Spread the love

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তীর পুনর্বহাল মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রায়দান ‘স্থগিত’

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

অবশেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী পুনবহাল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রাখলো।আগামী সপ্তাহে এই রায়দান ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। গত শুক্রবার এই আপিল পিটিশনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট  জানতে চেয়েছিল, -‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পুনর্বহাল করার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের রয়েছে কি?‌  এর জবাবে রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনুসিংভি  এজলাসে জানিয়েছেন ,-  ‘‌হ্যাঁ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টের সেকশন ৮ অধীনে। অনুগ্রহ করে ৮ (‌২) এর ধারা টি দেখুন।’‌ এএ পাশাপাশি দাবির স্বপক্ষে অনুচ্ছেদ ২৯ ও ৩১- এর উল্লেখ করেন তিনি । ওইদিনের সুপ্রিম কোর্টের  শুনানিতে অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন, – সেকশন ৮ (‌৫)‌ ও ৬ এ বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে পুনরায় নিয়োগের জন্য যোগ্য হবেন’। তবে  সুপ্রিম কোর্টের  বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ জানায় , –  ‘‌ধারা ৮(২)(এ) নিয়োগের ক্ষমতা দেয় না কিন্তু রাজ্য সরকারকে একটা ‘‌ভয়েস’‌ দেয়’।উল্লেখ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালী চক্রবর্তীর রাজ্যের পুনর্বহাল নির্দেশ কে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছে  রাজ্য।কেননা কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশে শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নন, রাজ্যের কুড়ির বেশি উপাচার্য বিপাকে পড়তে পারেন।সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশনামায় জানানো হয়েছে যে, ‘কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই’। সংশ্লিষ্ট মামলাটি শুধু সোনালি চক্রবর্তীর নিয়োগের বিরোধিতা করে দায়ের করা হলেও রাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ নিয়ে একই প্রশ্ন উঠতে পারে। এই রায়ের উল্লেখ করে সেই সব নিয়োগও বাতিল হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা ও আইনজীবী মহলের বড় অংশ । জানা গেছে,  তাই এই রায় নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেছে রাজ্য সরকার  । তবে কলকাতা  হাইকোর্টের রায়ের ব্যাপারে সোনালি চক্রবর্তী  কোনও মন্তব্য করতে চাননি সংবাদমাধ্যমের কাছে।সম্প্রতি  হাইকোর্ট কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালী চক্রবর্তীর পুনবর্হালের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করে থাকে  । ডিভিশন বেঞ্চ  জানিয়েছে, ‘রাজ্যের কোনও এক্তিয়ার নেই এইভাবে উপাচার্য নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ করার’। গত বছর ২৭ অগাস্ট রাজ্যের  বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে  পুনরায় নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্য  যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা খারিজ করেছে হাইকোর্ট । এব্যাপারে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে।আগের শুনানি পর্বে এই মামলার  রায়দান স্থগিত রাখা ছিল। ওইদিন  কলকাতা হাইকোর্ট  রায়ে জানিয়েছে, -‘ সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনরায় নিয়োগের জন্য রাজ্য যে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা খারিজ করা হল’।গত বছর ২৭ অগস্ট মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়য়-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়গ করেছিল রাজ্য সরকার। সেই সময় তৎকালীন  রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনকড় এই নিয়োগে অনুমতি দেয়নি। রাজভবনের সিলমোহর ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার।হাইকোর্টে যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, -‘ এই নিয়োগ বেআইনি। রাজভবনকে এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করার অর্থ সাংবিধানিক পদ, প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি অস্বীকার করা। একটা গনতান্ত্রিক দেশের রাজ্য সরকার যদি সাংবিধানিক বিধিকে লঙ্ঘন করে, রাজ্যপাল তথা রাজভবনকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় পছন্দের লোক বসায় তাহলে সেখানে সংকট আসবেই।সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়োগকে খারিজ করে দেয়। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে, -‘ এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় পছন্দের লোক বসানো যায় না’।উল্লেখ্য , এই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের সঙ্গে সংঘাতের পরেই রাজ্য সরকার নতুন বিল আনে, রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হবেন পদাধিকার বলে মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে রাজভবনে পড়ে রয়েছে। এরমধ্যেই ওইদিন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, -‘ সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপাচার্য পদে পুনর্বহাল করা যাবে না’। গত বছর ২৭ অগাস্ট সোনালী চক্রবর্তীকে পুনরায় উপাচার্য পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যের ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করলো কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বক্তব্য, -‘রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার নেই উপাচার্য নিয়োগের’। কলকাতা  হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তীয় মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। সে বছরের ২৭ আগস্ট তাঁকে উপাচার্য হিসেবে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সোনালি চক্রবর্তীর মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনেই ‘রিমুভাল অব ডিফিকাল্টি ক্লজ’-এর কথা বলে তাঁকে পুনর্নিয়োগ করে সরকার। তবে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। মামলাকারীর প্রশ্ন ছিল, -‘ কোন পদ্ধতিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তাঁকে উপাচার্য হিসেবে পুনর্বহাল দিল সরকার’? ওইদিন এই মামলার শুনানির পরেই  আদালতের তরফে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, এই রায় ঘোষণার পর থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে থাকতে পারবেন না তিনি।   রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, -‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সুষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার জন্যই তাঁকে ফের নিয়োগ করা হয়েছিল’।  কলকাতা হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর উচ্চশিক্ষা দপ্তরের আইনজীবীরা এই বিষয়ে আইনী আলোচনা চালান।গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি চলে। রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *