Spread the love

খায়রুল আনাম,

আন্দোলনের ধার ও ভার বাড়াতে তৈরী হলো যৌথ মঞ্চ
বিশ্বভারতীর উপাচার্য দিল্লি যেতেই  উঠলো অপসারণের দাবি।
একদিকে যখন বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার অবনমনের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠে আসছে তখন, শিক্ষার মানোন্নয়নের দাবির চেয়েও অধিক মাত্রায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিকে। আর সেইসাথে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের গায়ে যখন  একটি  রাজনৈতিক  দলের আলখাল্লা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন,  উপাচার্যের অপসারণের দাবি জানাতে গিয়ে যে ভাবে  বিশ্বভারতীতে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ  ঘটানো হচ্ছে তাতে বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছেন প্রবীণ আশ্রমিকরা। আর তাই  লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এক সময় বিশ্বভারতীর ছাত্র আন্দোলন  এবং  উপাচার্যের  অপসারণ দাবি করে যাঁরা এই আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের অনেককেই সেই অর্থে  আর  দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বভারতীর তিন পড়ুয়াকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে   প্রথমে কয়েক দফায় ছয় মাস করে এবং পরবর্তীতে  তিন বছরের জন্য সাসপেণ্ড  করার পরিপ্রেক্ষিতে, ২৭ আগস্ট রাত্রি থেকে টানা ১২ দিন  উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে তাঁর শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির সরকারি বাস ভবন পূর্বিতা-তে তালাবন্দি   করে রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুলিশ সে তালা ভেঙেও দেয়।  সাসপেণ্ডেড তিন পড়ুয়াকে পঠন-পাঠনে  ফিরিয়ে নেওয়ার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে, তা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মানছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।  এই পরিস্থিতি থেকেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ  নিজেদের অবস্থানকে ভিন্ন  ধারায় নিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তা’হলে  কী বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আইনের পথকেই দীর্ঘায়িত করার কৌশল নিয়েই চলবে ?   তাতে পরবর্তীতে বিশ্বভারতী  কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হলে, তারা  বিষয়টিকে  দীর্ঘায়িত করে পুজোর ছুটিটিকে কাজে লাগিয়ে অবশ্যই নিজেদের কৌশলগত ভাবনায় ধীর পায়ে হাঁটার সুযোগ পেয়ে যাবে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই দীর্ঘদিন পরে ১৭ সেপ্টেম্বর  বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে বিশ্বভারতীর শিক্ষার অবনমন প্রসঙ্গে কথা বলে, পরিস্থিতি থেকে  বিশ্বভারতীর ঘুরে দাঁড়াবার  কথাও জানিয়েছেন।  আবার এরই মধ্যে  উপাচার্য ও বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকদের   একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের  চিত্র প্রকাশ্যে আসে। যাতে উপাচার্য বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ ও  অধ্যাপকদের ‘চোর’ বলছেন বলেও শোনা গিয়েছে।  বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনে চুরি হয়ে যাওয়া সত্বেও নিরাপত্তা রক্ষীরা ভয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে যেতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেছেন। অনেকেই উপাচার্যের এই মন্তব্যে পুলকিত হলেও, এটা যে উপাচার্যের কৌশলী মন্তব্য তা সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কেননা, বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হলেও,   এখানে কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, রাজ্য পুলিশই কাজ করে থাকে। আর  উপাচার্যের এই অসহায়তার কথা বলার মধ্যে দিয়ে বিশ্বভারতীতে যে একটা ভীতির পরিবেশ চলছে, সেটাই কী তিনি সামনে আনতে চেয়েছেন ?  যাতে পরবর্তীতে  বিশ্বভারতী এই বিষয়টি আদালতকেও জানাতে পারে, সেই কৌশলই কী নিচ্ছে ?          বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করতে এবার তৈরী করা হলো  ‘বিশ্বভারতী-শান্তিনিকেতন বাঁচাও যৌথ মঞ্চ’।  এই  যৌথ মঞ্চে বিশ্বভারতীর বাইরেরও বিভিন্ন সংগঠনকে রাখা হয়েছে। এর আগেও একইভাবে এখানে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ তৈরী করা হয়েছিলো। ২৩ সেপ্টেম্বর এই  যৌথ মঞ্চ  তৈরীর পরই  প্রথাগতভাবে মঞ্চের পক্ষ থেকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিতে  বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।   উপাচার্যের অপসারণ দাবি করে চিঠি দেওয়া হলো বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিশ্বভারতীর পরিদর্শক  তথা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, বিশ্বভারতীর রেক্টর তথা রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।   এই যৌথ  মঞ্চ তৈরী করে তখনই বিভিন্ন পদাধিকারীকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে যখন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দিল্লিতেই রয়েছেন।   কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের জরুরি তলব পেয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী  ২২ সেপ্টেম্বর দিল্লি চলে গিয়েছেন।  বিশ্বভারতী একটি ‘বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে জানিয়েও দিয়েছে  যে, ২২ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীতে অনুপস্থিত থাকবেন। এই সময় কালে  বিশ্বভারতীর শিক্ষা ভবনের  অধ্যক্ষ তারাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর ভার সামলাবেন বলে বলা হয়েছে।  দিল্লিতে থাকাকালীন   উপাচার্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক, বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিশ্বভারতীর  প্রধান তথা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।    এদিকে বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে দিল্লিতে জরুরি তলব করার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিনিকেতনে জোর চর্চা চালানো হচ্ছে যে,  উপাচার্যের  কাজকর্ম সম্পর্কে কেন্দ্রীয়  সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রক ‘বিরক্ত’    হয়েই তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে এবং তাঁকে  তাঁর পদ থেকে অপসারণও   করা হতে পারে। কিন্তু বিশ্বভারতীর অভিজ্ঞ মহল এই মতের সাথে একেবারেই সহমত নন।  কেননা, তাঁরা মনে করছেন, বিশ্বভারতীর উপাচার্যের নিয়োগ কর্তা স্বয়ং বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি। আবার উপাচার্যকে অপসারণ করতে হলে তা পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতিকেই করতে হবে। আর তা হলে কেন্দ্রীয় সরকারকেই  বিশ্বভারতীর অবনমনের বিষয়টিকেই  মান্যতা দিতে হবে। আর তা একজন রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্বভারতীর  আচার্যের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়।  কেননা,  অতি  সম্প্রতি  বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদ আরও   দু’বছর   বাড়িয়ে  দিয়েছেন বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি স্বয়ং।  কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক সে বিষয়ে চিঠি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে তা জানিয়েও দিয়েছে।  এরফলে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় সীমা রয়েছে ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত।     তাই তাঁর আগে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে  বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদ থেকে অপসারণ করে, তাঁর নিয়োগ কর্তা বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ যে নতুন করে কোনও বিতর্ক তৈরী করবেন না,  সেটাই মনে করেন শিক্ষা জগতের অভিজ্ঞ মানুষজনেরা ।। 
 ছবি- শান্তিনিকেতন গৃহ।           

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *