Spread the love

প্রতারণার শিকার কলেজ ছাত্রী,

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,

      ভারতীয় জওয়ান মানেই একটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত আবেগ, বীরগাথা, বিশ্বস্ততার প্রতীক। এবার সেই জওয়ানের নাম ব্যবহার করে পিতৃহীনা গরীব ঘরের কলেজ ছাত্রীকে আর্থিক প্রতারণা করল দুষ্কৃতিরা। ঘটনাটি গত ৯ ই নভেম্বর সন্ধ্যা বেলার এবং বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের। 
        বিষ্ণুপুরের একটি কলেজের বোটানির সান্মানিক বিভাগের তৃতীয় সেমেস্টারের ছাত্রী পিতৃহীনা মেয়েটির আসল বাড়ি পূর্ব মেদনীপুরে। গরীব ঘরের মেধাবী মেয়েটির পড়াশোনার ক্ষেত্রে জনৈক কলেজ শিক্ষক কিছুটা সাহায্য করেন। তাই তাকে মেদনীপুর থেকে বিষ্ণুপুরে চলে আসতে হয়। তার পড়াশোনার  বাকি খরচ  চলে কন্যাশ্রীর টাকায়। দেশের বাড়িতে গৃহশিক্ষকতার কাজ করে মা নিজের ও দশম শ্রেণির ছাত্র ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালান। মেয়েটি অল্প বয়স থেকেই সুন্দর ছবি আঁকে। নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনের আশায় মেয়েটি সমাজ মাধ্যমে 'পোস্ট' করে। যেমন অনেকেই করে থাকে। তার 'পোস্ট' দেখে জনৈক সাহিল কুমার নিজেকে আর্মি অফিসার দাবি করে ছবি কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করে মেয়েটিকে দুটি নাম্বার ( ৯৩৯৪০৪৭১২১, ৯৬৯২৭৮০১৫৫) থেকে ফোন করে। এমনকি বিশ্বাস অর্জন করার জন্য সহিল কুমারের আধার কার্ড, প্যান কার্ড, আই কার্ড ও সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত ছবি পাঠায় এবং জেশোর রোড, দমদমের ঠিকানা দেয়। এইসব তথ্য দেখে মেয়েটির নুন্যতম সন্দেহ হয়নি। কারণ আর যাইহোক ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত কোনো জওয়ান এত তথ্য দিয়ে প্রতারণা করতে পারে সেটা তার মাথাতেই আসেনি। মেয়েটি  গুগল পে বা ফোন পের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বললে সহিল কুমার তাকে মেজরের কথা বলে কুপন পাঠায়। নির্দেশ অনুযায়ী মেয়েটি কুপন ব্যবহার করলে তার ব্যাংক অ‍্যাকাউণ্ট থেকে চার হাজার টাকা কাটা যায়। মেয়েটি সেটি জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের ভুল স্বীকার করে দুই হাজার টাকা করে আরও দুটি কুপন পাঠিয়ে বলে মেয়েটি তার টাকা ফেরত পেয়ে যাবে। কিন্তু এবারও দুই হাজার টাকা করে তার চার হাজার টাকা অর্থাৎ মোট আট হাজার টাকা কাটা যায়। টাকাটি জমা পড়ে 'রাজোরপে সফটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড' নামে কোনো একটি কোম্পানির অ‍্যাকাউণ্টে। প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে ফোনের ওপারের ব্যক্তিকে টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করে। উল্টে সাহিল কুমার তাকে ভিডিও কল করার জন্য বলে। তার রুমমেট আরও বড় বিপদের আশঙ্কা করে তাকে ভিডিও কল করতে দেয়নি। কিভাবে সে তার পড়াশোনার খরচ, খাওয়ার খরচ বা বাড়ি ভাড়া দেবে সেই চিন্তায় ঘটনার পর অর্থাৎ ৯ ই নভেম্বর থেকে মেয়েটি কার্যত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই চরম বিপদের সময় সবসময় তার পাশে থাকছে তার রুম মেট।
           ঘটনাটি শুনে অবসরপ্রাপ্ত জনৈক ব্যাংক আধিকারিক বললেন - বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ক্লিয়ারেন্স ব্যাংক ব্যবস্হায় বিপ্লব ঘটালেও যেভাবে এই সিস্টেমে দিনের পর দিন প্রতারণা বেড়ে চলেছে এবং ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কর্মচারিদের দুর্ব‍্যবহারের অভিযোগ আসছে  তাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ পুরোপুরি ব্যাংকের উপর আস্হা হারিয়ে ফেলতে পারে। শুধুমাত্র গ্রাহকদের সতর্ক করেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার দায়িত্ব শেষ করতে পারেনা। বর্তমানে গ্রাহকদের সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে থাকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা ব্যাংকের একাধিক অসৎ কর্মচারী সাহায্য না করলে ভুয়ো তথ্য দিয়ে  বর্তমানে 'ফেক' অ‍্যাকাউণ্ট খোলা কার্যত অসম্ভব। সুতরাং যে অ‍্যাকাউণ্টে টাকাটা গেছে সেটার মালিক কে তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়। দরকার একটু সদিচ্ছার। তাছাড়া মাথায় রাখতে হবে পুরনো ব্যবস্থায় প্রতারণার ঘটনা প্রায় ছিলনা। তাছাড়া যে মোবাইল নাম্বার দুটি ব্যবহার করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সার্ভিস প্রোভাইডাররা নাম্বারের মালিককে চিহ্নিত করতে পারে। 
        নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতারিত ছাত্রীটির রুমমেট বলল - মানুষ যে এত নিষ্ঠুর, বিবেকহীন হতে পারে ঘটনাটি চোখের সামনে না ঘটলে জানতেই পারতাম না। যিনি প্রতারণা করলেন তিনিও হয়তো  কারও পিতা। একটা অসহায় মেয়ের চোখের জলও তার মনে কষ্ট দিলনা? মেয়েটির যা মনের অবস্থা আমি পাশে না থাকলে হয়তো সেই মুহূর্তে বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারত। প্রতারক ব্যক্তি যেসব তথ্য পাঠিয়েছিল এবং কোন অ‍্যাকাউণ্টে টাকাটা গেছে সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আমরা পরিচিত সাংবাদিকের হাতে তুলে দিয়েছি। সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের কাছে আমাদের অনুরোধ আপনারা বিষয়টি তদন্ত করুন এবং সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে ভবিষ্যতে কেউ যাতে কোনোরকম প্রতারণা করতে না পারে তার জন্য অপরাধীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুন। একই অনুরোধ পুলিশ আধিকারিকদের কাছেও। সংশ্লিষ্ট জওয়ানের কাছেও আমাদের অনুরোধ - সংশ্লিষ্ট প্রতারকদের যাতে কঠোর শাস্তি দেওয়া যায় তার জন্য আপনিও একটু উদ্যোগ নিন। আপনারা তো সমগ্র দেশবাসীকে রক্ষা করেন প্রতারকদের হাত থেকে টাকাটা উদ্ধার করে একটা অসহায় মেয়ের জীবন রক্ষা করতে পারবেন না? 
           কান্নায় ভেঙে পড়া প্রতারিত মেয়েটি বহু কষ্টে বলল- জানিনা এরপর আমার কি হবে? ঘটনার আকষ্মিকতায় প্রতারিত মেয়েটি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ভাবতেই পারেনি। 
        এখন দেখার ব্যাংক প্রতারণা বন্ধ করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয় কিনা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *