Spread the love

মহকুমা আদালত কে আগাম জামিন শুনবার ‘অধিকার’ দিল হাইকোর্ট 

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,


গত ১৮ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (জুডিশিয়াল সার্ভিস)  এর পক্ষ থেকে রাজ্যের সমস্ত জেলাজাজ কে বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবগত করা হয়েছে যে,  – ‘ এবার থেকে মহকুমা আদালত গুলিতে আগাম জামিন শুনবার এক্তিয়ার রইলো। ৪৩৮ সিআরপিসি ধারায় যে পিটিশন একমাত্র শুনে থাকেন জেলাজাজ। এবার থেকে তা মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকরা সেই আগাম জামিনের আবেদন শুনবেন। এর পাশাপাশি ৪৩৯ সিআরপিসি ধারায় গ্রেপ্তার হয়ে হেফাজতে থাকা অভিযুক্তদের আবেদনও শোনা হবে মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে। যা নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন ঘটতে চলেছে বলা যায়।আগে পুজোর সময় ভ্যাকেশন জাজ হিসাবে বছরের কয়েকদিন মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকরা এই আইনী ক্ষমতা ভোগ করতেন। এবার সেটা বছরের প্রায় দিনই বহাল করে দিলো হাইকোর্ট। কাটোয়া মহকুমা আদালতে তরুণ ফৌজদারি বিশেষজ্ঞ আইনজীবী অনিন্দ চট্টরাজ জানান – ” ৪৩৮ সিআরপিসি কার্যকর হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের সময়, অর্থ, হয়রানি অনেকটাই বাঁচবে।শুধু তাই নয় মামলার রেকর্ড নিয়ে  দুই থেকে তিন সপ্তাহ যে মহকুমা আদালত থেকে জেলা আদালত পাঠানো পর্ব চলতো।এবার তা হবেনা “। তাছাড়া আগাম জামিনের পিটিশনের দাখিল থেকে শুনানি পর্বে পুলিশি অতি সক্রিয়তা ও নিস্ক্রিয়তার আর কোন সূযোগ রইলোনা  বলে জানান সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল। বিচারপ্রার্থীদের বড় অংশ উচ্চ আদালতের দারস্থ হতে পারেনা অনেকসময়। নিম্ন আদালতই তাদের কাছে এক এবং একমাত্র ভরসা।তবে সেখানেও তারিখের পর তারিখ জটে মামলা দীর্ঘায়িত হয় অনেকসময়।কোন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারক ছুটিতে থাকেন। আবার কখনও বা বিচারক শুন্য এজলাস এইসব ক্ষেত্রে মামলা দীর্ঘায়িত হয় বলে আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ। যার পরিণতিতে জেলে বিচারধীন বন্দিদের বিচার পাওয়া মুস্কিল হয়ে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত ১৫ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল স্বাধীনতা দিবস পালনে এক গুরত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস পালনে প্রথা অনুযায়ী বক্তব্য পেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল জানিয়েছিলেন- ‘ এবার জেলা আদালতে গুরুত্ব পাবে পুরাতন মামলা। বহু বছর ধরে পড়ে রয়েছে মামলা গুলি এবার জেলা আদালত দ্রুত নিস্পত্তির স্বার্থে কাজ করবে।নিদিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে এইসব মামলা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে।’ পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আরও বলেছিলেন – ‘ করোনা আবহে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আমরা আইনের দরজা সবার জন্য খোলা রেখেছি।ভার্চুয়াল শুনানিতে ৪৭ হাজার মামলা দাখিল হয়েছে। যার মধ্যে নিস্পত্তি ঘটেছে ৩৫ হাজার মত।কলকাতা হাইকোর্টে প্রয়োজনীয় তুলনায় বিচারপতি কম থাকা সত্ত্বেও ৪০% বিচারপতি নিয়ে এই বিচারদান চলেছে।নিম্ন আদালত গুলিতেও সাড়ে ৫ লক্ষ মামলা দাখিল হয়েছে। যার মধ্যে নিস্পত্তি ঘটেছে সাড়ে ৩ লক্ষের মত’। স্বাধীনতা দিবস পালনে বক্তব্য পেশে ভার্চুয়াল শুনানির যান্ত্রিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন চলছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।উল্লেখ্য,  ভার্চুয়াল শুনানিতে নেট স্লোর জন্য এক মামলায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তিনি সংশ্লিষ্ট মামলাটি স্থগিত করে দিয়ে ছিলেন। পরে অবশ্য ওই মামলার রায়দানের আগেই প্রধান বিচারপতি অন্য বেঞ্চে স্থানান্তরিত করে দেন।যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের একাংশ আইনজীবী প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বয়কট চালান।এরেই মাঝে সুপ্রিম কোর্টে চলে যায় প্রধান বিচারপতির মামলা হস্তান্তর করার এক্তিয়ার নিয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের দাখিল এক মামলা। যদিও সুপ্রিম কোর্ট এখনো কোন নির্দেশ দেয়নি।তবে স্বাধীনতা দিবস পালনে জেলা আদালত গুলিতে পুরাতন মামলা নিস্পত্তি ঘটাতে যে বার্তা দিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। তাতে নিম্ন আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বড় অংশ খুশি তা বলায় যায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসে প্রধান বিচারপতির বার্তা টি যে কতটা কার্যকরী, তার প্রমাণ মিললো ১৮ ই আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের জুডিশিয়াল সার্ভিসের রেজিস্ট্রার সাহেবের সমস্ত জেলাজাজ কে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে মহকুমা আদালতবগুলিতে এবার থেকে আগাম জামিনের আবেদন শুনবার অধিকার সহ পস্কো,মাদক,বিদ্যুৎ এর গুরত্বপূর্ণ মামলাগুলি নিয়মিত চালানোর আইনী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান -“বিচারপতির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বিচারাধীন মামলা ও বিচারাধীন বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মহাশয় পুরোনো জমে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য যে পদক্ষপ নিয়েছেন – সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এছাড়া মহুকুমাস্তরে অতিরিক্ত জেলা জজদের যেভাবে পস্কো ও অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ ফৌজদারি মামলা নেবার ক্ষমতা দেওয়া হলো তাতেও অনেক সাধারণ ও দরিদ্র বিচার প্রার্থীদের সুবিধা হবে “।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *