TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘ভোটযুদ্ধ- দেশের লড়াই, প্রব -৩’ ২৪ মার্চ, রবিবার রাত ১০টায়।
কলকাতা, ২১শে মার্চ : ১৯৭৫-এর ২৫ জুন। সেদিন মধ্যরাতে দেশবাসীর মাথায় নেমে এসেছিল জরুরি অবস্থার কুঠার। দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষায় সেটা ছিল, ‘দেশে অরাজকতা চলছে– তাই শক ট্রিটমেন্ট চাই।’ তাই গণতন্ত্র সাময়িক ভাবে চলে গেল ঠান্ডাঘরে। বিরোধীদের গণহারে জেলবন্দি, পুলিশি সন্ত্রাস, খুন-জখম, সংবাদমাধ্যমের টুঁটি চিপে ধরা– বাদ যায়নি কিছুই। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে দিল্লির তুর্কমান গেট থেকে সর্বত্র বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি-দোকান। জন্মনিয়ন্ত্রণের নামে শুরু হয় নসবন্দির অত্যাচার। সাংবাদিক বা সাংস্কৃতিক কর্মীরাও বিনাবিচারে আটক। শেষমেশ পরের লোকসভা নির্বাচন হল ১৯৭৭ সালে। সেই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে গদিহারা ইন্দিরা। কেন্দ্রে গঠিত হল প্রথম অকংগ্রেসি সরকার। বাংলায় বীর বিক্রমে বিধানসভা নির্বাচন জিতে নিখাদ ক্ষমতার স্বাদ পেলেন বামপন্থীরা। নতুন আশার আলো দেখলেন রাজ্যবাসী। রাজ্যে শুরু হল রাজনৌতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে বন্দিমুক্তি আন্দোলন। কিন্তু কেন্দ্রে ১৯৭৭ সালেই বলছি গণহত্যার পরেই নড়ে গেল মোরারজি সরকার। এই ইস্যুতেই শুরু হল আবার ইন্দিরার উত্থান। অভ্যন্তরীণ গোলমালে দিল্লির প্রথম অকংগ্রেসি সরকার বেশিদিন টেকেনি। ইন্দিরার প্রতি বেলাগাম প্রতিহিংসার রাজনীতিরও ফল হয়েছিল বিপরীত। তবে দিল্লির এই পালাবদলে কোনও দলের একচেটিয়া দখলদারিতে সাময়িক বাধা পড়েছিল। বাঁক নিয়েছিল ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিও, সেই বাঁক চওড়া হল পরের দশকের শেষ দিকে।
১৯৮০-র জানুয়ারিতে ফের অকাল নির্বাচনের মুখোমুখি দেশ। শাহি দিল্লির তখতে ফিরে এলেন ইন্দিরা। লোকসভায় ইন্দিরা কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ। কিন্তু সেই বছরেরই জুনে জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক আঘাত নেমে এল ইন্দিরার জীবনে। দিল্লিতেই বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলেন প্রাণাধিক, ছোটছেলে সঞ্জয় গান্ধী।
আরও ভয়ানক ঘটনাবলি অপেক্ষা করে ছিল! আটের দশকের শেষ থেকেই পাঞ্জাবে স্বাধীন খালিস্তানের দাবিতে আগুন জ্বলছিল। ক্রমশ লেলিহান সেই আগুন। ১৯৮৪-র ৫ জুন অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির থেকে উগ্রপন্থীদের বহিষ্কারের উদ্দেশ্যে সেনা পাঠালেন ইন্দিরা। অপারেশন ‘ব্লু স্টার’-এ নিহত খালিস্তানি নেতা সন্ত জার্নাল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালে। ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে দফতরে যাওয়ার সময় দিল্লিতে বাসভবন সংলগ্ন উদ্যানপথে শিখ নিরাপত্তারক্ষী বিয়ন্ত সিংহ ও সতবন্ত সিংহের আতর্কিত গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে প্রাণ হারালেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা। তার পরই দেশের নানা প্রান্তে শুরু হল শিখ-নিধন। সরকারি মতে, এই দাঙ্গায় ৩ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। বেসরকারি সূত্রের দাবি ছিল, মৃতের সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। শুধু দিল্লিতেই প্রাণ হারান ৩ হাজার মানুষ। ফিরে এল সেই প্রশ্ন– ইন্দিরার পরে কে? এমন পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস হাইকমান্ড তড়িঘড়ি রাজনীতিতে আনকোরা ইন্দিরার বড়ছেলে রাজীব গান্ধীকে বসিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে। আবার বাজল লোকসভা নির্বাচনের দামামা। ভারতীয় গণতন্ত্রের উত্থান পতন নিয়েই দেখুন TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘ভোটযুদ্ধ, দেশের লড়াই, পর্ব -৩’, ২৪ মার্চ, রবিবার রাত ১০টায়।