বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের ২৩তম বার্ষিকী আজ
কাজী নূর || “সব অর্জনে আনন্দ আছে। দু’হাজার সালকে স্পর্শ করতে পারা আমার কাছে অর্জন। মৃত্যু যেখানে বার বার দরজায় উঁকি দিচ্ছে, সন্ত্রাসীদের উদ্যত সঙ্গীন যেখানে তাক করা, সেখানে বিংশ শতাব্দীকে অতিক্রম করা কি আমার জন্য পরম পাওয়া ?… এ প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। কিন্তু আমার অনুভূতিতে কি শতাব্দীকে আলিঙ্গন করা, নতুন সূর্যোদয়কে প্রত্যক্ষ করা- এ সবই যেন নিত্যাদিনের ঘটনা। মহাকালের কাছে আমার অস্তিত্ব ধুলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র। যতক্ষন বেঁচে আছি, ততক্ষণই আমার অস্তিত্ব। হয়তো এই স্বার্থকতা আর স্বপ্ন মিলে মিশেই আগামী কালের জন্য অপেক্ষা। ….নিহত হবার আগে অর্থাৎ ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ডায়েরির পাতায় ঠিক এই কথাগুলোই লিখে রেখে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, যশোরের কৃতি সন্তান শামছুর রহমান কেবল। শামছুর রহমান কেবল ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডাক নাম ‘কেবল’ নামে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।
অকুতোভয় সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের ২৩তম হত্যাবার্ষিকী আজ। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাত ৮ টা ১৫ মিনিটে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র সদর হাসপাতাল মোড়স্থ নিজ কর্মস্থল ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার যশোর অফিসে রিপোর্ট লেখার মুহুর্তে কতিপয় দুর্বৃত্তের ছোঁড়া বুলেটের আঘাতে খুন হন শামছুর রহমান কেবল। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাংবাদিকতা জগতের ‘চলমান কম্পিউটার’ নামে খ্যাত ছিলেন তিনি। ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান, হন্ডি, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকা কলমযোদ্ধা শামছুর রহমান কেবল তার অসম্ভব ক্ষুরধার লেখনীর কারনেই খুন হন- এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এসব সমাজবিরোধীদের সাথে আপোষ- রফা না করে সততা এবং নিষ্ঠার চরম খেসারত হিসেবে শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ হারাতে হয় অমিত সম্ভাবনাময় সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলকে।
রাজধানী ঢাকার বাইরে মফস্বলের একটি জেলা শহর যশোরে বসে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন লিখে সাংবাদিকতায় অভাবনীয় সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল। শামছুর রহমান কেবল ১৯৫৭ সালের ৫ মে যশোর জেলার ভারত সীমান্তবর্তী শার্শা থানার শালকোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সোহরাব উদ্দিন এবং মা খাইরুন্নেছা বেগম। শামছুর রহমান কেবল ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন। সরকারী মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৭৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাশ করেন শামছুর রহমান কেবল।
সাংবাদিকতা জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র শামছুর রহমান কেবল ছাত্রাবস্থায় ‘দৈনিক ঠিকানা’ পত্রিকার শার্শা সংবাদদাতা হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি একই দৈনিকের স্টাফ রির্পোটার হিসেবে উন্নীত হন। শামছুর রহমান কেবল ‘দৈনিক ঠিকানা’ ছাড়াও ‘দৈনিক বাংলা’ ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক গণশক্তি’ পত্রিকায় কাজ করেছেন। তার বিভিন্ন উপ- সম্পাদকীয় এবং রাজনীতি বিষয়ক লেখা দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শামছুর রহমান কেবল ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই ‘দৈনিক জনকন্ঠ’ পত্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি (সিনিয়র রিপোর্টার) হন। পরে ১৯৯৯ সালের ১ নভেম্বর একই পত্রিকায় ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ হিসেবে পদোন্নতি পান। ভারতীয় রাজনীতির ওপর অগাধ পাণ্ডিত্যের কারনে ভারতের জাতীয় নির্বাচনের রিপোর্ট কাভার করতে শামছুর রহমান কেবল ছিলেন ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ কর্তৃপক্ষের একমাত্র পছন্দ এবং নির্ভরযোগ্য ঠিকানা।
এদিকে শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রেসক্লাব যশোর, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংগঠনের পক্ষে এ দিন বুকে কালোব্যাজ ধারণ, শোক র্যালী, শহীদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। প্রেসক্লাব যশোর এর উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল এবং যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।