Spread the love

সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কয়লা পাচার মামলায় শর্তসাপেক্ষে লালা কে  জামিন দিল আদালত 

মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

গত ১৩ মে রাজ্যের চতুর্থ দফার ৮ টি আসনের ভোটপর্ব মিটেছে। এই দফায় ছিল আসানসোল লোকসভার আসনও।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন কয়লা পাচারকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালা। ১০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে শর্তসাপেক্ষে এই জামিন পেলেন লালা। আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জামিনের আবেদন টি মঞ্জুর করেছেন। কয়লা পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত লালা ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।সুপ্রিম কোর্ট  লালা কে রক্ষাকবচও দেয় এবং তদন্তে সাহায্য করার নির্দেশ দেয়। পরে আবার সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালে নির্দেশ দেয় যে, – -‘সিবিআই কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে’। পরে নিম্ন আদালত জানায়, -‘সে হাজিরা দিচ্ছে না’। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার আসানসোল সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পন করেন অনুপ মাজি ওরফে লালা। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শোনার পর শর্ত স্বাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করে আসানসোল সিবিআই আদালত। শর্তগুলি হলো -‘ ১০ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত বন্ড। অনুপ মাজি ওরফে লালা তাঁর থানা অঞ্চলের বাইরে বেরোতে পারবেন না। আদালতে প্রত্যেক তারিখে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে’।আগামী ২১ মে পুনরায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই আদালতের বিচারক।পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল এবং পুরুলিয়ার নিতুরিয়া অঞ্চলে কয়লা পাচারে মাস্টারমাইন্ড খ্যাত  অনুপ মাজি ওরফে লালা। এই কয়লা কাণ্ডে অনুপ মাজির সঙ্গে নাম জড়ায় জয়দেব মণ্ডল, নারায়ণ খরকা, নিরোদ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি নামে কয়লা মাফিয়াদের। এরাও এই কয়লা কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয় এবং পরে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হয়। অন্যদিকে লালার সঙ্গে পরিচয় হয় বিনয় মিশ্রর। বর্তমানে বিনয় দেশ থেকে ফেরার । অন্যদিকে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয় বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশ মিশ্র। পরে সেও জামিনে মুক্তি পায়। অনুপ মাজি ওরফে লালা বেআইনি কয়লা কারবারে বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠে । প্রথম জীবনে অনুপ মাজি ওরফে লালা মাছ বিক্রি করতেন বলে জনশ্রুতি । তারপর ধীরে ধীরে অবৈধ কয়লা কারবার শুরু করে। ধীরে ধীরে কিছু পুলিশের সহযোগিতায় এবং রাজনৈতিক মদতে কয়লা চুরিতে হাত পাকতে শুরু করে লালা। জানা গিয়েছে, বামফ্রন্টের সময় কয়লা মাফিয়া রাজু ঝার হাত ধরে কয়লা কারবারে যুক্ত হয় লাল। পরে দুর্গাপুর অঞ্চলে  এক কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয় লালার। তারপর রাজ্যে পালা বদলের পর কিছু পুলিশের মদতে ও কিছু রাজনৈতিক নেতাদের মদতে অবৈধ কয়লা কারবারে বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠে এই অনুপ মাজি বলে অভিযোগ ।এদিন সিবিআইকে এই  মামলায় সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয় আদালত। তিন বছর ধরে মূল অভিযুক্ত রক্ষাকবচ পেলেও কেনও আবেদন করল না সিবিআই? এদিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জানতে চান আসানসোল বিশেষ আদালতের বিচারক। তবে লালার আত্মসমর্পণের পরই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। উল্লেখ্য,  সিবিআই-এর পাশাপাশি কয়লা পাচার মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডিও। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, -‘ সিবিআই লালাকে গ্রেফতার করতে পারবে না বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারবে না’। তবে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই-এর মামলায় লালাকে রক্ষাকবচ দেওয়া হলেও, ইডির মামলায় তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মঙ্গলবার  লালা আত্মসমর্পণ করায় প্রশ্ন উঠছে যে এবার ইডি তাঁকে গ্রেফতার করবে কি না? এই নিয়ে জল্পনাও তৈরি হয়েছে। সিবিআই বিশেষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে হবে । আগামী ২১ মে মামলার চার্জ গঠন রয়েছে । তার এক সপ্তাহ আগে সিবিআই বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন অনুপ মাঝি।উল্লেখ্য, লালার সঙ্গে যোগ রয়েছে গরু পাচারের মূল অভিযুক্ত  এনামুল হকের যোগাযোগ রয়েছে । অভিযোগ, কয়লা পাচারের ‘সেফ প্যাসেজ’-এর জন্য লালা এনামুল হকের সাহায্য নিতেন। এছাড়াও পুলিস, ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ড, রেল কর্তাদের একাংশেরও লালার সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ।তবে আগামী ২১ মে ফাইনাল চার্জশিট জমা দেওয়ার পর ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানা গেছে।  এদিন কয়লা পাচার মামলার শুনানিতে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক এই মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট উষ্মাপ্রকাশ করেন। তিন বছর ধরে লালা সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ নিয়েছিল। অথচ তারপরও কেন সিবিআই তার বিরোধিতা করে সর্বোচ্চ আদালতে গেল না?‌ এই প্রশ্ন তোলেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। তবে অনুপ মাজিকে আদালত জামিন মঞ্জুরের করলেও নির্দেশ দিয়েছেন এবার থেকে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। নিজের বাড়ি পুরুলিয়ার নিতুরিয়া থানা এলাকা থেকে ৫০ কিলোমিটারের বাইরে বেরতে পারবেন না। তবে সেটা ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এছাড়া বিশেষ সিবিআই আদালতের নির্দেশ, এই মামলার শুনানির দিনগুলিতে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে অনুপ মাজি ওরফে লালাকে। কয়লা পাচার মামলায় দু’টি চার্জশিট পেশ করা হয়েছে আদালতে। তবে এখনও চার্জ গঠন করা হয়নি। এই মামলার আর এক অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র। তাঁকে এখনও ধরতে পারেননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। গত ২০২০ সালে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। মাঝখানে কেটে গেল চার বছর। এখনও তেমন কোন সাফল্য পাইনি সিবিআই। তাই কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সিবিআইকে। কয়লা চুরি এবং পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথমে আয়কর দফতর, পরে সিবিআই কয়লা পাচারের তদন্তে নামে। লালার বাড়ি, অফিসে তল্লাশি করা হয়। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। লালার সঙ্গী বলে পরিচিত গুরুপদ মাজি-সহ চারজন গ্রেফতার হয়েছেন। তিনজন জামিন পেলেও গুরুপদ দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি এখনও। সিবিআইয়ের দাব, লালার সঙ্গে গরুপাচারে অভিযুক্ত এনামুল হকেরও যোগসাজশ রয়েছে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে লালার যোগাযোগ রয়েছে। আগামী ২১ মে এর আগে কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডির পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *