Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

শনিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে ঘোষিত হলো বহু চর্চিত ডালিম সেখ খুনের মামলার রায়দান। এই খুনের মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে তৎকালীন জেলাপরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী সহ ২৪ জন বেকসুর খালাস হয়েছেন। ২ জন ফেরার রয়েছে, এই মামলায়।তাদের মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লাহ চৌধুরী অন্যতম। আদালতের নির্দেশে ফেরারদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।  টানা ৭ বছর জেলের কারাগারে বন্দিজীবন কাটানোর পর এদিন কোর্ট লকআপে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় মঙ্গলকোটের জনপ্রিয় নেতা বিকাশ চৌধুরী কে।বাম জমানায় ফাল্গুনী মুখার্জি খুনের মত তৃণমূল আমলের ডালিম সেখ খুনের মামলা ছিল মঙ্গলকোটে বহু চর্চিত বিষয়। গত ২০১৭ সালে ১৯ জুন সন্ধেবেলায় আততায়ীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলেন তৎকালীন শিমুলিয়া ১ নং অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ডালিম সেখ। এই খুনে সেসময় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লাহ চৌধুরী,  জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী সহ ২৪ জনের নামে অভিযোগদায়ের করা হয় নিহতের পরিবারের তরফে। ২০০৯ সালের ১৫ জুন দাপুটে সিপিএম নেতা ও তৎকালীন জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখার্জির মত ২০১৭ সালের ১৯ জুন ডালিম সেখ খুনের ঘটনাতেও পূর্বস্থলীর পেশাদার সুপারি কিলারদের ভূমিকা সামনে আসে।সেসময় মঙ্গলকোটের ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত এই খুনের মামলায় তদন্তে সাহসীকতার পরিচয় দেন।সেসময় নাকি ওই ওসি কেও টার্গেট করেছিল আততায়ীরা? ডালিম সেখ খুনের মামলায় তদন্তভার জেলা পুলিশ থেকে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির হাতে যায়। নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার পর্ব দীর্ঘায়িত করতে  কেউ কেউ সক্রিয় ছিল বলে বেকসুর খালাস পাওয়াদের একাংশের আইনজীবীদের অভিযোগ। ডালিম সেখ কেন খুন হলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর মঙ্গলকোটের অনেকেরই কাছে অজানা। সেসময় মঙ্গলকোটে স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বনাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর ঠান্ডা লড়াই অব্যাহত ছিল রাজনৈতিক মাটি দখলের জন্য ।তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী ছিলেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ডান হাত। তাই ডালিম সেখ খুনে বিকাশ চৌধুরীর জড়িয়ে পড়াটা রাজনৈতিক আক্রোশ ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন।যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এই গোষ্ঠীবিবাদের কথা স্বীকার করেনি।অপরদিকে আরও একটি সুত্র জানাচ্ছে -‘ মঙ্গলকোটে শাসক দলের রাজনৈতিক অভিভাবক অনুব্রত মন্ডলের অনুগামী না হওয়ায় বিকাশ চৌধুরী কে অযথা এই মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেসময় ‘। সময়ের ব্যবধানে এই খুনের মামলায় জেলা পুলিশ তথা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ সেভাবে জোগাড় করতে পারেনি বলে মনে করছে আইনজীবীদের একাংশ। জানা গেছে,  বিকাশ চৌধুরী আরও এক মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন । সেই মামলার রায়দান আসন্ন।জানা গেছে,বিকাশ বাবু দল পরিবর্তন করবেন না।তিনি দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে তাঁর প্রতি অন্যায়ের বিচার চাইবেন। জেলের গারদের টানা সাত বছরের মধ্যে তাঁর স্ত্রী কে যেমন চিরতরে হারিয়েছেন।হারিয়েছেন আরও অনেক কিছু।মঙ্গলকোটের সিংহভাগ সাধারণ বাসিন্দাদের প্রশ্ন খুন হয়ে যাওয়া ফাল্গুনী মুখার্জি – আজাদ মুন্সি – ডালিম সেখ – অসীম দাসদের প্রকৃত খুনি কারা? খুনের সঠিক বিচার না হলে ফের খুনের সম্ভাবনা জিইয়ে থাকবে মঙ্গলকোটের মাটিতে, তা মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *