সুবর্ণ জয়ন্তীর পথে গুসকরা ‘ছন্নছাড়া’ ক্লাব
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
সালটা ১৯৭২. সমাজ পরিবর্তনের নেশায় সশস্ত্র বিপ্লবে মেতে উঠেছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার এক দল যুবক। বয়স মেরেকেটে ১৫-১৬ বছর। পথ ঠিক-ভুল যাইহোক না কেন অথবা পরবর্তীকালে ওদের যতই বিপথগামী বলা হোক না কেন তার প্রভাব রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের যুবকদের উপর পড়ে । সংগঠিত হওয়ার পরিবর্তে কিছুটা ছন্নছাড়া হয়েই ওরা থাকত। পূর্ব বর্ধমানের গুসকরাও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
ঠিক তখনই ওদের সংগঠিত করার কাজে এগিয়ে এলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা চম্পক গড়াই। গুসকরায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অকুতোভয় তরতাজা যুবকগুলোকে একত্রিত করলেন। শুধু একত্রিত করলে হবেনা। দরকার বসার জায়গা। কারণ তখন বাংলার যুব সমাজের উপর বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব গভীর। সবার ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে কালীপুজোর প্রাক্কালে গড়ে উঠল ক্লাব। যেহেতু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথ সিংহ, দীপক মুখার্জ্জী, রাজনারায়ণ গড়াই, অক্ষয় মণ্ডল, অশোক দাস, মঙ্গল মুখার্জ্জী, বিকাশ সিনহা, তপন কোঁয়ার প্রমুখ ১৪-১৫ জন তরতাজা 'ছন্নছাড়া' যুবকদের নিয়ে ক্লাব গড়ে উঠেছিল, তাই ক্লাবের নাম হয় 'ছন্নছাড়া' ক্লাব।
ক্লাবের নাম 'ছন্নছাড়া' হলেও ক্লাব গড়ার পর ওদের মনোভাব মোটেই ছন্নছাড়া ছিলনা, ছিল সৃষ্টিশীল । কালীপুজোর সময় প্রতিবেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের আলোর রোশনাই এর সঙ্গে পাল্লা দিলেও এখানেই 'ছন্নছাড়া' ক্লাব থেমে থাকেনি। আর্থিক সমস্যা থাকলেও ক্লাবের সদস্য, শুভানুধ্যায়ী ও শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতায় শুরু থেকেই এক নাগাড়ে করে গেছে সমাজসেবা। রক্তদান শিবির, দুস্থদের বস্ত্র বিতরণ অথবা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে ওঠে। একটা সময় শাসকদলের চাপ উপেক্ষা করেও তারা কর্তব্য পালন করে গেছে।
রজত জয়ন্তী বছরের ক্লাব সম্পাদক অর্ধেন্দু শেখর প্রামাণিক বললেন - যখন অধিকাংশ ক্লাব অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে তখন শত চাপের মুখেও গত পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা আমাদের অস্তিত্ব এবং কর্মধারা বজায় রেখে চলেছি। সত্যিই খুব গর্ব হচ্ছে। আশাকরি পরবর্তী প্রজন্ম ক্লাবের সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখবে এবং আরও বেশি করে সমাজসেবামূলক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ইচ্ছে ছিল সুবর্ণ জয়ন্তীটা জাঁকজকম করে পালন করা হবে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো করোনা অতিমারি। ক্লাবের বর্তমান সম্পাদক কুশল মুখার্জ্জী বললেন- একদিকে করোনা জনিত নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যদিকে আমরা দায়িত্বশীল নাগরিক। সুতরাং যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ রেখেই আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা যে ধরনের অনুষ্ঠান করতাম তার সবটাই আমরা স্হগিত রাখছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে তখন আমরা অনুষ্ঠানের কথা ভাবব।