রেলের ওয়াগন থেকে তেল চুরিতে গ্রেফতার পাঁচ
ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাত ফসকে বেপাত্তা ডিস্কো
খায়রুল আনাম
দাঁড়িয়ে থাকা রেলের ওয়াগন থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চুরি-চক্রের পাঁচজনকে বীরভূমের রামপুরহাট রেল পুলিশ ও রেলের ক্রাইম ব্রাঞ্চ গ্রেফতার করতে পারলেও, এই তেল চুরি-চক্রের মূল পাণ্ডা ডিস্কোকে জালে তুলতে পারলো না রেল পুলিশ ও রেলের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। তাদের যৌথ অভিযানের সাঁড়াশি ফাঁক গলে বেরিয়ে গেল ডিস্কো। ধৃতদের রেলওয়ে বিধির বিভিন্ন ধারায় যুক্ত করে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে, আদালত দু’জনকে পুলিশি হেফাজত ও তিনজনকে জেল হেফাজতে পাঠাবার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ যাদের নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যদের সন্ধান পাবার চেষ্টা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রামপুরহাটের তারাপীঠ রোড ও মল্লারপুর রেল স্টেশনের মাঝখানে বিভিন্ন সময় দাঁড়িয়ে থাকে রেলের তেলভর্তি ওয়াগন। আর এই জায়গা থেকেই ওয়াগন থেকে ডিজেল তেল চুরির বিষয়টি নজরে আসে রেল পুলিশ রেলের ক্রাইম ব্রাঞ্চের। এরপরই গত ১৯ নভেম্বর ভোররাত্রে এখানকার ১৪০ নম্বর রেল সেতুর কাছে অভিযান চালিয়ে রেল পুলিশ ও রেলের ক্রাইম ব্রাঞ্চ দেখতে পায় যে, দাঁড়িয়ে থাকা রেলের ওয়াগন থেকে বিশেষ পদ্ধতির পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল তেল বের করে ড্রাম ভর্তি করে পিকআপভ্যানে তোলা হচ্ছে। রেল পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই দুষ্কৃতকারীরা পিকআপভ্যানটি ফেলে পালিয়ে যায়। রেল পুলিশ পিকআপভ্যান-সহ ১২ টি ২০০ লিটারের ও ২ টি ৫০ লিটারের ডিজেল তেল ভর্তি জার আটক উদ্ধার করে। পাওয়া যায় আরও খালি জার ও ওয়াগন থেকে ডিজেল তেল বের করে আনার বিশেষ পদ্ধতির পাইপ। রেল পুলিশ আটক করা ওই পিকআপভ্যানের নম্বর খতিয়ে দেখে জানতে পারে যে, পিকআপভ্যানটির মালিক ওই এলাকার কুমাড্ডার সুকুর মীরের। রেল পুলিশ তাকে পাকড়াও করার আগেই সে বেপাত্তা হয়ে যায়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। আজও তার হদিশ পাওয়া যায়নি। গত ২১ ডিসেম্বর রেল পুলিশ এই ডিজেল তেল চুরি-চক্রের সাথে যুক্ত কুমাড্ডা ও শ্রীকৃষ্ণপুর-বড়পাকুড়িয়ার কয়েকজনের নাম জানতে পারে। রেল পুলিশ জানতে পারে যে, রেলের ডিজেল তেল চুরি-চক্রের পাণ্ডারা সাঁইথিয়ার ভাসা সেতুর কাছে একত্রিত হয়েছে বড় কোনও চুরির অভিযানে যাওয়ার জন্য। আর এই দলের নেতৃত্বে রয়েছে রবিউল ওরফে খোকা নামে এক দাগী দুষ্কৃতি। তারপরই রেল পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে অতর্কিতে অভিযান চালিয়ে শেখ জাহির, শেখ রাজু ও অসির রহমানকে গ্রেফতার করে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রেল পুলিশ জানতে পারে যে, রেলের ওয়াগন থেকে ডিজেল তেল চুরির সাথে রয়েছে রামপুরহাট বাসস্ট্যাণ্ড পাড়ার শেখ নাজেম। আর এই চক্রের মূল মাথা সেখানকার জোগারহাট পাড়ার ডিস্কো। এই ডিস্কো-ই রেলের ওয়াগন থেকে ডিজেল তেল চুরির গোটা চক্রটি চালায়। চুরির তেল ভর্তি করা জার, পাইপ, পিকআপভ্যান-সবই সে যোগান দেয়। ডিজেল তেল চুরির পরে সবই তার কাছে জমা দিতে হয়। সেই-ই তা বিক্রির ব্যবস্থা করে। রেল পুলিশ ও রেলের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ডিস্কোর ঠেকে হানা দেওয়ার আগেই সে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে।।