Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের সবথেকে হেভিওয়েট বিধানসভা আসন কলকাতার ভবানীপুরে উপনির্বাচন রয়েছে। তার ছয়দিন আগেই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুললো কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন বেঞ্চ। এক, রাজ্যের মুখ্যসচিব কেন নির্বাচন কমিশন কে ভোট করানো নিয়ে চিঠি লিখলেন, তাও সাংবিধানিক সংকট কে দোহাই দিয়ে?  দুই, ভবানীপুরে তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টপাধ্যায় জিতেও কেন পদত্যাগ করলেন? তিন, রাজ্যের বাকি উপনির্বাচন আসনগুলির মধ্যে অন্য কোন আসন কেন বাছলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?  এইবিধ নানান প্রশ্নবাণে বিদ্ধ রাজ্য সরকার, নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের ডিভিশন  বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। তবে রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে।পাশাপাশি হাইকোর্টের পক্ষে কেন্দ্রীয়  নির্বাচন কমিশনকে যে হলফনামা দিতে বলা হয়েছিল, তাও এদিন গৃহীত হয়নি আদালতে । ‘সাংবিধানিক সঙ্কট’ তৈরি হতে পারে বলে মুখ্যসচিবের সুপারিশের উল্লেখ  করেছে নির্বাচন কমিশন।  আজ সেই মামলার শুনানিতে একের পর এক প্রশ্ন তুললেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল । আর ছয়দিন । তার আগেই কলকাতা হাইকোর্টের  এই প্রশ্নে রাজ্যের  বাড়ছে আইনী অস্বস্তি।গুরুত্বপূর্ণ এই মামলায় আজ একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।  মুখ্যসচিবের চিঠি দেওয়ার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। উপ নির্বাচনের দিন ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, -‘সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে বলেই দ্রুত উপ-নির্বাচন করা হচ্ছে ভবানীপুরে’। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী এই মর্মেই আবেদন জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এর কাছে। মুখ্যসচিব প্রশাসনিক সর্বোচ্চ  পদে থেকে নির্বাচনের জন্য এইভাবে চিঠি লিখতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিচারপতি।শুধু তাই নয়, কেন শুধু ভবানীপুরের ভোটের জন্যই আবেদন জানানো হল? বাকি কেন্দ্রে নির্বাচন বাকি থাকা সত্ত্বেও কেন সে সব কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন এদিন বিচারপতি।ভবানীপুরে কেন দ্বিতীয়বার নির্বাচন করার প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের  ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল। এই আসন থেকে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পরে এই আসন ছেড়ে দেন তিনি। আর সেই আসন থেকেই লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির প্রশ্ন, ‘কেন আসন ছাড়লেব শোভনদেব?’ তিনি প্রশ্ন করেন নির্বাচন কমিশন এর কাছে – একটি আসনে ভোটের জন্য কত টাকা খরচ হয়? উত্তরে কমিশন জানায়, -‘৩ কোটি’। তা শুনে বিচারপতি বলেন, ‘একটা আসনের জন্য কতবার টাকা খরচ হবে?’ কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আজ বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। একজন ভোটে জিতে জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর তাঁকে আসন ছাড়তে কেন বাধ্য করা হল? এ ভাবে মানুষের টাকা খরচ হচ্ছে। যেখানে উপনির্বাচন বাকি তেমন অন্য কোনও আসন থেকেও লড়তে পারতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ এদিন শুনানিতে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘কেন সাংবিধানিক সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যসচিব? মুখ্যসচিবের ভূমিকা ঠিক কী?’ জবাবে নির্বাচন  কমিশনের তরফে উল্লেখ করা হয়,-‘ রাজ্যপালও এর আগে কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন’। শুনেই বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল প্রশ্ন করেন, ‘এবার কি রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যসচিবের তুলনা করবেন?’ বিচারপতি আরও প্রশ্ন করেন, ‘কেন আপনারা একটাই কেন্দ্রকে বেছে নিলেন? বাকিগুলিতে কি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হত না?সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা একটি উপনির্বাচনে কী ভাবে এল সে প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। আজ সেই হলফনামা জমা দেয় কমিশন। তবে  তাতে অনেকগুলি ভুল আছে বলে জানান মামলাকারীর আইনজীবী।বিচারপতি বলেন, ‘এটা কি একটা হলফনামা? কে এমন হলফনামা তৈরি করেছে? সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের হলফনামা এরকম হয় কি করে ?’ এর জবাবে নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী দীপায়ন চৌধুরী ও আইনজীবী সিদ্ধান্ত কুমার আদালত কে  জানান, -‘ খুব তাড়াহুড়ো করে বানাতে হয়েছে এই হলফনামা।’ আবার হলফনামা তৈরি করে দেওয়ার কথা জানান তাঁরা।  আদালত তা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। বিচারপতি জানান, ‘এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে, তাই আর কিছু দেখা হবে না’।যেভাবে কলকাতা হাইকোর্টে একের পর এক মামলায় রাজ্যের মুখ পুড়েছে, সেখানে ভবানীপুর উপনির্বাচন নিয়ে আদালত কি রায় ঘোষণা করে তার উপর তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।ইতিমধ্যেই লাগাদার বর্ষণে থইথই ভবানীপুর এলাকা।সেখানে কলকাতা হাইকোর্টে আজকের এহেন পর্যবেক্ষণ এবং রাজ্য ও নির্বাচন কমিশন কে তিরস্কার এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগুনে উত্তাপ বাড়িয়েছে বহুগুণ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *