তপন দত্ত খুনের মামলায় নুতন এফআইআর সিবিআইয়ের?
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
এগারো বছর পুরাতন খুনের মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কি নুতন করে এফআইআর রুজু করতে চলেছে? এইরকম প্রস্তুতি চলছে সিবিআইয়ের অন্দরে।লিগ্যাল সেলের দিল্লি ও কলকাতা শাখার পরামর্শ নিচ্ছে তারা।হাওড়ার বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের মামলায় গত বৃহস্পতিবারই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার এই মামলার বিষয়ে দিল্লি ও কলকাতার লিগ্যাল সেলের পরামর্শ চাইলো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। মামলাটি এগারো বছরের পুরাতন । গত ২০১১ সালের ৬ মে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পরিবেশ প্রেমী তপন দত্তের।প্রথম দিকে এই মামলার তদন্ত করছিল রাজ্য তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তারা জানিয়েছিল, -‘ জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্যেই খুন হতে হয়েছে তপন দত্তকে। এইঘটনায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা কর্মীর নাম জড়ালেও, পরে অনেকেই মুক্তি পেয়েছিলেন। এই অবস্থায় নতুন করে তদন্ত শুরুর আগে আইনি পরামর্শ চাইছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ।গত ১১ বছর ধরে নিম্ন আদালত, কলকাতা হাইকোর্ট এমনকি, সুপ্রিম কোর্টেও এই খুনের ঘটনার মামলার বিচার চলেছে। সিআইডির পক্ষ থেকে চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। তবে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে চার্জশিটে নাম থাকা সকলেই বেকসুর খালাস পায় এই পরিস্থিতিতে কোন পথে তদন্ত করা উচিত? তা জানতে লিগ্যাল সেলের পরামর্শ চেয়েছে সিবিআই। এই মামলার ক্ষেত্রে তারা নতুন করে এফআইআর দায়ের করে মামলা শুরু করতে চাইছে। তবে বিচারাধীন কোনও মামলার ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব কিনা? সেই বিষয়ে আইনি পরামর্শ চেয়েছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে প্রকাশ , লিগাল সেলের সুপারিশ মতোই তদন্ত শুরু করা হবে। পাশাপাশি সিআইডি-র কাছ থেকে তদন্ত সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্রও দ্রুত চেয়ে নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ তপন দত্ত হত্যা মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় । শুধু তাই নয়, এখন থেকে এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সব দায়িত্বও সিবিআই পালন করবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি । আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে , -‘ এখন থেকে এই মামলার বিচার চলবে এক বিশেষ সিবিআই আদালতে’। সিআইডি-কে বিচারপতি মান্থার এই মামলার তদন্তের সব নথিপত্র সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে সিবিআই-কে আরও তদন্তের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।তপন দত্ত খুনের হাওড়ার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, কল্যাণ বসু, ষষ্ঠী গায়েন-সহ শাসক দলের একাধিক নেতা ও বিধায়কের নাম জড়িয়েছিল। তপন দত্তের স্ত্রীর অভিযোগ -‘ প্রাথমিক চার্জশিটে অরূপ দত্তের নামও ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে সিআইডির পক্ষ থেকে যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল, তাতে কোনও কারণ না দেখিয়েই ৯ জনের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সিআইডির বিরুদ্ধে। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন তৃণমূল নেতা’। ২০১৪ সালে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে চার্জশিটে নাম থাকা বাকিরাও বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের এই রায় খারিজ করে দিয়েছিল। অভিযুক্তরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখে। কলকাতা হাইকোর্টকে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে হাওড়ার নিহত পরিবেশপ্রেমী তপন দত্ত খুনের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়। গত ২০১১ সালে পরিবেশপ্রের্মী তপন দত্ত খুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । তপন দত্ত ছিলেন হাওড়ার বালি এলাকার তৃণমূলের নেতা। এই মামলায় নাম জড়িয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়েরও। প্রথম দিকে এই ঘটনার তদন্ত করছিল রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি।প্রথমে অরূপ রায়ের নাম থাকলেও সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ গিয়েছিল। তাছাড়া হাওড়া আদালত পাঁচ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল।এরপরেই নিহত তপন দত্তর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘ শুনানির পর এদিন কলকাতা হাইকোর্ট তপন দত্ত খুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল। জানা গেছে, বালি জগাছার একটি জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সেসময়কার স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও পরিবেশপ্রেমী তপন দত্ত। গত ২০১১ সালে হাওড়ায় যেদিন ভোট ছিল সেদিন রাতেই মোটর সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল তপন দত্তকে। বিচার না পেয়ে তপন দত্তর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত ২০১৬ বাম-কংগ্রেসের জোটে সামিল হয়েছিলেন। ডোমজুড় বিধানসভায় নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। প্রতিমা দত্তর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান , – ‘সত্যের জয় হবেই। একে আটকানো যাবে না। এবার সিবিআই আসল অপরাধীদের বের করুক, সেটাই চাই।’এরপরই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিল নিহত তপন দত্তের পরিবার। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই মামলায় সিবিআই তদন্ত এর নির্দেশ দেন।বিচারপতি তাঁর আদেশনামায় উল্লেখ করেছেন , -‘ সিআইডি-কে সব নথিপত্র সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে হবে। সিবিআই যদি মনে করে তদন্তের স্বার্থে আরও কিছু প্রয়োজন, তাহলে তদন্ত করতে পারে তারা’। গত ২০১১ সালের ৬ মে খুন হন তপন দত্ত। ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মী-সহ মোট ১৩ জনের নাম উঠে আসে অভিযুক্তের তালিকায়। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে এই মামলা। তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত সুবিচারের আশায় অনেক হাল ছাড়েননি। তাঁর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টপাধ্যায় জানান, -‘তথ্য প্রমাণের অভাবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তরা শাস্তি পায়নি’।এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে সিআইডি প্রাথমিকভাবে তদন্তভার গ্রহণ করেছিল। সিআইডি তদন্তে জানায়, -‘ জলাজমি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন বলেই তপন দত্ত খুন হন’। গত ২০১১ সাল সিআইডি মামলার চার্জশিট পেশ করে। এখন দেখার সিবিআই এই পুরাতন মামলার তদন্ত কোন পথে নিয়ে যায়?