Spread the love

প্রতি বুধবার রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির ভিন্নধর্মী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান 

পারিজাত মোল্লা
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পুণ্য প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি এক অভিনব ভাবনার আঙ্গিকে আন্তর্জালিক মাধ্যমে গত বুধবার ৮ই সেপ্টেম্বর তারিখে সান্ধ্যবৈঠকের আয়োজন করে এক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলো। রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গ হিসাবে গত এক বছর ধরে প্রতি বুধবার সান্ধ্যবৈঠকের আকারে নানা বিষয়ে নানা ভাবনায় এই  ধরণের অনুষ্ঠান চলে আসছে। বাংলার শতাব্দীপ্রাচীন কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে একযোগে, একসূত্রে, একই মঞ্চে আমন্ত্রণ করে তাদের পরিচয়, কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত আলোচনা – বাংলার সাংস্কৃতিক, সামাজিক পরিমণ্ডলে তার বিস্তার, জনমানসে প্রভাব – এই বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করার উদ্দেশ্যে। কলকাতার সাতটি প্রতিষ্ঠান – মহাবোধি সোসাইটি, নব বিধান ব্রাহ্মসমাজ, আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, গীতবিতান, কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট, দ্য রেফিউজ এবং রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি – এই প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যনির্বাহী সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ একসাথে, একই সময়ে এই আলোচনাচক্রে উপস্থিত থেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রের সূচনাপর্ব, কাজকর্ম – এই সমস্ত বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখলেন। মহাবোধি সোসাইটি স্থাপিত হয় ১৯১৪ সালে স্যার আশুতোষ মুখার্জির সভাপতিত্বে – সংস্থার তরফে বক্তব্য রাখেন হেমেন্দুবিকাশ চৌধুরী, নম্রতা চাড্ডা। একটি গান গেয়ে শোনান ফোয়ারা দত্ত। আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সভাপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় এবং রীনা ভাদুড়ী। ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী মহাশয়ার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গীতবিতান সংস্থার পথ চলার ইতিহাস তুলে ধরেন স্বপন কুমার ঘোষ, রীনা মুখার্জি। গান গেয়ে শোনান সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য। ১৩১ বছর পার করে আসা আর একটি প্রতিষ্ঠান কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট – যার সূচনা স্যার আশুতোষ মুখার্জি এবং ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ জানালেন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য্য, সুমিত গুপ্ত এবং শঙ্কর ভট্টাচার্য্য। শতাব্দী পার করে আসা আর একটি প্রতিষ্ঠান নব বিধান ব্রাহ্মসমাজ। কেশব চন্দ্র সেন এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই ব্রাহ্মসমাজ স্থাপিত হয় ১৮৬৬ সালে ১১ই নভেম্বর। প্রতিষ্ঠানের তরফে বিশদ বিবরণ রাখেন তপোব্রত ব্রহ্মচারী ও শান্তনু সেন। ব্রহ্মসঙ্গীত গেয়ে শোনান সুপ্রতিম চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক গৌরবমণ্ডিত রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি সংস্থার সূচনা, উদ্দেশ্য, পথ চলা এবং কর্মকাণ্ডের বিস্তার ইত্যাদি বিষয় সকলের সামনে মেলে ধরেন অনিন্দ্য কুমার মিত্র, রঞ্জিত কুমার নায়ক। সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় একটি গান গেয়ে শোনান।  ১৯০১ সালে বৌবাজার স্ট্রীটে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য রেফিউজ সংস্থাটি – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর দ্বারোদ্ঘাটন করেন। এটি একটি অনাথ আশ্রম – সমাজের অবহেলিত, অপাংক্তেয় মানুষজনদের লালনপালন, শিক্ষাদীক্ষার পাঠ এবং পুনর্বাসন – এই সংস্থাটির লক্ষ্য। সংস্থার তরফে বিশদ ভাবে বলেন কর্মকর্তা বিশ্বরূপ দে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি দক্ষ হাতে পরিচালনা ও উপস্থিত সকলকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়; কারিগরি খুঁটিনাটি ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে বিশেষ সহায়তা করেন সদস্য হিমাদ্রি মুখোপাধ্যায়।                অনাস্বাদিতপূর্ব ও ভাবনার নতুনত্বে সমৃদ্ধ এই অনুষ্ঠানের আয়োজক রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি। এইরকম ভাবনায় অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা বা প্রয়াস এখনও অবধি কোথাও পরিলক্ষিত হয় নি । সেদিক দিয়ে রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির অভূতপূর্ব এই উদ্যোগ বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *