সাংসদ – বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্তে এত দেরি কেন? সিবিআই – ইডি কে সুপ্রিম তোপ
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে সাংসদ বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্তে এত গড়িমসি কেন বিষয়ক জনস্বার্থ মামলা।সেখানে সিবিআই ও ইডি কে সুপ্রিম কোর্ট তোপ দেখে আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে স্টাটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। ১০ বছর ধরে মামলা চলছে এখনো তার চার্জশিট দাখিল করা হয় নি, তা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। ইডি জানায় – ৫১ জন সাংসদ এবং ৭১ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ মামলা চলছে।সিবিআই জানায় – ১২১ জন সাংসদ / বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।ইডি কে ভৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট জানায় – বাজেয়াপ্ত করা ছাড়া আর তো কিছুই দেখা যায় না।চার্জশিট দাখিল না করলে সেই বাজেয়াপ্ত করাটা অর্থহীন। ২০১০ সালের মামলায় কেন চার্জশিট দাখিল হয় নি সেই নিয়েও প্রশ্ন রাখে সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্ত সাংসদ – বিধায়কদের বিরুদ্ধে জমে থাকা মামলাগুলির দ্রুত নিস্পত্তির স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে।চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্নার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই নির্দেশিকা গুলি জারি করা হয়েছে। নেতা মন্ত্রীদের অপরাধে দ্রুত বিচার চায় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারক বদলীতেও নজরদারি। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল – ‘ বিশেষ আদালতের বিচারকদের যখন তখন বদলী করা যাবেনা ‘। রাজ্য সরকারে এই বিশেষ আদালতের বিচারকদের বদলীর ক্ষমতা কার্যত কেড়ে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুমতি ছাড়া এই বিচারক বদলী করা যাবেনা বিশেষ আদালত গুলিতে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নেতা মন্ত্রীদের বিচারের জন্য যে বিশেষ আদালত রয়েছে। তার বিচারক বদলীর আগে অনুমতি নিতে হবে। রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীদের ফৌজদারি অপরাধের জন্য তথ্যপঞ্জি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই ধরনের মামলা বেশিদিন যাতে না চলে, ধামাচাপা না পড়ে যায় সেজন্য দ্রুত বিচার চাইছে সুপ্রিম কোর্ট। দীর্ঘমেয়াদি বিচার চললে তাতে ঘনঘন বিচারক বদলী হয়।এরফলে বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি আসেনা।আমাদের রাজ্যে বারাসাতে রয়েছে এই ধরনের সাংসদ বিধায়কদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার করার আদালত। রাজ্য সরকারের বদলী করার ক্ষমতা খর্ব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নেতা নেত্রীদের বিরুদ্ধে কোন আদালতে কত মামলা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান চাইছে সুপ্রিম কোর্ট। কেননা কোন হিসাব নেই নেতা নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিচারধীন মামলা গুলির।এক বেসরকারি সমীক্ষক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীসভায় ৩৩ জন সদস্যর বিরুদ্ধে চলছে মামলা। যা মোট মন্ত্রিসভার ৪২% মত।এঁদের মধ্যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে গুরতর ধারায় মামলা চলছে।যা ৩১% মতো নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার অনুপাতে। কোচবিহারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এর বিরুদ্ধে রয়েছে ৩০২ এর মত খুনের মামলা।আবার আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার বিরুদ্ধে রয়েছে ৯ টি ফৌজদারি মামলা।সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ – সাংসদ বিধায়কদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা যাবেনা। সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের অনুমতি বাধ্যতামূলক। আবার বিশেষ আদালতের বিচারকদের মামলায় পরবর্তী নির্দেশ না হওয়া অবধি বদলী করা যাবেনা। বিশেষ আদালতের বিচারকরা কাজ করে যাবেন। বদলীর ক্ষেত্রে এই বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুমতি লাগবে। অপরদিকে ভোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেই প্রার্থীর অপরাধের ক্ষতিয়ান থাকলে তা দুদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেই তথ্য জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে অশ্বিনী উপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী জনস্বার্থ মামলা করেন। তিনি প্রশ্ন তুলেন অভিযুক্ত সাংসদ ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলায় সিবিআই ও ইডির তদন্তের গড়িমসি নিয়ে।দশ থেকে পনেরো বছর পার করলেও অনেক মামলায় চার্জশিট দাখিল করছেনা এই দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট এই দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কে আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে স্টাটাস রিপোর্ট জমা দিতে বললো।