রামপুরহাট কলেজে আয়োজিত হলো বাংলা ভাষাতত্ত্বের উপর সেমিনার
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
মঞ্চে নিজের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী এবং দর্শক আসনে একসময়ের সহপাঠী ও বর্তমান স্নেহের ভাইবোন মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক উপস্থিত – ঠিক এইরকম একটি পরিবেশে যদি নিজের লেখা বই সবার সামনে আসে তার অনুভূতিটাই অন্যরকম। সবার কপালে সেই সুযোগটা না জুটলেও সেই সুযোগ পেল মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামের তৃণা মুখার্জ্জী।
২৩ শে মার্চ ‘ন্যাক’ স্বীকৃত [ B grade, ২১ শে মার্চ,F.19.26/EC(SC-150)/DO] বীরভূমের রামপুরহাট কলেজের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে এবং IQAC এর সহযোগিতায় কলেজ ক্যাম্পাসের সেমিনার হলে আয়োজিত হয় ‘ভাষাতত্ত্ব’ এর উপর এক সেমিনারের। সেমিনারে বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ, গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল চন্দ্র দাস সহ রামপুরহাট কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাসুদেব সরকার, বিভাগীয় প্রধান সঞ্জয় হাঁসদা, ড. তিস্তা দত্ত রায়, ড. সায়নী রাহা, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. বুদ্ধদেব মুখার্জ্জী এবং রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আশীষ ব্যানার্জ্জী। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপকরাও উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারের প্রধান বক্তা শ্যামল চন্দ্র দাস সরস ভঙ্গিতে বললেন - বাংলা ভাষার উন্নতি করতে গেলে 'ভাষার ভ্যাকসিন' দরকার। তিনি উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের কাছে বাংলা ভাষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং মন দিয়ে তাদের বাংলা ভাষা চর্চার পরামর্শ দেন।
একই পরামর্শ দেন আশীষ বাবু। তিনি বলেন - এই কলেজের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের হাতে। আশাকরি তোমরা তোমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার জন্য বাংলা বিভাগের প্রধান সঞ্জয় বাবু প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাসুদেব সরকার। তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তাদের বক্তব্য ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী তৃণা রামপুরহাট কলেজ ক্যাম্পাস থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে। সে ছিল ২০১৬-২০১৮ অর্থাৎ যে বছর এই কলেজে প্রথম বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরর বাংলা বিভাগের ক্যাম্পাস শুরু হয় তার ছাত্রী। সে এই কলেজ থেকে প্রথম স্হান অধিকার করে। গত কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় তার লেখা ‘বাংলা ছোট গল্পে চোর’ সম্পর্কিত একটি আলোচনামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেমিনারে আমন্ত্রিত তৃণা এই বইটি উপস্থিত অধ্যাপকদের হাতে তুলে দেয়। বইটির ভূয়সী প্রশংসা করে অধ্যাপকরা উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের বইটি সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। পরে তৃণা কলেজের পাঠাগারের জন্যেও তার লেখা বইটি অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেয়।
তৃণা বলল – এই কলেজ ক্যাম্পাস থেকে আমি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয়দের ভালবাসা পেয়েছি প্রচুর। বাংলা বিভাগ থেকে যখন আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠি। শুধু তাই নয় আমার লেখা বইটি তাঁরা নিয়ে যেতে বলেন। আজ তাঁদের হাতে বইটি তুলে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। আমার লেখা সার্থক হলো।
অন্যদিকে বাসুদেব বাবু বললেন - তৃণা আমাদের ছাত্রী। বইটি লেখার সময় সে বারবার আমাদের পরামর্শ চেয়েছে। বইটি হাতে পেয়ে খুব ভাল লাগছে। আমাদের প্রত্যাশার বাইরে বইটি যথেষ্ট উন্নত মানের হয়েছে। আমরা তৃণার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।