Spread the love

হাইকোর্টের নির্দেশ কে মান্যতা দিয়েই মুকুল নিয়ে স্পিকার কে  সিদ্ধান্ত নিতে বললো সুপ্রিম কোর্ট 

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু
দুমাস পূর্বে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ পিএসি মামলায় যে নির্দেশ জারি করেছিল।সেই নির্দেশ কার্যত বহাল রাখলো সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম দরবারে আপিল পিটিশন দাখিল করেছিলেন বিধানসভার স্পিকার। সোমবার এই আপিল পিটিশনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট পিএসি মামলায় বিধায়ক  মুকুল রায় কে নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বললো রাজ্যের স্পিকার কে।এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২২ ডিসেম্বর বলে জানা গেছে। সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন  ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল পিএসি চেয়ারম্যান নিয়ে মামলা। ওইদিন কলকাতা হাইকোর্ট ৭ অক্টোবরের মধ্যে বিধানসভার স্পিকার কে সির্দ্ধান্ত নিতে বলেছিল। যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ না ঘটে তাহলে আদালত পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট । রাজ্য বিধানসভায় পিএসি  চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায় মনোনয়ন জমা দিতেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে  থাকে বিজেপি। দাখিল মামলায় অভিযোগে জানানো হয়, -‘কৃষ্ণনগরের দলত্যাগী বিধায়ক মুকুল রায়ের পিএসি-র চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ম মেনে হয়নি। অনৈতিকভাবে, চিরাচরিত প্রথা ভেঙে মুকুলকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। বিধানসভার কার্যবিধির ৩০২ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ রাজ্যে আগে এমন কোন নজির নেই’। এরপরই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়। বিরোধী দলের বিধায়ক অম্বিকার দাবি, পিএসি-র শীর্ষ পদে দলত্যাগী মুকুলের নিয়োগ ‘অবৈধ’। প্রথা অনুযায়ী, ওই পদ বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রাপ্য। বিজেপি কোনও ভাবেই তাঁর নাম পিএসি সদস্যদের তালিকায় রাখেনি, এই তথ্যই আদালতের আবেদনে তুলে ধরেছিলেন বিজেপি বিধায়ক।এরপর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলেছিল। তাতে সবপক্ষের বক্তব্য শোনে কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকী বিধানসভার স্পিকারের হলফনামাও তলব করা হয়। তারপরই ওইদিন আদালত জানিয়ে দেয়, এই সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে রয়েছে বিধানসভার স্পিকারের। তাই আদালত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে এর সঙ্গেই সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কথা উল্লেখ করে  ৭ অক্টোবরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন  দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টে মণিপুর বিধানসভার অধ্যক্ষের ওই মামলায় শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, অভিযোগ জমা পড়ার তিন মাসের মধ্যে বিধানসভার স্পিকারের তা নিষ্পত্তি করতে হবে। আমাদের রাজ্যের এই ক্ষেত্রে ৭ অক্টোবর শেষ হয় সেই সময়সীমা। তাই ওইদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিধানসভার স্পিকারকে বলে জানিয়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ।অপরদিকে , মুকুল রায়ের  বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে এবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গ তিনিও হাইকোর্টে এসে মুকুল রায়ের বিধায়ক  পদ খারিজের দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট চত্বরে শুভেন্দু অধিকারী সংবাদমাধ্যম কে  বলেছিলেন, ‘দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুল রায়ের যে বিষয়টি ছিল, তা নিয়ে আমরা চার মাস অপেক্ষা করেছি। অধ্যক্ষের কাছে চারটে শুনানিতে অংশও নিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আমরা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চাইলাম, যাতে দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুল রায় বিধায়ক পদ বাতিল করা হয়।’গত শুনানিতে  কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন  ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে উঠেছিল পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা।ওইদিন মুকুল রায়ের আইনজীবী আদালত কে জানিয়েছিলেন  – ‘আমার মক্কেল মুকুল রায় শারীরিক ভাবে অসুস্থ, তাই শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হোক।’ তবে মামলাকারী বিজেপির পক্ষে আইনজীবী মামলা পিছিয়ে দেওয়া আবেদনের কড়া বিরোধিতা করে থাকেন।তবে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রেখেছিলেন  ১০ সেপ্টেম্বর ।  তৎকালীন  হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চে পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল।কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় এই জনস্বার্থ মামলাটি দাখিল করেছেন। গত ১১ জুন রাজনৈতিক নেতা মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগদান করে থাকেন।প্রাপ্তি যোগে গত ৯ জুলাই রাজ্য বিধানসভার পিএসি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ হন।আর এই নিয়োগ ঘিরেই চলে আইনী জটিলতা। গত শুনানিতে তৎকালীন  কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছিলেন  – ‘ পিএসি চেয়ারম্যান কি বিরোধী দল থেকেই হয়? ‘ রাজ্য অবশ্য কোন উত্তর দেয়নি। এর আগের শুনানিতে বিধানসভার স্পিকারের পক্ষে রাজ্যের তৎকালীন  এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত কলকাতা হাইকোর্টের কাছে হলফনামা পেশে চেয়েছিলেন দু সপ্তাহের সময়সীমা। তবে কলকাতা হাইকোর্ট এই সময়সীমা কমিয়ে দুদিন সময় বেঁধে দিয়েছিল স্পিকার কে হলফনামা পেশে।এতে রাজ্য চাপে পড়ে যায় বলে মনে করে থাকে ওয়াকিবহাল মহল। হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে রয়েছে রাজ্য বিধানসভার পাবলিক একাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায় কে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা।এই জনস্বার্থ মামলাটি দাখিল করেছেন নদীয়ার কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়। নিয়ম না মেনে পিএসি চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায় কে বসানো হয়েছে বলে দাবি করে এই মামলাটি দাখিল করেছেন এই গেরুয়া বিধায়ক। আগের শুনানি পর্বে বিধানসভার স্পিকারের পক্ষে রাজ্যের তৎকালীন এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানিয়েছেন – ‘ পিএসির চেয়ারম্যান  নিয়োগ নিয়ে আরও কিছু বলার আছে।বিস্তারিত জানাতে দু সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক।’ তবে তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের এই আর্জি খারিজ করে ছিলেন । পাশাপাশি ১২ আগস্টের মধ্যে বিধানসভার স্পিকার কে পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিজেপির পক্ষে আইনজীবী কে এস নরসিংহ জানান – ‘ সাংসদীয় ব্যবস্থায় এই ধরনের ক্ষমতা স্পিকার প্রয়োগ করতে পারে কিনা, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।এটি খুবই গুরত্বপূর্ণ  ‘। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,  সাধারণত বিধানসভায় বিরোধী দলের কেউ পিএসি চেয়ারম্যান পদে আসীন হন।বিধানসভার ফলপ্রকাশের পরে একদা বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় তাঁর পুরাতন দল তৃণমূলে ফিরে আসেন।দলে প্রত্যাবর্তনের পুরস্কার হিসাবে পিএসি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান বলে বিজেপির অভিযোগ। আএই মামলার শুনানিতে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার কে  ৭ অক্টোবরের মধ্যে পিএসসি চেয়ারম্যান নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। যদি কোন সির্দ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে আদালত পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যের স্পিকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি তে আদালত মুকুল রায় কে নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বললো। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২২ ডিসেম্বর। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *