Spread the love

গুসকরায় পালিত হলো রাখি বন্ধন উৎসব

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,

  বাংলায় ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে  প্রতিহত করার জন্য ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন কে হাতিয়ার করে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এর সুযোগ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা দিতে রাখিবন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন। বাংলার ঘরে ঘরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদ্দেশ্যে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে একে অপরের হাতে রাখি পরিয়ে সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দেয় ।

একজন কবির ডাকে গোটা বাংলা স্তব্ধ হয়ে যায় । রবীন্দ্রনাথ রাখির সুতোয় যে সম্প্রীতির বার্তা দেন আজও তাকে ধরে রেখেছে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি বাঙালি। সারা রাজ্যের সঙ্গে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয় গুসকরাতেও।
২২ শে আগষ্ট গুসকরাতে দুটি উৎসব পালিত হয় – একটি গুসকরা শহর তৃণমূলের উদ্যোগে বিদ্যাসাগর হলের সামনে। অপরটি পালিত হয় গুসকরা পৌরসভা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে।
প্রথমটিতে শহর ত‍ৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কুশল মুখার্জ্জী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শহর যুব তৃণমূল সভাপতি কার্তিক পাঁজা, শ্রীকান্ত সিনহা, গণেশ পাঁজা, ব্রততী চৌধুরী, প্রদীপ কোনার, বেলি বেগম, সাধনা কোনার, তৃণমূল আইটি সেলের রবিনাথ আঁকুরে সহ অন্যান্য তৃণমূল কর্মীরা।
এখানে উপস্থিত তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের হাতে রাখি বেঁধে দেয়। অন্যদিকে পথ চলতি সাধারণ মানুষ, কর্তব্যরত পুলিশ ও সিভিক ভলাণ্টিয়ার, বাস ও টোটো চালকদের হাতে রাখি বেঁধে দেয় স্নেহা, রিয়া, রানি, মলি, অন্তরা, সৌমিকা, রুকসার, প্রিয়াঙ্কা, ঈশিতা সহ শহরের একদল বাচ্চা মেয়ে। সঙ্গে সঙ্গে সবার হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টি এবং অনেকের হাতে মাস্ক তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
একদল অচেনা মানুষের হাতে রাখি বেঁধে আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্নেহা তো বলেই ফেলল- এ এক অন্য অনুভূতি। ভাবতেই পারিনি এত মানুষের হাতে রাখি বাঁধার সুযোগ পাব। অন্যদের অনুভূতি একইরকম।
গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত অপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য রত্না গোস্বামী, গণেশ পাঁজা, পৌরসভার বড়বাবু মধুসূদন পাল, যুবকল্যাণ দপ্তরের প্রতিনিধি অমর গাঙ্গুলি এবং পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কুশল মুখার্জ্জী সহ অন্যান্যরা।
এখানে পথচলতি মাস্কহীন মানুষের মুখে মাস্ক বেঁধে দেওয়া হয় এবং হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টি । তার আগে বিধায়ক, কুশল বাবু সহ অন্যান্যরা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। উদ্বোধনী সঙ্গীত এবং নৃত্য পরিবেশন করেন পৌলিমা বিশ্বাস।

       পরে বিধায়ক অভেদানন্দ বাবু বলেন - আজকের দিনের তাৎপর্য কোনো বাঙালিকে বলতে হবেনা। প্রতিটি বাঙালির এবিষয়ে সম্যক ধারণা আছে। আমাদের নেত্রী মমতাময়ী মমতা ব্যানার্জ্জীর হাত ধরে এই সম্প্রীতির উৎসব শুধু গুসকরা বা রাজ্যে নয় গোটা দেশের 

প্রতিটি কোণে একদিন পালিত হবে – এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে এটাই হবে অহিংস অস্ত্র।
অন্যদিকে কুশল বাবু বলেন – দীর্ঘদিন ধরে বাঙালির বুকে এই উৎসব পালিত হলেও আমাদের নেত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় এটা আজ সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মেতে উঠেছে।তাইতো মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে ছোট্ট ঈশিতা পর্যন্ত বাঁধন ছেঁড়া আনন্দে মেতে ওঠে। সবার একটাই পরিচয় আমরা মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *