Spread the love

সাধু বাবার ফাঁদে পড়ে খুন হয় মা ও মেয়ে, খুনি সাবস্ত সাধুর ফাঁসির আদেশ,বীরভূমে

সেখ রিয়াজউদ্দিন, বীরভূম :- মা ও মেয়ে কে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক সাধু বাবাকে মঙ্গলবার ফাসির আদেশ দেন রামপুরহাট অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস। গত ২০২০ সালের ১৭ই মে বীরভূমের মল্লারপুর হাইস্কুল মোড় সংলগ্ন এলাকার ঘটনায়।সেখানে একটি পরিবারের মধ্যে বসবাস ছিল মা, মেয়ে ও বাবার। সেই পরিবারে মা মেয়ে রহস্যজনক ভাবে খুন হন এবং পরিবারের কর্তা তথা বাবা ও নিখোঁজ হয়ে পড়েন।যার পরিপ্রেক্ষিতে রহস্য ঘনীভূত হয় তথা সন্দেহের তীর দেখা দেয় পরিবারের কর্তার দিকে।এমনকি তার নামে স্থানীয় মল্লারপুর থানায় খুনের অভিযোগও দায়ের হয়। পরবর্তীতে পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনায় মূল পান্ডা এক সাধুবাবার হদিস পান।তিনি নিজেকে হরিচরণ দাস, সুনীল দাস, হরিবাবা,স্বরূপ রায় ইত্যাদি নামে পরিচয় দিতেন।পুলিশ জানতে পারে তথা পরিবারের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় সেখানে দেখা যায় ভন্ড সাধুবাবার চক্রান্তে পড়ে প্রতারনার শিকার হয় পরিবারটি।সেদিনের ঘটনার নাটকীয় হাড়হীম করা বর্ণনার কথা শোনান রামপুরহাট আদালতের সিনিয়র পিপি উৎপল মুখার্জী।
বিবরণে জানা যায় মিলন মন্ডল ও ডলি মন্ডলের মেয়ে রুমা মন্ডল (১৭) আগুনে পুড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে যায়। সেই ক্ষত সারানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও আগুনে পোড়া দাগের চিহ্ন থেকেই যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরহাট ডাকবাংলায় এক সাধু বাবার সাথে পরিচয় হয় এবং তিনি দায়িত্ব সহকারে সেই দাগগুলি নির্মূল করে দেওয়ার কথা বলেন বিনিময়ে টাকা চুক্তি হয়। সেই হিসেবে দফায় দফায় টাকাও নেওয়া হয়। এমনকি প্রায়ই বাড়িতে হোম যজ্ঞের আয়োজন করা হতো সাধুবাবার নির্দেশ মোতাবেক। দীর্ঘ পাঁচ ছয়মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাইতেই ঘটে এই চক্রান্ত।শেষ দিন বাড়িতে
হোমযজ্ঞ করার সময় বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেন সাধুবাবা যেমন পরিবারের তিনজন তিনটি রুমে পৃথক পৃথকভাবে থাকতে হবে, পাড়া-প্রতিবেশী কারো সাথে যোগাযোগ রাখা যাবে না। সেদিন উপোস করে থাকতে হবে এক সপ্তাহ নিরামিষ খেতে হবে এই সমস্ত বিধি নিষেধ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে মাকে বলাৎকার করার চেষ্টা করে। তথন বাধা দিতে গেলে হাতের কাছে সবজি কাটা বঁটি দিয়ে খুন করে।কোনো ক্রমে মেয়ে দেখে ফেলে যার জেরে তাকেও শ্বাসরোধ করে খুন করে।এদিকে বাড়ির কর্তা মিলন মন্ডল কে অন্যত্র শিবমন্দিরে পূজা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাধুবাবা নিয়ে যান।শেষ পর্যন্ত গনপুর জঙ্গলের কাছে ছেড়ে দিয়ে সাধুবাবা পালিয়ে যান।দুমাস পর ভেশ বদলে থাকা অবস্থায় তারাপীঠ শ্মশান থেকে পুলিশ সাধু বাবাকে আটক করে।গতকাল আদালতে বিচারক সাধুবাবাকে মা মেয়ে খুন ও প্রতারনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।আজ মঙ্গলবার সেই ঘটনার ৩৭৬ ধারায় রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দশহাজার টাকা জরিমানা।২০১ ধারায় সাত বছর কারাবাস ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ডের রায় দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *