Spread the love

দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে উঠল আটল্যাণ্টার বাঙালিরা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

ওরা প্রবাসী বাঙালি। দুর্গাপুজো এলেই ওদের মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। একরাশ বিষণ্নতা গ্রাস করে ওদের। পুজোর সময় ফিরে যেতে মন চায় নিজের প্রিয় গ্রামের বাড়িতে। চায় বললেই তো আর ফেরা যায়না! ওরা গত আট-দশ বছর ধরে কলকাতা থেকে প্রায় ষোলো হাজার মাইল দূরে আমেরিকার আটল্যাণ্টার বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে কর্মরত। মনের দুঃখ দূর করার জন্য বিকল্প হিসাবে ২০১৯ সালে প্রবাসেই শুরু করে দেয় দুর্গাপুজো। এবার সেই পুজো পাঁচ বছর অতিক্রম করল। 

শুরুটা ছিল বেশ নাটকীয়। পুজোর মাত্র কয়েকদিন আগে আটল্যাণ্টাবাসী আউসগ্রামের দ্বারিয়াপুরের বাসিন্দা অমিত ঘোষ বন্ধুদের কাছে দুর্গাপুজোর আয়োজন করার প্রস্তাব দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রাজী হলেও বিভিন্ন কারণে সেটা প্রায় বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়। শেষ মুহূর্তে মাত্র ১৮ ঘণ্টার প্রস্তুতিতে শুরু হয় পুজো। প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে প্যাণ্ডেল - সবকিছু নিজেরাই তৈরি করে। 

গ্রামের অধিত বিদ্যা কাজে লাগিয়ে প্রতিমা তৈরি করেন অমিত বাবু। প্রতিমা সজ্জায় হাত লাগান তার স্ত্রী ঐন্দ্রিলা দেবী। এমনকি তার কন্যা অরত্রিকা ও পুত্র অর্নিশ প্রতিমার রঙ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

পুজোর সময় আরও কয়েক জোড়া দম্পতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুমন ও তনুশ্রী হালদার, কৌশিক ও রেশমী দাস, ত্রিদীপ ও অঙ্কিতা পাল, নুপূর ও রীতেশ গুপ্ত সহ সচীন্দ্র দুবে ও প্রীতি সুপেকর। সবার মিলিত প্রচেষ্টার ফলে সুদূর আমেরিকা হয়ে ওঠে নিজের গ্রাম। এবার পুজোর সময় প্রায় ৬০০ জন অংশগ্রহণ করে।

প্রথম বছর সামান্য সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়। পুরনো বন্ধুরা ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে ঠাকুরের সাজের সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়। এবার আবার ঢাকের ব্যবস্থা করে দেয় অমিতের ভ্রাতৃতুল্য দেবাঙ্কুর চ্যাটার্জ্জী। 

বিদেশ হলেও এখানে পুজো পুরোপুরি তিথি নক্ষত্র মেনেই হয়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো সিঁদুর খেলা। ওখানে বসবাসকারী শাড়ি পরিহিতা বাঙালি মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে। তখন দেখলে বোঝা যাবেনা ওরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বাস করছে।

পুজোর সময় কচিকাচারাও আনন্দে মেতে ওঠে। ওদের নিয়েই আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেটাও যথেষ্ট উপভোগ্য হয়।

অমিত বাবু বললেন - পুজো এলেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত। তাই নিজেরা এখানে পুজো শুরু করি। হয়তো ওখানে গ্রামের ছোটবেলার বন্ধুদের পাইনা, কিন্তু যেটা পাই সেটাই বা কম কিসের? তাছাড়া এই পুজোর মাধ্যমে আমরা নিজ নিজ সন্তানদের বাঙালির দুর্গাপুজো ও রীতি সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *