ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে সিবিআইয়ের চতুর্থ চার্জশিট দাখিল
জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জি ,
ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চতুর্থ মামলায় চার্জশিট দাখিল করলো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। বীরভূমের কাঁকরতলার এক খুনের মামলায় ৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ নিয়ে চার্জশিট এটি।৩ জন জেলে বিচারধীন অপর ২ জন জামিনে মুক্ত। এই খুনের মামলায় অভিযুক্ত ৫জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ।উল্লেখ্য গত ১২ জুন বীরভূম জেলার খয়রাশোল ব্লকের কাঁকড়তলা থানার অন্তর্গত নবসন গ্রামে বিজেপির বুথ সহ-সভাপতি মিঠুন বাগদি খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। গত মঙ্গলবার, দুবরাজপুর আদালতে আসার আগে সিবিআইয়ের (CBI) প্রতিনিধিরা নবসন গ্রাম ঘুরে যান। মিঠুন বাগদি খুনের ঘটনায় গত ২৮ অগস্ট প্রথম সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল নবসন গ্রামে গিয়েছিলেন বলে প্রকাশ। স্থানীয় ও মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় নবসন গ্রাম থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থানীয় যুবক রাজু বাগদির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, মৃত রাজু বাগদি তৃণমূলের কর্মী। সেই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যায় বিজেপি বুথের সহ-সভাপতি মিঠুন বাগদির। গ্রেফতার হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মিঠুন গ্রামে এলে তাঁর উপর চড়াও হয় রাজুর পরিবার বলে অভিযোগ। তাঁকে রড, বটি, কাটারি দিয়ে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ।গুরুতর আহত অবস্থায় মিঠুনের দেহ রাস্তা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ নাকড়াকোন্দা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরেই মিঠুনের পরিবার সিবিআই তদন্তের আবেদন করেন। এরপর, কলকাতা হাইকোর্ট ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় খুন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলির তদন্তের ঘটনাগুলি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পর তদন্তে নামেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।মিঠুন বাগদি মৃত্যু-মামলায় আগেও নবসন গ্রামে এসে তদন্ত করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। শুক্রবার, বীরভূম জেলা আদালতে চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, গত শুক্রবারই বিজেপি কর্মী জয়প্রকাশ যাদব খুনের ঘটনায় বারাকপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। তাতে ৫ জনের নাম রয়েছে। সেটি ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার দ্বিতীয় চার্জশিট। বীরভূমের বাসিন্দা মনোজ জয়সওয়ালের মৃত্যু মামলায় প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিবিআই। গত ১৪ মে মনোজকে খুনের অভিযোগ ওঠে।ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় বাড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪টি । নতুন ৩টি মামলার মধ্যে ১টি নদিয়া জেলা ও ২টি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বলে জানা গেছে । নদিয়ার চাপড়ায় খুনের মামলায় এদিকে ধৃত ৪ জনকে রাতভর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছে সিবিআই।গত শনিবারই, নদিয়ার হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে নিহত বিজেপি কর্মী ধর্ম মণ্ডলের মৃত্যু মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয় দুইজন। আটক হওয়া অসীমা ঘোষ ও বিজয় ঘোষকে চাপড়া থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। গত শনিবার আরও ১০টি এফআইআর দায়ের করা হয়। ২৯ অগস্ট আরও সাতটি এফআইআর দায়ের করা হয়। পরে আরও দুদফায় ৪টি ও ৩টি এফআইআর দায়ের করা হয়।শুধু এফআইআর দাখিল করা নয়, পাশাপাশি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত তারপর চার্জশিট দাখিল করছে সিবিআই। এতে শাসক দলের রাতের ঘুম অনেকের চলে গেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।