শতাব্দী প্রাচীন মঙ্গলকোটের লক্ষীপুরে মা মঙ্গলচন্ডী পুজো
সেখ রাজু,
অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সম্প্রীতির মেলবন্ধনে বিংশ শতাব্দী থেকে মঙ্গলকোটের লক্ষীপুরে মা মঙ্গলচন্ডী পুজো হয়ে আসছে । প্রতিবছর চৈত্র মাসের অমাবস্যার পরের মঙ্গলবার এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় । মঙ্গলকোটের পুরাতনহাটেতে মা মঙ্গলচন্ডী যেমন অশ্বস্থ্য গাছে পূজিত হন ঠিক তেমনই এখানে মা মঙ্গলচন্ডী অশ্বস্থ্য গাছে পূজিত হন । প্রায় 35 থেকে 40 টি গ্রামের পুণ্যার্থীরা কাটোয়ায় মা গঙ্গার বক্ষ থেকে জল তুলে নিয়ে এসে দেবী মা মঙ্গলচন্ডীকে অর্পণ করেন ।
কথিত আছে বিংশ শতাব্দীর পূর্বে হাম, বসন্ত, কলেরা মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল । এতে প্রতিনিয়ত গ্রামের মানুষের মৃত্যুতে সম্পূর্ণ গাঁ উজাড় হয়ে যাচ্ছিল । সেই সময় এখানকার বাসিন্দা সারদা সর্দারকে দেবী মা মঙ্গলচন্ডী স্বপ্নাদেশ দেন এখানে দেবী মাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য । তারপরেই সারদা সর্দার সহ পরিবারের সকলেই দেবী মা মঙ্গলচন্ডীকে প্রতিষ্ঠা করেন । তখন থেকে মা অশ্বস্থ্য গাছে পূজিত হয়ে আসছেন । পরবর্তী সময়ে পারিবারিক পুজো আজ গ্রাম্য পুজোতে রূপ নিয়েছে । পুজোর দিন লক্ষীপুর, শ্যামবাজার, সাঁড়ি, ধান্যলক্ষ্মী, দূর্মুট, বুইচি, তেওরা, বাকলসা, খেঁয়, বান্দ্রা, পান্ডু গ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রামের পুণ্যার্থীরা কাটোয়া ঘাটে জল আনতে যান মাকে অর্পণ করার জন্য, তাদের মধ্যে অনেকে দেবী মায়ের ভরে আক্রান্ত হয় । মা মঙ্গলচন্ডীকে গঙ্গা জল অর্পণ করার পরেই পুণ্যার্থী শান্ত হয় । গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন । পুজো ঘিরে মেলা সহ চার পাঁচ দিন ব্যাপী বাউল গান, লোকসংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি আয়োজন করা হয় । পুজোতে আগত পুণ্যার্থীদের কোনরূপ যাতে সমস্যা না হয় সর্বত্র তাদের পাশে থাকে পুজো কমিটি এবং কয়েক হাজার পুণ্যার্থীদের জন্য অন্নকূটের ব্যবস্থা করা হয় । পুজো কমিটির সদস্যরা সকলের মধ্যে অন্নভোগ পরিবেশন করেন । এলাকায় যাতে কোনরূপ অশান্তি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের করা নজরদারি ছিল ।
সমাজসেবী প্রদীপ চট্টরাজ বলেন, জন্মের পর থেকেই আমরা এই পুজো দেখে আসছি । আগে এই পুজো ঘিরে যেরূপ আড়ম্বরতা লক্ষ্য করা যেত, সময়ের পরিবর্তনে তা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে । তবুও সাধারন গ্রাম্য মানুষ নিষ্ঠার সঙ্গে দেবী মায়ের পুজো দিতে আসেন । বিংশ শতাব্দী প্রাচীন মা মঙ্গলচন্ডী পুজো মঙ্গলকোটের ঐতিহ্য । এখানে যেসব পুণ্যার্থীরা তাদের মনস্কামনা নিয়ে আসেন দেবী মা সেই চাহিদা পূরণ করেন ।