আর্থিক সম্পদ থেকে স্ত্রী কে বঞ্চনা গার্হস্থ হিংসার সমান, জানালো হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে গত সোমবার এক মামলার পরিপেক্ষিতে জানানো হয়েছে – ‘আর্থিক সম্পদ থেকে স্ত্রী কে বঞ্চনা করাটা গার্হস্থ হিংসার সমান’ ।হাইকোর্টের তরফ থেকে জানান হয়েছে,-‘ স্ত্রীকে আর্থিক সম্পদ বা স্ত্রীধন থেকে বঞ্চিত করা গার্হস্থ্য হিংসার মধ্যেই পড়ে’। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ গত সোমবার এই রায় দিয়েছে। আদালত সুত্রে প্রকাশ, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক মহিলা। সেই মামলাতেই এই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ। হাইকোর্টে জানিয়েছে , -‘ স্ত্রীধন অথবা অন্য কোনও অর্থনৈতিক সম্পদ থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করা গার্হস্থ্য হিংসার সমান। যদিও কেবল এই মামলার ক্ষেত্রেই এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জানিয়েছেন, -‘ কোনও আর্থিক বা অর্থনৈতিক সম্পদ থেকে মামলাকারীকে বঞ্চিত করা গার্হস্থ্য হিংসা হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এই ঘটনার ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে তাঁর স্ত্রীধন থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। এর অর্থ, তাঁর স্ত্রীধন অপর পক্ষের হেফাজতে ছিল’। প্রসঙ্গত , স্ত্রীধন হল সেই সামগ্রী যা স্বেচ্ছায় মেয়ের বাড়ির লোকেরা বিয়েতে তাঁকে উপহার হিসাবে দিয়ে থাকে। তবে মামলাকারীর সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল তা স্পষ্ট হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।জানা গিয়েছে, যে মহিলা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁর স্বামী গত ২০১০ সালে প্রয়াত হন। তাঁর অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর দু’দিন পরই তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়। এমনকি বার করে দেওয়ার সময় কোনও রকম আর্থিক সাহায্য তাঁকে দেওয়া হয়নি। এই প্রেক্ষিতে তিনি প্রথমে মামলা করেন নিম্ন আদালতে যা পরে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। স্ত্রীকে স্ত্রীধন অথবা অন্য কোনও অর্থনৈতিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত করাকে গার্হস্থ্য হিংসা হিসাবেই গ্রাহ্য হবে। এই সংক্রান্ত একটি মামলার প্রেক্ষিতে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত সোমবার হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত এজলাসে জানান , ”কোনও আর্থিক বা অর্থনৈতিক সম্পদ থেকে মামলাকারীকে বঞ্চিত করা গার্হস্থ্য হিংসা হিসাবেই বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে এটা সত্য যে আবেদনকারীকে তাঁর স্ত্রীধন থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। যা অপর পক্ষের হেফাজতে ছিল। এই বাস্তব পরিস্থিতিতে স্ত্রীধন নিজেদের কাছে আটকে রাখাও গার্হস্থ্য হিংসার আওতায় পড়ে।’ সেইসাথে ‘বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত এই মামলায় হাওড়ার এক নিম্ন আদালতের রায়ও খারিজ করে দিয়েছেন। সেই রায়ে হাওড়ার নিম্ন আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, -‘ বিধবাকে শ্বশুর ও শাশুড়ির তরফ থেকে কোনও ধরনের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই’।উল্লেখ্য , হাওড়া আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই কলকাতা হাইকোর্টে আসেন ওই মহিলা। ২০১০-য়ে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর দু’দিন পরই তাঁকে স্বামীর বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়। দেওয়া হয়নি কোনও আর্থিক সহায়তাও। ফিরে পাননি স্ত্রীধনও। এই প্রেক্ষিতে তিনি মামলা করেন আদালতে। নিম্ন আদালত হয়ে সেই মামলা আসে হাইকোর্টে। সেখানে হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিল, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে আর্থিক সহায়তা বা স্ত্রীধন থেকে বঞ্চিত করলে তা গার্হস্থ্য হিংসা হিসাবেই বিবেচিত হবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে।