ছাত্রদের বহিরাগতদের কাছ থেকে দূরে থাকবার পরামর্শ হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে উঠে বিশ্বভারতী সংক্রান্ত মামলা। এদিন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে,আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে হবে ।অর্থনীতি বিভাগের সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান এবং রূপা চক্রবর্তী নামে সংগীত বিভাগের পড়ুয়াকে ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সাসপেনশন বর্ধিত করা হয়। তারা সাসপেন্ড থাকাকালীন তিন পড়ুয়াকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হয় পড়ুয়ারদের একাংশ । অভিযোগ , উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন । এই অভিযোগে উপাচার্যের বাসভবন প্রতীচী ঘেরাও করে বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হন পড়ুয়াদের একাংশ । এর ফলে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিলেন উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী। তবে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে ঘেরাও মুক্ত হন তিনি।এই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্তা এজলাসে বলেন,- ‘বিশ্বভারতীতে ছাত্র আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে কিছু বহিরাগত। ছাত্রদের বুঝতে হবে, এই রাজনীতির কারবারীরা তাদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তাই এসব করার আগে যে কাজের জন্য তারা বিশ্বভারতীতে এসেছে, পঠনপাঠনের উপর তাদের জোর দেওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা যে এরকম একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ক্রমাগত নিচের দিকে টেনে নামানোর চেষ্টা চলছে।’এছাড়াও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন পড়ুয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত খারিজের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপাচার্যের নিরাপত্তাও কমানো হয়েছে। এতদিন তাঁর নিরাপত্তায় ছিলেন অতিরিক্ত ৩ পুলিশকর্মী। তবে সেই নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হল। এর ফলে এখন থেকে উপাচার্যের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন একজন পুলিশকর্মী।আগের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে উঠেছিল বিশ্বভারতীর পঠনপাঠন সংক্রান্ত মামলা।সেখানে বিচারপতি বিশ্বভারতী দ্বারা বহিস্কৃত তিন ছাত্র কে বৃহস্পতিবার থেকেই ক্লাসে পড়াশোনা করবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর উপাচার্য কে লঘু পাপে গুরু দন্ড দেওয়ার বিষয়ে কড়া ভৎসনা করেছিলেন বিচারপতি। গত ২৭ আগস্ট বিশ্বভারতীর তিন পড়ুয়া ফাল্গুনী পান,সোমনাথ সৌ, রুপা চক্রবর্তী কে তিন বছরের জন্য বহিস্কৃত করা হয়। এজন্য গড়ে উঠেছিল উপাচার্য এর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচি। গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে উঠেছিল বিশ্বভারতীর আইনশৃঙ্খলা জনিত মামলা। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিল যাতে, বিশ্বভারতীর স্বাভাবিক ছন্দ ফেরে। কলকাতা হাইকোর্টের তরফে বিশ্বভারতীতে বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্ট একগুচ্ছ নির্দেশ জারি করে থাকে। যার মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে ৩ টের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের উপাচার্যের বাড়ির সামনে সরে যেতে হবে।বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাড়ির সামনে সর্বক্ষণ ৩ জন নিরাপত্তা রক্ষী থাকবে।বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় অফিস খুলে দিতে হবে। বিশ্বভারতীর ৫০ মিটারের মধ্যে কোন বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবেনা। পাশাপাশি কোন মাইকের ব্যবহার চলবেনা বিক্ষোভকারীদের।ওইদিন মামলার শুনানির আগেই বিচারপতি বিক্ষোভকারীদের আইনজীবী কে জানিয়েদেন যে, আগে বিক্ষোভ সরাতে হবে।তারপর তিনি এই মামলার শুনানি চালাবেন। গত মাস থেকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তুঙ্গে ছিল।ছাত্র আন্দোলন চলছিল। শুধু দিনের বেলায় নয়, রাতের দিকেও উপাচার্যের সরকারি বাসভবনে চলছিল এই অবস্থান বিক্ষোভ। গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় বিশ্বভারতী। ৩৮ পাতার রিট পিটিশনে বিশ্বভারতীর অচলাবস্থা কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর দাবিতে রিট পিটিশন টি দাখিল করা হয়েছে । কলকাতা হাইকোর্ট আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেয়।দাখিল রিট পিটিশনে উল্লেখ রয়েছে যে, বিশ্বভারতীর বাড়ি ঘেরাও করে যে আন্দোলন চলছে, তা রাজনৈতিক মদতপুস্ট।দিনের পাশাপাশি রাতের দিকেও চলছে এই অবস্থান বিক্ষোভ। অভিযোগ, উপাচার্যের সরকারি বাসভবনে খাবারের পাশাপাশি জল পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা।সবকিছু জানিয়েও স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন নিস্ক্রিয়। তাই এই রিট পিটিশনটি।সম্প্রতি ১২ জন অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের কে সাময়িক সাসপেন্ড করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অর্থনীতি ও সঙ্গীত বিভাগের ৩ পড়ুয়া কে ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। পরে তা বাড়িয়ে ৩ বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়। এই সির্দ্ধান্ত এর প্রতিবাদ জানিয়ে চলছিল অবস্থান বিক্ষোভ। এতে কেন্দ্রীয় অফিস বন্ধ সহ ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ফলাফল প্রকাশ বন্ধ ছিল বিশ্বভারতীতে।কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষুব্ধ হয় এই পরিস্থিতির জন্য। দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবার নির্দেশ দেওয়া হয় । ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে তিন পড়ুয়ার বহিস্কৃত করবার নির্দেশিকার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে কড়া ভৎসনা করে থাকে হাইকোর্ট। এরপর আজ বহিরাগতদের কাছ থেকে দূরে থাকবার পরামর্শ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।