Spread the love

উত্তর দমদমের আদরবাসার অনন্য প্রয়াস

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

 বছর তিনেক আগে নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির 'আদরবাসা'। করোনার সময় বারবার নিজ এলাকার দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বীকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা না হয়েও পাঁচ জনের সহযোগিতায় এটা হয়ে উঠেছে প্রকৃত সমাজসেবী সংস্হা। 

 করোনার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার জন্য এলাকার প্রায় ৩০ টি দুস্থ শিশুদের নিয়ে সপ্তাহে দু'দিন করে শুরু হয় আদরবাসার পাঠশালা। প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় টিফিন। আমাদের সংবাদ মাধ্যমে খবরটি তুলে ধরার পর সহৃদয় ব্যক্তিরা বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত। 

 স্বাভাবিক ভাবে এখন দু'দিনের পরিবর্তে ছ'দিন পাঠদান চলছে। কিন্তু অর্পিতা ইন্দ্র তার 'মানসকন্যা' আদরবাসার শিশুদের  গতানুগতিক পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে আটকে রাখতে চাননি, মনের মধ্যে জোটাতে চেয়েছেন আনন্দের খোরাক। তারই অঙ্গ হিসাবে শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয়েছে নৃত্য শিক্ষা। শিক্ষিকা অর্পিতা নিজেই। পাশে পেয়েছেন প্রতিমা পালকে। এরফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদা উৎসাহ দ্যাখা যাচ্ছে। অভিভাবিকারাও খুব খুশি। 

  জনৈকা অভিভাবিকা শ্যামলী দেবী বলেই ফেললেন - আমরা গরীব মানুষ। ছেলেমেয়েদের দু'বেলা ঠিকমত খেতে দিতে পারিনা। করোনার সময় ভেবেছিলাম আর হয়তো ওদের পড়াশোনা হবেনা। অর্পিতা দিদির জন্য আজ আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে নাচও শিখছে। এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মত ছিল। আজ খুব আনন্দ হচ্ছে।

  অর্পিতা এখানেই থেমে থাকেনি। ওদের দিয়ে কিছু হাতের কাজও শুরু করেছে। সামনে দীপাবলী। টুনি লাইট আসার আগে মাটির প্রদীপ জ্বলে উঠত রাতের অন্ধকারে। মাটি সংগ্রহ করে ওরা তৈরি করতে শুরু করে প্রদীপ। এছাড়া স্হানীয় দোকান থেকে কিছু প্রদীপ কেনা হয়। দেবাশীষ, দেবু, পুজা, সুস্মিতা, শঙ্কররা সেগুলো ফেব্রিক দিয়ে রঙিন করে তোলে। সৃষ্টির আনন্দে ওদের চোখেমুখে খেলে যায় আনন্দের ঝিলিক। ওদের তৈরি প্রদীপ দেখে বোঝাই যাবেনা এই প্রথমবারের জন্য কিছু সৃষ্টি করার সুযোগ ওরা পেয়েছে।

 অর্পিতার নিঃস্বার্থ এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষরা। তাদের বক্তব্য - অর্পিতার মত ব্যক্তিরা যত এগিয়ে আসবে তত সমাজের উপকার হবে।

  অর্পিতা দেবী বললেন - আমার লক্ষ্য ওদের নৃত্য, গীত ও কবিতা পাঠে পারদর্শী করে তোলা। তারপর পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ওরা যাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেই চেষ্টা করব। মায়ের উৎসাহে প্রদীপ তৈরির ভাবনাটা মাথায় আসে। দীপাবলীতে ওদের তৈরি প্রদীপ বিক্রি করে যদি কিছু আয় হয় সেটাই বা কম কিসের? ভবিষ্যতে হয়তো অন্য কিছু তৈরির কথা ভাবব। জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যে প্রায় চার সহস্রাধিক প্রদীপের 'অর্ডার' পাওয়া গ্যাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *