Spread the love

ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের 

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই এবং সিট কে তদন্তভার দেওয়া হলো।এদিন আদালত জানিয়েছে – ‘ এটা মামুলি কোন হিংসার ঘটনা নয়,খুন ধর্ষণের মত অনেক গুরতর অভিযোগ রয়েছে । তাই সিবিআই তদন্ত এর নির্দেশ দেওয়া হলো ‘। পাশাপাশি আদালত ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ সরাসরি একাউন্টে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটির কাছে ৩৩৫৪ টি অভিযোগ এসেছে। অথচ রাজ্য পুলিশ ৬৫১ টি এফআইআর রুজু করেছে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। তবে অন্য রাজ্যে মামলা স্থানান্তরিত করার আবেদন খারিজ করা হয়েছে। নুতন করে অভিযোগ এলে আলাদা ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করেছে। প্রায় দু সপ্তাহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আক্রান্ত দের সাথে কথা বলেছে তারা।কলকাতা হাইকোর্টের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রিপোর্টে সুপারিশ রেখেছিল যে, ‘ভোট পরবর্তী হিংসা ঘটনাগুলিতে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন। রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে কোন সহযোগিতা মেলেনি।রাজ্যের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, পূর্নাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অনেক মানুষ খুন, ধর্ষণ ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।নিয়ন্ত্রণে না রাখা গেলে অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়বে।যা দেশের গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দিতে পারে’। সেইসাথে অন্য রাজ্যে এই মামলা গুলি স্থানান্তরিত করা এবং স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে। এছাড়াও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিশেষ আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা গুলি দ্রুত নিস্পত্তি করার আবেদন জানানো হয়েছিল।এর আগে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চে সাত দফার অন্তবর্তী নির্দেশ জারি করেছে আদালত। যা রাজ্যের কাছে মোটেই সুখকর নয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। রাজ্য কে নজিরবিহীনভাবে তীব্র ভৎসনা করেছিল আদালত। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে জানানো হয়েছিল, তারা আদালতের নির্দেশে রাজ্যের ১৬৮ টি জায়গায় পরিদর্শনে গিয়েছিল। তবে যাদবপুরে গেলে তাদের আক্রান্ত করা হয়। রাজ্য কোনভাবেই সহযোগিতা করেনি।পুলিশ ছিল নিস্ক্রিয়। এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের সংশ্লিষ্ট ডিসি রশিদ মুনির খান কে শোকজ করা হয়েছিল আদালত অবমাননার জন্য।যা ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে এই পুলিশ অফিসার কে লিখিতভাবে জানাতে হয়েছিল। আগেই আদালত জানিয়েছিল – রাজ্যের  কোন অসহযোগিতা এলে,তা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়বে। যে সাত দফার অন্তবর্তী নির্দেশ জারি হয়েছে সেগুলি হলো, ১/  প্রত্যেক অভিযোগের ভিক্তিতে এফআইআর করতে হবে। সমস্ত ঘটনার দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে। ২/ ভোট পরবর্তী হিংসায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। ৩/ মৃত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মৃতদেহ কলকাতার কম্যান্ডো হাসপাতালে রাখতে হবে। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হবে দেহের।৪/ যাদবপুরে কেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের হামলার মুখে পড়তে হলো, ডিএম /এসপি  কে কেন শোকজ করা হবেনা, তা জানাতে হবে রাজ্য কে।৫/ ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় আহতদের রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য কে। ৬/ যে যে অভিযোগ বিভিন্ন কমিটি বা আহতদের লোকজন করছে তা ১৬৪ নং ধারা মতে পুলিশ কে নথিভুক্ত করতে হবে। সমস্ত অভিযোগ গুলি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কে জানাতে হবে। ৭/ রাজ্যের কাছে যা তথ্য আছে তা মুখ্যসচিবের দায়িত্বে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।এরেই মধ্যেই গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট পেশে ভোট পরবর্তী হিংসা ঘটনাগুলিতে সিবিআই তদন্তর সুপারিশ জানিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ ক্রমে সিবিআই তদন্ত এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরত্বপূর্ণ মামলা গুলিতে তিন সদস্যের আইপিএস অফিসারদের নেতৃত্বে সিট তদন্ত চালাবে বলে জানিয়েছে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *