সৈনিকের ঘরণী
সঙ্গীতা কর
অপেক্ষা, অপেক্ষা আর দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা
কতগুলো বসন্ত কেটে গেছে তবুও পাইনি তোমার দেখা,
বহু গরবে গরবিনী আমি, এক সৎ সৈনিক ঘরণী
রংয়ের ডালি সাজিয়ে একাকী জাগি বিনিদ্র যামিনী।
জানো নীলাদ্রি, তুমি যে দুর্বার মহাবীর পরাক্রান্ত
অকুতোভয় সেনা নেতা হয়ে করো প্রতিপক্ষকে আক্রান্ত,
খবরের শিরোনামে তোমার ছবি দেখে বারবার
সোহাগে, আদরের পেলব স্পর্শে ওষ্ঠ করেছি ছারখার!
বিরহের আগুন প্রশমিত হয় সংবাদপত্রের পাতায়
আরক্ত নয়ন তবু খুঁজে ফেরে তোমায় শূন্য শয্যায়।
শূন্য ঘরে খোকাও জানো, কতবার তার বাবাকে খুঁজেছে
অবশেষে ক্লান্ত মনে সেও তোমার বীরত্বটুকুই বুঝেছে।
সবার মতো খোকারও আমার ভীষণ ইচ্ছে ছিল মনে
সপ্তাহ শেষে বাবার হাতটি ধরে যাবে অনেক স্থানে,
আর ওই যে তোমার বৃদ্ধা মা, যখন তখন চক্ষু মেলে
এদিক ওদিক খুঁজে ফেরে আসবে কখন তার ছেলে!
বাবা তো তোমার অনেক আগেই অচিন দেশে দিয়েছে পাড়ি
সেদিনও তো আসোনি তুমি, কর্তব্য নাকি ভীষণ ভারী।
শোনো, এখন আমি দশভূজা, দশ দিক একাই সামলাই
দিনের শেষে অপেক্ষায় থাকি যদি তোমার দেখা পাই।
সবাই তোমায় ধন্য বলে, ছড়ায় তোমার কত গুনগান
একবারও কেউ বলে না, আছে এতে পরিবারের অবদান।
যে যাই ভাবুক লোকের কথায় কান দিই না একটুও আর
আজকে তুমি ফিরবে বাড়ি, এটাই হলো মস্ত উপহার।
কিনেছি অনেক রঙিন আবীর, আরো কিছু ভালো রং
তুমি যেন ভেবোনা,এই বয়সে এসব আবার কেমন ঢং?
হঠাৎ শুনি ক্রিং ক্রিং ক্রিং ঘরের মাঝে ফোনটি উঠল বেজে
অপর প্রান্ত বলছে ‘ম্যাডাম একটা কিন্তু খারাপ খবর আছে,
ছুটি হওয়ার একটু আগেই শত্রু পক্ষের আক্রমণে
বীর সৈনিক নিহত হয়েছে, দুঃখ চাপুন নিজের মনে’।
হাতের থেকে মোর রংয়ের থালা পড়লো ছড়িয়ে ঘর ময়
খবরে তখন বলছে ‘দেশ হারালো সৈনিক এক অকুতোভয়’।
আমার যে আজ সব হারালো, কেউ রাখেনি তার হদিশ
দেশবাসী তোমার করছে পূজা, আর কাঁদছি আমি অহর্নিশ।