বর্ধমান কবিতা উৎসবে প্রকাশিত হলো সাহিত্য পত্রিকা
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,
দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যচর্চা করলেও এবং বর্তমান ট্রেণ্ড অনুযায়ী একাধিক সাহিত্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্ধমানের মেয়ে পেশায় পার্শ্বশিক্ষিকা সামিনার ছিলনা নিজস্ব কোনো সাহিত্য গোষ্ঠী বা সাহিত্য পত্রিকা। মনের মধ্যে একটা আপশোষ থেকেই গিয়েছিল।অবশেষে ব্যবসায়ী স্বামী ও স্কুল ছাত্রী কন্যার উৎসাহে গতবছর দীর্ঘদিনের সোনালী স্বপ্ন পূরণ হলো 'সোনালী স্বপ্ন স্রোত সাহিত্য পত্রিকা'-র হাত ধরে। করোনা আবহে প্রথম বছর ই-বুক প্রকাশিত হলেও এবছর প্রকাশ করে ফেললেন আস্ত একটা বই।
গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাডেমি ও সোনালী স্বপ্ন স্রোত সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে বর্ধমানের জাগরী সভাগৃহে বর্ধমান কবিতা উৎসব-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সাহিত্য জগতের সুপরিচিত সংগঠক সাহিত্যবন্ধু সোমনাথ নাগ। এই সোমনাথ বাবুর উৎসাহে ও হাত ধরে রাজ্যের বিভিন্ন সভাগৃহে দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য সভা আয়োজিত হয়ে চলেছে।
অনুষ্ঠানে সোনালী স্বপ্ন স্রোত সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। এটি ছিল নববর্ষ সংখ্যা। কবি সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়, কবি সামিনা খাতুন, কবি তাসনীম তরফদার, বাংলাদেশ ও ভারতখ্যাত কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু সহ প্রায় চল্লিশ জন নবীন-প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকের সৃষ্টি পত্রিকাটিতে স্হান পেয়েছে। জানা গেল করোনার জন্যই পত্রিকাটি প্রকাশ করতে নির্দিষ্ট সময় থেকে বেশ কিছু দেরি হয়েছে। একই সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাহিত্যিক চিত্রা দাশগুপ্তের বৃহৎ গল্পগ্রন্থ 'মন ময়ূরী' প্রকাশিত হয়।
পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৩৬ জন কবিকে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে ও হাতে 'সোনালী স্বপ্ন স্রোত' স্মারক তুলে দিয়ে সম্বর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও চার জন কবিকে 'সোনালী স্বপ্ন স্রোত কাব্যরত্ন' উপাধি দেওয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য এ্যাকাডেমির প্রধান উপদেষ্টা কবি-সাহিত্যিক সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়, ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী প্রবাসী বাঙালি সাহিত্যিক চিত্রা দাশগুপ্ত, 'অক্ষর সোপান' কাব্য স্রষ্টা কবি মনোরঞ্জন আচার্য্য, পরমাণু কাব্যস্রষ্টা কবি সোমনাথ নাগ, হাইকু কবি অমরজিৎ মন্ডল, কবি সুপ্রভাত সেনগুপ্ত, সোনালী স্বপ্ন স্রোত পত্রিকার সম্পাদিকা সামিনা খাতুন সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। করোনার জন্য ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই উপস্থিত থাকতে পারেননি। পত্রিকা গোষ্ঠীর কিশোরী কবি তাসনীম তরফদার উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের বরণ করেন।
স্বরচিত কবিতা পাঠ, সঙ্গীত, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা প্রভৃতি সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। মা-মেয়ে সামিনা খাতুন ও তাসনীম তরফদার জুটির উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন উপস্থিত ব্যক্তিদের মুগ্ধ করে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দীপায়ন পত্রিকার সম্পাদিকা কবি শিলাবৃষ্টি।
সোমনাথ বাবু বলেন - সাধারণত মহিলা কবিরা তাদের সৃষ্টি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেই খুশি হন। কিন্তু যেভাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সাহিত্য গোষ্ঠী পরিচালনায় বা সাহিত্য অনুষ্ঠানের আয়োজনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সেটা খুবই গর্বের। আশা করা যায় আগামী দিনে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা কাব্য জগত আবার তার সোনালী দিনগুলো ফিরে পাবে।
অন্যদিকে সামিনা দেবী বলেন - নিজের একক কাব্যগ্রন্হ থাকলেও দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল সবাইকে নিয়ে একটি সাহিত্য গোষ্ঠী গড়ে তোলা ও সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করা। অবশেষে স্বামী ও মেয়ের উৎসাহে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সোমনাথ বাবু সহ অন্যান্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনেও সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রসঙ্গত ভাতার থানার ওরগ্রামের মেয়ে সামিনা বরাবরের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে। বোনের আগ্রহ দেখে গ্রামের পাঠাগার থেকে বিভিন্ন সাহিত্যিকের বই এনে দেয় দাদা। পুকুর পাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে চলে সাহিত্যচর্চা। দাদার উৎসাহে লিখে ফেলেন কবিতা। সেই শুরু। আর আজ আদ্যপান্ত গৃহবধূ সামিনার হাত ধরে প্রকাশিত হলো একটি সাহিত্য পত্রিকা এবং একইসঙ্গে পূরণ হলো দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। তবে এখানেই তিনি থেমে থাকতে চাননা। বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান সোনালী স্বপ্নকে।