দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মেমারিতে
নিজস্ব সংবাদদাতা, ২৯ ডিসেম্বরঃ দৃষ্টিহীন ছাত্রদের নিয়ে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী ‘সারা ভারত ষষ্ঠ কুরআন পাঠ সম্মেলন। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহরে অবস্থিত প্রখ্যাত ঐতিহাসিক গোলাম আহমাদ মোর্তজা প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বহুমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম ক্যাম্পাসে। অভিনব এই সম্মেলনে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত দৃষ্টিহীনদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাসাতুন নূর এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব মাওলানা হাসান আব্দুল কাদির। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জলগাঁও কলেজের স্বনামধন্য ব্রেইল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মুয্যামিলুর রহমান। মুম্বাইয়ের দ্বীনিয়াত সংস্থার প্রতিনিধি বিশিষ্ট শিক্ষাঅনুরাগী মুহাম্মাদ ফরিদ প্রমুখ। উল্লেখ্য গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, প্রভৃতি রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, কর্মকর্তা, শিক্ষক ও দৃষ্টিহীন ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেন এই সম্মেলনে। অনুষ্ঠান শুরু হয় এক দৃষ্টিহীন ছাত্রের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। উদ্বোধনী ভাষণে মেমারি জামিয়ার অধ্যক্ষ কারী শামসুদ্দীন আহমাদ মেমারি জামিয়ার বহুমুখী কর্মকান্ড ও তার লক্ষ্যের কথা শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তিনি জেনারেল এডুকেশনের সমন্বয়ে গঠিত সময়োপযোগী পাঠ্যক্রম, দৃষ্টিহীন ছাত্রদের পড়াশোনার সুব্যবস্থা, বিভিন্ন জনহিতকর ও জাতীয়তাবাদী কাজের সঙ্গে এখানকার ছাত্রদের সরাসরি অংশগ্রহণ, জামিয়ার কিছু কৃতীছাত্রের গৌরবগাথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, দ্বীনের জন্য কষ্ট সহ্য করাটাও হচ্ছে সুন্নাত। তিনি মহানবী মুহাম্মাদ সাঃ এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত হাসান আব্দুল কাদির তাঁর বক্তব্যে বলেন, “অন্ধরা সমাজের বোঝা নয়, বরং তারা আল্লাহর নিদর্শন। এদের প্রতি ভালোবাসা কোন দয়া বা করুণা নয় বরং ইবাদত। দৃষ্টিহীনরাও উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে দ্বীন ও দুনিয়ার সমস্ত স্তরে সাবলীলভাবে চলতে সক্ষম হবে। তার বহু উদাহরণ পৃথিবীতে বিদ্যমান।” ব্রেইল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুয্যামিলুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ব্রেইল পদ্ধতি দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অবলম্বনে ছাত্রদের সামনে শিক্ষার জোয়ার এসেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। আমাদের শুধুমাত্র দরকার অন্ধ ছাত্রদেরদের মধ্যে জমে থাকা হীনমন্যতা দূর করা ও তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সামনে এগিয়ে দেওয়া।” দু’দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরের বহু দৃষ্টিহীন পড়ুয়া তাদের বিভিন্ন পারদর্শিতা প্রদর্শন করে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত প্রতিনিধিরা তাদের রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষাপদ্ধতি ও কার্যবিবরণী সবিস্তারে তুলে ধরেন। বিশেষভাবে হায়দ্রাবাদ, পুনা, আমেদাবাদ, আওরঙ্গাবাদ, ভেলোর, জলগাঁও প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা দৃষ্টিহীনদের পিছনে তাদের খিদমতের কথা উল্লেখ করেন।মেমারি জামিয়ার প্রাক্তন দৃষ্টিহীন ছাত্র বর্তমানে হুগলী জেলার শ্রীরামপুর গার্লস কলেজের ইংরাজী বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ফজলে আলম ইংরেজিতে তার জীবন সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে উপস্থিত সকল অন্ধ শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন। অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল অন্ধছাত্রদের ২৮ তারিখ বিকালের ক্রিকেট ম্যাচ প্রদর্শনী। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য গত দুই বছর এই সম্মেলন হয়েছিল ভার্চুয়াল। তাই করোনা কালের পর এই সম্মেলনে উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারীর মধ্যে বাড়তি উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। প্রধান অতিথি জনাব হাসান আব্দুল কাদির সাহেবের হৃদয়গ্রাহী দোয়ার মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। উল্লেখ্য দোয়া অনুষ্ঠানের আগে মঞ্চে উপস্থিত হন মেমারি বিধানসভার বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য্য। তিনিও বিধায়ক হিসাবে মেমারি জামিয়া ইসলামিয়ার পাশে আছেন ও প্রয়োজনে তার সহযোগিতা থাকবে বলে জানান।