বিচার ব্যাবস্থা এখন সমালোচনার যোগ্য করে তুলেছে ।
দুই বিচারপতি বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে একক বিচারপতির বেঞ্চ তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন । এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা কলকাতা
হাইকোর্টের ইতিহাসে প্রথম । একক বিচারপতি বেঞ্চ অভিজিৎ গাঙ্গুলির রায়ে গ্ৰুপ ডি এবং গ্ৰুপ সি র পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি ধরা পড়ে । যে চাকুরী তালিকার প্রথম সে চাকুরী পায় না । যে ফেল করে বা তালিকার শেষে আছে ,সে বহাল তবিয়তে চাকুরী করে । এ কী নৈরাজ্য ! যে প্রথম হয় সে চাকুরী পায় না আর যে ফেল করে সে চাকুরী পায় । স্বাভাবিক বিচার ব্যাবস্থা লঙ্ঘন হয় বলে একক বিচারপতির বেঞ্চ মনে করেন । কিন্তু দুই সদস্যের বেঞ্চ বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং রবীন্দ্রনাথ সামন্ত ওই একক বেঞ্চের আদেশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অন্তবর্তীকালী স্থিতাবস্থা দেন । বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি মনে করেন দুই সদস্যর বেঞ্চে এমন আদেশ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে । আইনের মন্দিরে জনগণ কখনো মুক্তি পায় না । এমন অন্তবর্তীকালীন স্থিতাবস্থা থাকলে মূল মামলা কখনো নিস্পতিও হয় না । এমন অন্তবর্তীকালীন আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টেরও আ্যপিল করা যায় না । বিলম্বিত বিচার মানে অবিচার । বিলম্বিত বিচার কে চায় ?
এভাবে চলতে থাকলে আইন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে । এখন আইন নেই ,আইনের অনুশাসনও নেই ।
স্বাভাবিক বিচার ব্যাবস্থা
লঙ্ঘন হয়েছে জানার জন্যে ল ডিগ্ৰির কি আবশ্যিক ? ব্রিটিশ শাসনে বিচার ব্যাবস্থায় জুরি প্রথা ছিল । তাদের মতামতের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতিগণ আদেশ দিতেন । ওই জুরিরা কিন্তু ল ডিগ্ৰিধারি ছিলেন না । কিন্তু তৎকালীন সময়ে বিচারের গরিমা বোঝাতে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে । ব্যারিষ্টার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও হাইকোর্টের বারের সদস্য হতে পারেন নি অতিরিক্ত মদ খাওয়ার অভিযোগে । অবশেষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সুপারিশে তিনি হাইকোর্ট বারের সদস্য হতে পেরেছিলেন । সত্যি অবাক করে বটে । বর্তমানে কনজিউমারস ফোরামে একজন বিচারকের সঙ্গে অন্য একজন সমাজ কর্মীও থাকেন । তিনিও বিচার করেন ওই বিচারকের সঙ্গে । যদিও তিনি ল পাশ নন । সাধারণ নাগরিকরাও জানে কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় ।
এভাবে বিচার ব্যাবস্থা যদি পদে পদে লঙ্ঘিত হয় , বিচার ব্যাবস্থার দৈন্য দশা প্রকট হয় । বিচারপতিরা কেন জুডিসিয়াস মাইণ্ড হতে পারছেন না, ট্রেনে ,বাসে ,চায়ের দোকানে জনসাধারনণের কাছে এখন মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠেছে । বিচার ব্যাবস্থায় এখন রাজনীতির রঙ লেগেছে । তাই বিচার ব্যাবস্থা এখন সমালোচনার যোগ্য করে তুলেছে , আইনবিশারদরা মনে করেন । জনসাধারণ বিচার পাবার হকদার কিন্তু তারা সেটা পাচ্ছে কই ?
বিধান সভায় বিধায়কদের হাতাহাতি ,ফাটাফাটি ,রক্তপাতে যবনিকা । বিধান সভা থেকে এখন হাইকোর্টৈ । হাইকোর্টের বিচারপতিদেরও কোন্দল ! অবশেষে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির মুখ খোলেন । তিনি মুখ খোলেন জনগণের স্বার্থে ,বিচারের জন্যে ,দুর্নীতির বিরুদ্ধে । তার আরো অভিযোগ বিচার ব্যাবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোও চেষ্টা চলছে । বিচার ব্যাবস্থা সংশোধনের জন্যে সমালোচনার দরকার আছে বলে, জনসাধারণও মনে করে । এটা অনেকের স্মরণে আছে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সি এস কারনান একসময় সুপ্রিমকোর্টের কিছু বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন । এই দুরাবস্থার অবসান হাওয়া দরকার ,অন্যথায় জনগণের কোথাও মুক্তি নেই ।
সুবল সরদার
মগরাহাট
দক্ষিণ ২৪ পরগনা