Spread the love

পূর্বাভাস

ববি সরকার

   অনিকেতের বয়স যখন ১২ তখন থেকেই সে নিজেকে আবিষ্কার করলো অন্যভাবে। ও বুঝতে পারলো ওর জীবনে যা যা অঘটন ঘটতে চলেছে তার আভাস ও আগে থেকেই পায়। ঘটনাগুলো যেন ওর আগেই দেখা বা জানা ছিল। ঠিক কোনো সিনেমা দ্বিতীয়বার দেখলে যেমন মনে হয়।ওর সাথে ঘটনাগুলো যেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

মাঝে মাঝে হতবাক হয়ে যায়। অনিকেত জানে এর পরের ঘটনাটি ঠিক কি ঘটতে চলেছে তবুও ওর যেন কিছুই করার থাকেনা। এভাবেই অনিকেত বড়ো হতে থাকে।

       আজ অনিকেতের বিয়ে কিন্তু আজ ওর সেই রকম লাগছে। কি যেন একটা অজানা আশংকা হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা অঘটন হবে।এসব কথা ও কোনোদিন কাউকে বলেনি। জানে কেউ বিশ্বাস করবে না।

কেমন একটা ঘোরের মধ্যে সারাদিন কেটে গেল। সন্ধ্যায় বিয়ে করতে বেরোনোর সময় অনিকেত মায়ের পায়ে প্রণাম করতে গিয়েই চোখ পড়লো মায়ের পা দুটিতে। খুব সুন্দর করে আলতা পরা পায়ের আঙুলে আংটি পরেছে আজ মা। কিন্তু ঐ পায়ের আংটিতে চোখ পরতেই অনিকেত এর মনটা খচখচ করতে লাগলো। সুন্দর লাগছে মায়ের পাদুটি। কিন্তু আংটিতে কি আছে!খারাপ কিছু কি হতে চলেছে ?
অনিকেত ভাবতে থাকে। অথচ কিছুতেই বলতে পারে না মাকে পায়ের থেকে ওটি খুলে রাখতে। খুলতে বললে মা যদি কষ্ট পান। বিশেষ কোনো কারণ ও বলতে পারবেনা অনিকেত। শুধু খুলতে বললেই হয়না উপযুক্ত কারণ তো চাই।
এসব ভাবতে ভাবতেই বিয়ে করতে রওনা দিলো অনিকেত।

    যাক সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে। বিয়ের পর বৌকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে অনিকেত। এবার আর তাহলে কোনো অঘটন ঘটেনি। বিয়ের হৈ হুল্লোড় এরমধ্যে মায়ের পায়ের আংটির কথা ভুলেই গিয়েছিল অনিকেত।

     বাড়িতে নতুন বৌ এসেছে।  সবাই হৈ হৈ করে ছুটে এসেছে। এবার বরণ করার পালা কিন্তু মা কোথায়! মা তো একটু আগেই দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনিকেত গাড়ির জানালা দিয়ে দেখেছে মাকে।মা এতো দেরি করছে কেন!

বরণ ডালা মাসির হাতে, মাকে জোরে জোরে ডাকছে ” ও মেজদি… আর কতক্ষণ ছেলে-বৌ এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে গো… এসো ..ঘরের বৌকে বরণ করে নাও ।”
মা উওর দিল – “যাই ছোট..ও..ও..।”
মায়ের মুখের কথা শেষ হতে না হতেই বিকট শব্দে সবাই চমকে গেল।
তাড়াতাড়ি অনিকেত সিঁড়ির দিকে ছুটলো। অনিকেতের মা ততক্ষণে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নীচে এসে পড়েছেন। মাথা ফেটে অজ্ঞান হয়ে গেছেন তিনি।

 হঠাৎ অনিকেত এর চোখ গেল মায়ের পায়ের দিকে। পায়ে তখনো সেই রুপোর আংটিটা পরা আর তাতেই জড়িয়ে রয়েছে মায়ের শাড়ির আঁচল। বুঝতে একটুও দেরি হলো না অনিকেতের। আংটিতে কাপড় জড়িয়ে মা পড়ে গেছেন। বাড়ির সবাই ছুটে এসেছে মাসিমা চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে, নতুন বৌ ভয়ে জড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব দৃশ্য যেন ওর আগেও দেখা অথচ আগে তো এমন কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।বাড়িতে এতো লোকজন একসাথেও হয়নি। কিন্তু দৃশ্য গুলো ওর পূর্বপরিচিত মনে হচ্ছে।নির্বাক অনিকেত মাকে কোলের ওপর নিয়ে অপলক চোখে দেখতে লাগলো সবকিছু। মায়ের মাথার থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ভেসে যাচ্ছে অনিকেতের বুক।

অঘটন তাহলে ঘটেই গেল। এটাকে কি বলা যায়, অলৌকিক, পূর্বাভাস নাকি অশনিসংকেত!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *