মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের মেডিক্যাল টিম সফলভাবে সম্পন্ন করল ২৪ বছর বয়সী অন্তঃসত্বা মহিলার দুটি অস্ত্রোপচার
– সি সেকশন এবং ব্রেন টিউমার বাদ দেওয়া হল একই অপারেশন থিয়েটারে –
পারিজাত মোল্লা
কলকাতা, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ গত ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ চিকিৎসা জগতে একটি অসাধ্য সাধন হল মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে, যা পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হসপিটাল চেন। একটি অপারেশন থিয়েটারে, বিহারের সমস্তিপুরের ২৪ বছর বয়সী ববিতা দেবীর লোয়ার সেগমেন্ট সিজারিয়ান সেকশন এবং ব্রেন টিউমার সফলভাবে বাদ দেওয়া হয়।
এই জটিল পদ্ধতি সম্পন্ন করেন একটি বিশেষজ্ঞ টিম, যার মধ্যে ছিলেন ডঃ এল এন ত্রিপাঠী, ডিরেক্টর, মেডিকা ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ ( এম আই এন ডি); এছাড়া ছিলেন ডঃ সুনন্দন বসু, সিনিয়র কনসালটেন্ট, নিউরো সার্জেন, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, ডঃ সৌপ্তিক গঙ্গোপাধ্যায়, কনসালটেন্ট, অবস্টেট্রিকস এবং
গাইনিকোলজি মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, অ্যানেস্থেটিস্ট ডঃ অমিয় মিশ্র এবং ডঃ উপাসনা সরকার, ডঃ
নিকোলা জুডিথ ক্লিন এমডি, বিভাগীয় প্রধান, পেডিয়াট্রিকস এবং নিওনেটোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল।
ববিতা দেবী, ২৪ বছর বয়সী মহিলা, যাকে এই বছর আগস্ট মাসে ভর্তি করা হয়েছিল এইমস পাটনাতে। তার একটি শান্ট অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। ডাক্তাররা তাকে রিলিজ করে দেন এবং বলেন যে দরকারে তার ব্রেন টিউমার পরে দেখা হবে। ডঃ সুনন্দন বসু যখন তার শারীরিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন কলকাতা ইএসআই তে তখন দেখা যায় যে তার শারীরিক অবস্থা ইতিবাচক নয়। যেহেতু পাটনায় ইএসআই হসপিটালের মত পরিকাঠামো ছিল না, তাই ডঃ বসু নিজেই এই বিশেষ কেস নেন। যখন ববিতা দেবী মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন, তখন তিনি তৃতীয় সন্তানের ৩২ সপ্তাহ অন্তঃসত্বা ছিলেন। মা এবং সন্তানের সুরক্ষার জন্য ডাক্তাররা স্টেরয়েড দেন, যাতে ভ্রূণ অবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক গ্রোথ হতে থাকে। যে কোন অস্ত্রোপচার করার আগে এটি ভীষণ প্রয়োজনীয়। ২-৩ দিনের মধ্যে আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ব্রেন টিউমার ব্রেন স্টেমের উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করে, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজ করে যেমন হার্ট রেট, নিঃশ্বাস, চেতনা, খাবার গেলা এবং হাত পায়ের মুভমেন্ট। এই অবস্থায়, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসার জন্য। ওরেসট্রিশিয়ান ডঃ সৌপ্তিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে আলোচনার পর ঠিক করা হয় যে লোয়ার সেগমেন্ট সিজারিয়ান সেকশন করা হবে ব্রেন টিউমার অস্ত্রোপচারের আগে।
ডঃ নিকোলা জুডিথ চিন সাথে সাথেই নবজাতকের দায়িত্ব নেন এবং অপারেশন থিয়েটারের বাকি মেডিক্যাল প্রফেসনালরা ব্রেন টিউমার অপারেশনের দিকে নজর দেন। যেহেতু ব্রেন টিউমারটি ব্রেনের পিছনের দিকে ছিল, তাই পুরো অস্ত্রোপচার করতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা এবং ভালো ভাবে এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩
এই সফল অস্ত্রোপচার নিয়ে বলতে গিয়ে ডঃ এল এন ত্রিপাঠী, ডিরেক্টর, মেডিকা ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ (এমআইএনডি) জানান, ‘ বলাই বাহুল্য এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ছিল যেহেতু রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল। দেখে শুনে এগোনো ছাড়া উপায় ছিল না। দুটি অস্ত্রোপচারই করা হয় বিশেষ ভাবে তৈরি নিউরোসার্জারি অপারেশন থিয়েটারে, যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সর্বক্ষণের মনিটরিং এর ব্যবস্থা সহ রয়েছে নিউরো নেভিগেশন, একটি মাইক্রোস্কোপ, কুসা (ক্যাভিট্রন আল্ট্রাসনিক সার্জিক্যাল এস্পিরেটর), যেগুলো এমআইএনডিতে রোগীদের জন্য সহজেই রয়েছে ব্যবহারের জন্য।। আমি খুবই আপ্লুত যে সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে পরিবার আবার একত্রিত হতে পেরেছে এবং সদ্যোজাত মেয়েটির সাথে ভালো সময় কাটাতে পারছে।
ডঃ সুনন্দন বসু, সিনিয়র কনসালটেন্ট নিউরো সার্জেন, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, জানান, “ইএসআই তে
প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষণের পর আপনার পরিস্থিতির গভীরতা সম্পর্কে অবহিত হই এবং সঙ্গে সঙ্গে এই কেসটি
নিয়ে নিই। আমাদের সব সময়েই লক্ষ্য রোগীর প্রাণ বাঁচানো। আমার খুব সৌভাগ্য যে মেডিকাতে এত ভালো টিম পেয়েছি,
যারা একসাথে এসে এই অসাধ্য সাধনে সাহায্য করেছেন। যেহেতু রোগী ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তাই আমরা
স্টেরয়েড দিই যাতে বাচ্চার গ্রোথ স্বাভাবিক হয়, এবং আমরা ইতিবাচক ফলাফল পাই। ব্রেনের পিছনের দিকে টিউমারহওয়ার কারণে পুরো পদ্ধতি যথেষ্ট জটিল ছিল। যাই হোক, পুরো টিমের দায়বদ্ধতার কারণে টিউমার সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মা এবং তার সন্তান, উভয়কেই অস্ত্রোপচারের সাত দিন পর হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়েছে।
ডঃ সৌপ্তিক গঙ্গোপাধ্যায়, কনসালটেন্ট, অবস্টেট্রিকস এবং গাইনিকোলজি মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, বলেন, যেহেতু রোগী ৩২ সপ্তাহের সন্তানসম্ভবা ছিলেন, তাই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ছিল। তবে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি এবং মা এবং ভ্রূণের ভালোর দিকটা মাথায় রেখে, অস্ত্রোপচার ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। এটা দেখে খুব ভালো লাগছে যে আমরা টিউমার অপারেশন করতে পেরেছি এবং বর্তমানে মা এবং তার সন্তান দুজনেই ভালো রয়েছে।” আর উদয়ন লাহিড়ী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, জানান, ‘ আমি শুভেচ্ছা জানাই মা এবং তার
সন্তানকে এবং তাদের সুস্থতা কামনা করি। মেডিকাতে আমরা লক্ষ্য থাকে কিভাবে রোগীদের সেরা পরিষেবা দিতে পারব
এবং নতুন উদ্ভাবন তুলে ধরতে পারব পরিষেবায়। আমি ডাক্তারদের টিমকে শুভেচ্ছা জানাই যাদের প্রয়াসে অসাধ্য সাধন:
হয়েছে এবং মা এবং শিশু দুজনেই বহাল তবিয়তে রয়েছে।”
অয়নাভ দেবগুপ্ত, জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, বলেন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিষেবা প্রদানের
ক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হল জীবন বাঁচানো। এইক্ষেত্রে, বিষয়টি ছিল দুজনের প্রাণ বাঁচানো। আমি হসপিটালের
সাফলো খুবই গর্বিত। এখানে দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে একই অপারেশন থিয়েটারে। দিনের শেষে মা এবং সন্তানকে
উভয়কেই বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্য আবারও দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের মেডিক্যাল পেশাদারদের কাজের প্রতি
দায়বদ্ধতা। এরকম দায়বদ্ধতা থাকলে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে। যারা যারা এই অস্ত্রোপচারের সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের
সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। এছাড়া আমি ববিতা দেবী এবং তার পরিবারকে শুভেচ্ছা জানাই। তাদের আগামী
দিন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক।”
ববিতা দেবী, যার ইতিমধ্যেই উন্নতি হয়েছে, নিজের কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ” আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই মেডিকার সমস্ত ডাক্তারকে, যারা আমাদের জীবন বাঁচিয়ে ছেন। চিকিৎসার শুরু থেকেই তারা আমাদের আশার আলো দেখিয়েছেন। আমি খুব খুশি যে নতুন করে জীবন শুরু করতে পেরেছি আর আমার বাচ্চা মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।” নতুন দম্পতি, তাদের দুই বাচ্চা ও সদ্যোজাত মেয়ের সাথে সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন। বলাই বাহুল্য, মায়ের জীবনে খুশির হাওয়া বইছে এই সুসংবাদে।
মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল সম্পর্কে মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা হসপিটাল চেন, পূর্বাঞ্চলে শেষ কয়েক বছরে একাধিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র চালু করেছে। বর্তমানে মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটালের উপস্থিতি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, বিহার এবং আসামে।