সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের জামিন নিয়ে রায়দান স্থগিত রাখলো ডিভিশন বেঞ্চ
সম্প্রীতি মোল্লা ,
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের মামলার শুনানি শেষ হল । এদিন শুনানি শেষ হলেও রায় ঘোষণা করেনি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ। আজ অর্থাৎ বুধবার কিংবা আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার রায়দান ঘোষণা হতে পারে। তবে অনুব্রত মামলার শুনানিতে দুপক্ষের সওয়াল-জবাব চলে হাইকোর্টে। একদিকে অনুব্রতর হয়ে সওয়াল করলেন দেশের নামজাদা আইনজীবী কপিল সিব্বল। অন্যদিকে গোটা দুর্নীতি কাণ্ডে অনুব্রতর যোগ বোঝাতে একাধিক উদাহরণ দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।অনুব্রতর আইনজীবীর সওয়াল শোনার পরেই সিবিআইয়ের উদ্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, -‘ বিএসএফ অধিকর্তা সতীশ কুমার, এনামুল হক যদি গরুপাচার মামলায় জামিন পেতে পারেন, তাহলে অনুব্রতকে জামিন দিলে সমস্যা কোথায়? অনুব্রত তো কোথাও পালিয়ে যাবেন না। তাহলে জামিন দেওয়ার পর তাঁকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাহলে আপত্তি কি?’ এর প্রতুত্তরে সিবিআই ডিভিশন বেঞ্চ কে জানায়, -‘ অনুব্রত প্রভাবশালী। তাঁকে জামিন দিলে সাক্ষীদের উপর প্রভাব তৈরি হতে পারে’। সিবিআই এদিন জনৈক শ্রীযুক্ত সিনহার নাম উল্লেখ করে বলে, তাঁকেও চাপ দেওয়া হচ্ছে।ডিভিশন বেঞ্চ এদিন সিবিআইয়ের উদ্দেশে প্রশ্ন করে জানায়, -‘ এই মামলায় কতজন সাক্ষী?’ সিবিআই জানায়, -‘৯৫ জন’। ফের সিবিআই কে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, – ‘ কতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে?’ সিবিআই জানায়, -‘ ৩৩ জনের’। আদালত তখন প্রশ্ন করে, -‘ বাকিদের কবে থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হবে? কত সময় লাগবে?’এরপরেই সিবিআই বগটুই মামলা ও শিবঠাকুর মণ্ডলের মামলার কথা টানে। যে শিবঠাকুর মণ্ডলকে খুনের চেষ্টার এক বছর আগের মামলায় সম্প্রতি অনুব্রতকে হেফাজতে নিয়েছিল দুবরাজপুর পুলিশ। সেই পদক্ষেপ নিয়ে আবার ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, -‘গোটা ঘটনায় পুলিশের যে ভূমিকা তাতে অস্বচ্ছতা আছে’। এদিন শুনানি পর্বে সিবিআই বোঝাতে চায়, -‘ কেন্দ্রীয় এজেন্সির মামলায় জেলবন্দি অনুব্রতর জন্য রাজ্য পুলিশ যদি এই কাজ করতে পারে তাহলে তিনি বাইরে গেলে কী করতে পারেন তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে’।এ নিয়ে আবার কপিল সিব্বল অনুব্রতর হয়ে বলেন, -‘এটা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো? একবার ইডি, একবার সিবিআই—টার্গেট করে নিয়ে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে’। এর পাল্টা সিবিআই জানায়, -‘ বগটুই কান্ডে মূল অভিযুক্ত লালন সেখের মৃত্যু নিয়ে যেভাবে সিবিআই অফিসারদের নামে এফআইআর দায়ের করেছে রাজ্য পুলিশ তাতে বোঝা যাচ্ছে মনোভাব কী?’এদিন সিবিআই আরও দাবি করে, -‘ জেলে বসে অনুব্রত আইফোনের ফেসটাইমে ব্যবহার করে কথা বলেন’। তখন আদালত জানতে চায়, -‘ তার লোকেশন নির্দিষ্ট করা গেছে? কার সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত তা কি জানা গিয়েছে?’ এর জবাবে সিবিআই জানায়, -‘সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া চলছে’। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ রয়েছে সেব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই মতো আদালতে এদিন রাজ্যের তরফে জানানো হয় দুবরাজপুরের মামলা ছাড়া অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা নেই। এই দুবরাজপুরের মামলা নিয়েই এদিন আদালত সমালোচনা করেছে রাজ্যের। এদিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, – ‘বিকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে মামলা রুজু করা হয়েছে। এটা স্পষ্ট।’এদিন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে অনুব্রত মণ্ডলের জামিন মামলার শুনানি চলে। অনুব্রত মণ্ডলকে দুবরাজপুরের মামলায় অতি সক্রিয় হয়েই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করে আদালত। রাজ্য তার পরিকাঠামোর ব্যবহারেই অন্য একটি এজেন্সির মামলা নষ্টের চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন বিচারপতিরা। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে অনুব্রত মণ্ডলের জামিন মামলার শুনানি চলে । সেই শুনানি শেষ হলেও রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ।আজ (বুধবার) অথবা আগামীকাল ( বৃহস্পতিবার) এই মামলার রায় ঘোষণা করতে পারে ডিভিশন বেঞ্চ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।