুই তাকিয়ে দেখি-
লাল সূর্যের ছবি খানি,তোমার সবুজ আঁচলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *