বৃহন্নলাদের পাশে কলকাতার বি-পজিটিভ,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
মহালয়ার দিন পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের সম্বর্ধনা মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে সবার সামনে আকুল কণ্ঠে ওদের আর্তি ঝরে পড়েছিল - আমরাও মানুষ। সমাজ, পরিবার সহ সবার মাঝে আমাদের বাঁচতে দিন। পুজোর আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে দিন। কিন্তু আধুনিক সমাজও সেই সুযোগ ওদের দেয়না। কারণ ওরা বৃহন্নলা। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থেকে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে বহু কষ্টে ওরা জীবন ধারণ করে। করোনা অতিমারি আবহে গত প্রায় উনিশ মাস ধরে ওদের জীবন ধারণের রাস্তাটা আরও পিচ্ছিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের প্রাক্কালে ওদের পাশে এসে দাঁড়ালো কলকাতার গড়িয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা বি-পজিটিভ। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বৃহন্নলাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারা দেশ জুড়ে কাজ করে চলা আর এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা গুঞ্জ।
সংস্হার পক্ষ থেকে গত ৯ ই অক্টোবর উত্তর চব্বিশ পরগণার অশোকনগর, বনগাঁ, ঠাকুরনগর, হাবরা প্রভৃতি জায়গার প্রায় দেড় শতাধিক বৃহন্নলার হাতে তুলে দেওয়া হয় চাল, ডাল, আলু, সরষের তেল, লবণ, সয়াবিন সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী এবং সঙ্গে মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি। পৃথক পৃথক স্হানে গিয়ে সেগুলি সংশ্লিষ্ট এলাকার বৃহন্নলাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুর্দিনে বিশেষ করে পুজোর মুখে খাদ্য সামগ্রী পেয়ে প্রত্যেকে খুব খুশি।
বৃহন্নলাদের পক্ষ থেকে সুমন সাহা বললেন - পুজোর সময় আমাদেরও আনন্দ করতে ইচ্ছে যায়। কিন্তু গত প্রায় দু'বছর ধরে আমাদের আয় কার্যত শূন্য। ফলে নতুন পোশাক পরে আনন্দ করার চিন্তা করা তো দূরের ব্যাপার, কি করে দু'বেলা খাবার জোটাব সেই চিন্তায় যখন অস্হির হয়ে পড়ছি ঠিক তখনই আমাদের পাশে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসে দাঁড়াল বি-পজিটিভ। আজ আমাদের মনে হচ্ছে আমরা একা নই, কেউ কেউ আমাদের পাশে আছে। খুব আনন্দ হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে বৃহন্নলাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যিনি লড়াই করে চলেছেন বি-পজিটিভের কর্ণধার সেই বিপ্লব বড়ুয়া বললেন- আমাদের ইচ্ছে সবার সহযোগিতায় ওরাও সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুক। ওরাও মানুষ। ওদেরও বেঁচে থাকার, আনন্দ করার অধিকার আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওদের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভাল লাগছে। তিনি ওদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছে আবেদন করেন।