Spread the love

সবার মাঝে একমাত্র সন্তানের জন্মদিন পালন করল দুর্গাপুরের ডাক্তার দম্পতি

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

  পিতা উদয়ন চৌধুরী ও মা কবিতা চৌধুরী- এলাকার সুপরিচিত ডাক্তার। এইরকম হাইপ্রোফাইল পরিবারের সন্তানের জন্মদিন মানেই সাজোসাজো রব, উৎসবের মেজাজ। বড় প্যাণ্ডেল, মায়াবী আলোর ঝলকানি, হাল্কা মিউজিক। বাড়িতে রঙিন পোশাকে সজ্জিত আত্মীয় স্বজনের ভিড়, নিজেদের পেশার জগতের মানুষের উপস্থিতি যেখানে স্বাভাবিক ঘটনা সেখানে গত এগারো বছর ধরে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের পরিবেশে নিজেদের একমাত্র সন্তানের জন্মদিন পালন করে চলেছেন দুর্গাপুরের ডাক্তার দম্পতি।

 গত ১০ ই নভেম্বর ছিল একমাত্র কন্যা অনুস্মিতার এগারোতম জন্মদিন। পরিচিত চারদেওয়ালের মধ্যে নয়, তার বাইরে জন্মদিনের অঙ্গ হিসাবে চিরাচরিত কেক কাটা বা মোমবাতি নেভানোর সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দম্পতির সৌজন্যে এলাকাবাসী একটু অন্যরকম পরিবেশের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেল। 

 এদিনই দিনের আলোর মুখ দেখলো ডাক্তার দম্পতির নতুন প্রকল্প 'ছোঁয়া'। উদ্দেশ্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও যেসব গরীব ঘরের শিশুরা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়না তাদের দিকে স্নেহের ছোঁয়া অর্থাৎ স্পর্শ দেওয়া। ঠিক হয় এইরকম অসহায় প্রতিভাবান শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনা, অঙ্কন, নৃত্য, গীত ইত্যাদি শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে বিনা খরচে শিক্ষা সামগ্রী দেওয়া হবে। প্রথম দিনেই এলাকার বাছাই করা পঞ্চাশটি শিশু পায় 'ছোঁয়া'-র স্নেহের স্পর্শ। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্কুলের ব্যাগ ও টিফিন। ডাক্তার দম্পতির আশা আগামী দিনে 'ছোঁয়া' সবার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। 

  শুধু তাই নয় সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। শিবির থেকে মোট ৩৫ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে অর্ধেকের উপর ছিল মহিলা। রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য অন্যান্যদের সঙ্গে ডাক্তার দম্পতিও রক্তদান করেন। ডাক্তার দম্পতিকে রক্তদান করতে দেখে আরও অনেকেই রক্তদান করতে ইচ্ছুক হলেও প্রয়োজনীয় কিটের অভাবে তাদের রক্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

   প্রসঙ্গত চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে অসহায় মানুষের সেবার জন্য ডাক্তার দম্পতি 'উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত' ও 'জাগো নারী' নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা গড়ে তুলেছেন। ধীরে ধীরে গোটা রাজ্য জুড়ে সেবা কাজ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি বহু বিশিষ্ট মানুষের উপস্থিতিতে আসানসোলে সংস্হার শাখার উদ্বোধন হয়। জানা গ্যালো - আগামী দিনে আরও কিছু জায়গায় শাখা খোলার ইচ্ছে তাদের আছে। 

  সকাল থেকে আনন্দ হলেও আর পাঁচটা দিনের মতই সাধারণ পোশাকে সবার মাঝে উপস্থিত ছিল অনুস্মিতা। পোশাক ও নিজের সরল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে বাচ্চা মেয়েটা হয়ে উঠেছিল 'আমি তোমাদেরই লোক'। নিজের হাতেই ঐসব অসহায় শিশুর মুখে তুলে দেয় কেক। ছোট্ট অনুস্মিতার বক্তব্য - ডাক্তার কন্যা বলে নিজেকে যদি আলাদাভাবে প্রেজেণ্ট করতে চাই তাহলে আর যাইহোক সমাজসেবা করা যায়না। আমারও লক্ষ্য ভবিষ্যতে মা-বাবার দেখানো পথে এগিয়ে যাওয়া। তবে সবার আগে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।ছোট্ট মেয়েটার প্রতিটি শব্দ হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

  উদয়ন বাবু বললেন- শুধু আজ নয় দীর্ঘদিন ধরেই এইসব অসহায় শিশুদের মাঝে আমাদের সন্তানের জন্মদিন পালন করে চলেছি এবং সেক্ষেত্রে একটা আলাদা তৃপ্তি পাই। ওদের মুখের হাসি দেখে মনে হয় স্বর্গ থেকে ঈশ্বর যেন আমার সন্তানের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করছেন। পার্থিব উপহার সামগ্রীর চাইতে এটা মহামূল্যবান। একই কথা বললেন কবিতা দেবী। তার বাড়তি সংযোজন - আমার সন্তানও যেন একইভাবে সবার পাশে দাঁড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *