গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় ইডি কে ‘যুক্ত’ করার নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
গত এক থেকে দুই বছরে এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি হয়েছে। সিবিআইয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েক টি মামলায় তদন্তভার পেয়েছে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি।তাতে বুধবার নবতম সংযোজন হলো গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলাটি।সাদা ওএমআর শিটে জালিয়াতি ঘটিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। গ্রুপ ডি নিয়োগে দুর্নীতির একটি মামলায় ইডিকে যুক্ত করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির সন্দেহ, -‘ সাদা ওএমআর শিটে জালিয়াতি ঘটিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়ে থাকতে পারে’।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এমন নির্দেশ দিয়েছেন লক্ষী টুঙ্গার করা নিয়োগ দুর্নীতির মামলায়। এদিন এজলাসে বিচারপতি জানান , -‘ তিনি বিশ্বাস করেন না যে অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়নি। প্রচুর পরিমাণে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে বা কারচুপি করা হয়েছে’। দাখিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করা হয়েছে, -‘ একজন পরীক্ষার্থী কিছু না লিখে, সাদা খাতা জমা দিয়ে ০ (শুন্য) পেয়েছে। অথচ উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি সংস্থা যাকে এসএসসি বরাত দিয়েছিল, তাঁদের হার্ডডিস্কে দেখা যাচ্ছে সে ৪৩ পেয়েছে’। এই ইস্যুতে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের এদিনের নির্দেশ, -‘ ১০০ টি ওএমআর শিট অবিলম্বে এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে নাম এবং নম্বর সহ। আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ করতে হবে এবং তাতে উল্লেখ করতে হবে গাজিয়াবাদ এবং এসএসসি দেওয়া প্রাপ্ত নম্বর কত। কিভাবে তাঁরা ৪৩ পেলেন, জানতে চায় হাইকোর্ট’। এদিন এজলাসে গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ফের ‘পিসি সরকার’ প্রসঙ্গ তুললেন বিচারপতি। তিনি এদিন বলেন, -‘ বাংলা আমার ম্যাজিক দেখার জন্য তৈরি নয়!’ তিনি এও জানিয়েছেন, -‘ লাল, নীল, হলুদ সব রঙের নদী যেন সাগরে মিশেছে। ২৫ ডিসেম্বর তো একটা উপহার দিতে হবে! ‘ আদালত জানিয়েছে, সমস্ত গ্রুপ ডি’র প্যানেলভুক্ত এবং ওএমআর শিটের পরীক্ষা করে পার্থক্য দুটির রিপোর্ট দিতে হবে। সিবিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪ হাজার ৪৮৩ জন নিয়োগ পেয়েছে।আগামী বৃহস্পতিবার সিবিআইকে ২ হাজার ৮২৩ টি ওএমআর শিট দিতে হবে এসএসসি’কে। পাশাপাশি বিচারপতি এদিন কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৭ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে । ইডি’র আইনজীবীকে এদিন বিচারপতি বলেন, -‘ যখন সুবিরেশ চেয়ারম্যান ছিলেন তখন ওএমআর শিট বিকৃত হয়েছে। শূন্য থেকে নম্বর বেড়ে হয়েছে ৪৩! একটি গোল্লা না পাকিয়েও প্রার্থীরা ওই নম্বর পেয়েছেন। এটা টাকার বিনিময় ছাড়া হতে পারে না। এটা তাঁর বিশ্বাস। ইডি’কে এই আর্থিক লেনদেনের বিষয় তদন্ত করতে হবে। কেউ যাতে ছাড়া পায় না তা দেখতে হবে’। তাঁর রসিক মন্তব্য, -”দ্রুত তদন্ত শেষ করতে হবে, অনেক ‘কাকাতুয়া’ আছে তাঁরা অনেক কিছুই বকবে”।গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা করেছিলেন লক্ষ্মী টুঙ্গা। সেই দুর্নীতি মামলার তদন্ত করার জন্য ইডি-কে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় ।অভিযোগ রয়েছে, -‘ এই নিয়োগ পরীক্ষায় ওএমআর শিটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।এই কারচুপি হয়েছে হার্ডডিস্কের মাধ্যমে। কারণ নিজস্ব কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে পরীক্ষা দেওয়া এক পরীক্ষার্থী যেখানে কিছু না লিখে সাদা খাতা জমা দিয়ে শূন্য পেয়েছেন। অথচ দেখা গেছে, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি সংস্থার হার্ডডিস্ক থেকে পরীক্ষা দিয়ে সাদা খাতা জমা দিয়েও ৪৩ নম্বর পাওয়া গেছে!’এদিন এই মামলায় অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না, যে অর্থের বিনিময়ে এই সব চাকরি দেওয়া হয়নি। প্রচুর পরিমাণে টাকার বিনিময়েই চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বিচারপতির কথায়,- ‘যখন সুবীরেশ চেয়ারম্যান ছিল, তখনই ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে। শূন্য থেকে নম্বর বেড়ে হয়েছে ৪৩! একটি গোল্লাও না পাকিয়েও প্রার্থীরা ওই নম্বর পেয়েছেন। এটা টাকার বিনিময়ে ছাড়া হতে পারে না, এটা আমার বিশ্বাস। ইডি-কে এই আর্থিক লেনদেনের বিষয় তদন্ত করতে হবে, কেউ যাতে ছাড়া না পায়। আপনাদের এই তদন্তে সুনাম রয়েছে। সিবিআই যেভাবে গাজিয়াবাদ থেকে ওই হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছে, সেটাও যথেষ্ট সাহসী অপারেশন। এবার আপনারা এর পিছনে যে আর্থিক লেনদেন হয়েছে, তা খুঁজে বার করুন।’এখানেই না থেমে বিচারপতি আরও বলেন, ‘দ্রুত তদন্ত শেষ করতে হবে। অনেক কাকাতুয়া আছে, তারা অনেক কিছুই বকবে।’এদিন এই মামলার শুনানিতে ফের একবার ম্যাজিকের প্রসঙ্গ তোলেন বিচারপতি। আগেই তিনি একটি এসএসসি নিয়োগ মামলায় বলেছিলেন, -‘ ‘কার ম্যাজিকে এসব হল! পিসি সরকার জুনিয়র না সিনিয়র?” এদিন বিচারপতি ফের বলেন,- ‘বাংলা আমার ম্যাজিক দেখার জন্য তৈরি নয়।’এখানেই শেষ নয়। বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘২৫ ডিসেম্বর তো একটা উপহার দিতে হবে!’ এই কথা বলে তিনি নির্দেশ দেন, ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০টি ওএমআর শিট অবিলম্বে এসএসসি-র ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে নাম এবং নম্বর-সহ। তাতে উল্লেখ করতে হবে, সাদা খাতা জমা দিয়েও কীভাবে ৪৩ পেলেন পরীক্ষার্থী।সিবিআই ইতিমধ্যেই আদালতে রিপোর্ট দিয়েছে, -‘ এই গ্রুপ ডি পরীক্ষায় ৪৪৮৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন’। তার মধ্যে ২৮১৩ ওএমআর শিট সিবিআইকে জমা দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসএসসি-কে। এর পরেই বিচারপতি বলেন, ‘আমি ইডি-কে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। তারা বেআইনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।’ আগামী ১৭ই জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – ‘ যেভাবে নিয়োগ মামলায় সিবিআইয়ের পাশাপাশি ইডি কে পক্ষভুক্ত করছে হাইকোর্ট, তাতে বিপদ ক্রমশ বাড়ছে অভিযুক্তদের’।