Spread the love

কোভিড অতিভয় অতিমারী নয়

গত রবিবার (অর্থাৎ ৩১ ১০ ২০২১ ) থেকে রাজ‍্যের লোকাল ট্রেনগুলো চালু হয়েছে যার জন‍্যে ট্রেন যাত্রীরা হ‍্যাপিতিস হয়ে বসে ছিলো । কে বোঝে নিত‍্য যাত্রীর কষ্ট , হকারের যন্ত্রনা ,শ্রমিকের ব‍্যাথা ? স্বাভাবিক কারণে তাদের মুখে হাসি ফুটছে ‌। আমরা আবার দেখতে পাব যাত্রীদের তোড়জোড় , শুনতে পাব শ্রমিকদের হাঁকডাক , হকারদের সেই চেনা কণ্ঠ স্বর । দেখতে পাব তাদের রানিং ট্রেন থেকে নেমে এক কর্ম্পামেন্ট থেকে অন্য কর্ম্পামেন্টে মাথায় ঝুড়ি নিয়ে দৌড়ে ওঠা ‌নামা। দীর্ঘ ছমাস ধরে বন্ধ ছিলো কোভিডের বাড়বাড়ন্তের জন‍্যে । সেই সঙ্গে স্কুল পাঠশালাও শ্রীঘ্রই খুলে যাচ্ছে । আবার ট্রেন চলবে, স্কুল আবার খুলবে ! হাট,বাজার ,সিনেমা হল ,থিয়েটার হল,পানশালা সব খুলে যাবে ,সব আগের মতো স্বাভাবিক হবে। জীবন তার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পাবে । বন্দী থেকে মুক্ত ! আমরা আগের মতো ব‍্যাস্ত হয়ে উঠব কাজের চাপে ‌‌‌। হয়তো তখন মুক্তি চেয়ে ছুটি চাইব ‌‌। বিচিত্র জীবনের বৈচিত্র্য গতিধারা ‌! কোভিডে বন্দী থেকে মুক্তি কামনা আবার ব‍্যাস্ত থেকে ছুটির প্রার্থনা ‌‌। সত‍্যি জীবন বটে ।

ট্রেন ,বাস চালু হলেও কোভিড থেকে কিন্তু মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না ‌। কোভিডে মৃতেরা ফিরে আসে না কিন্ত কোভিড ফিরে আসে । তাই কোভিড থেকে সাবধানতা অবলম্বনের জন্যে মুখাবরণ বাধ‍্যতামূলক । স‍্যানিটাইজেশন চাই চাই ‌‌‌। শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার ( রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ) বাড়ানোর জন‍্যে আছে যথাক্রমে কোভিশিল্ড আর কোভাক্সিন। এটা কিন্তু টিকার মতো নয় ‌‌। ‌ওই দুটি ডোজ নেবার পরে ও মুক্ত নয় ,কোভিডে আক্রান্ত হতে পারে । তাই কোভিড ভ‍্যাক্সিনেশন বললেও আসলে কিন্ত ডোজ ‌। ডোজ কী ? একবার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঔষধ সেবন ‌। তাই আমরা কোভিডের ডোজ বলি । হাম বসন্তের নির্মূল করার জন‍্য ভ‍্যাক্সিনেট করা হয় যার বাংলা প্রতি শব্দ হচ্ছে টিকা । সোজা কথায় কোভিডের জন্যে ডোজ যা আমাদের শরীরে ইমিউনিট পাওয়ার বাড়ায় ‌আর হাম,বসন্তের জন‍্যে ভ‍্যাক্সিনেশন বা টিকা যা ওই রোগগুলো চিরতরে নির্মূল করে ‌‌‌‌। হাম,বসন্ত এক সময় ছিলো এপিডেমিক অর্থাৎ মহা মারী । মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেশী দেখা দিলে বলতো দেশে মড়ক লেগেছে । তখন বাঁচার একমাত্র পথ ছিল মৃত্যু কারণ তখনও টিকা আবিস্কার হয়নি ‌। আর কোভিড হচ্ছে প‍্যান্ডামিক মানে অতি ভয় ‌‌। তাই কোভিড থাকলেও আমরা মরব না । শুধু ভয়কে জয় করতে হবে ।

তাহলে কোভিডে এতো মানুষ মরলো কেন ? প্রথমে কোভিড আক্রান্তদের জ্বরের ট্রিটমেন্ট করা হয়েছিল । জ্বরের সিমটম থাকলেও এটা বিশেষ ধরনের জ্বর বিশেজ্ঞরা প্রথমে বুঝতে পারেনি । অজানা জ্বরের ঠিকমতো ট্রিটমেন্ট করা যায়নি , সেই সঙ্গে অতিভয়াভয়তা ,অনেক সময় অনেকে স্ট্রোকে ও মারা যায় । সেইজন‍্যে আমরা প্রতিদিন খবরের বুলেটিন থেকে জানতে পারি ঊর্ধ্বমুখী মৃত্যুহার বা গ্ৰাফের চিত্র রেখায় দেখি সদা ঊর্ধ্বগামী যা আমাদের কাছে প্রচণ্ড আতঙ্কের সৃষ্টির কারণ হয়ে ওঠে । যা ছিল এক কথায় অকাঙ্খিত ,অনভিপ্রেত ।

কোভিড অনেক স্বজন হারানোর বুক ফাটা কান্না শুনিয়েছে । তবে কোভিড আমাদের অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করেছে । মুক্ত বাতাস দান করেছে । মনে হয় ঈশ্বরের এটাই ইচ্ছা অসন্ন বিপদ থেকে ঈশ্বরের সৃষ্টি এই সুন্দর গ্ৰহটাকে বাঁচানো । আমরা ও বেঁচে যাই ‌‌। পৃথিবী তার নিজস্ব গতিধারাতে চলছে । সেই গতিধারার মধ‍্যে আমাদেরকে ঠিকমতো খাপ খাইয়ে বাঁচা শিখতে হবে ডারউইনের ‘সারভাইভাল অব দি ফিটেস্ট’ তত্ত্ব মেনে ‌। তাই কোভিড নিয়ে এতো ভয়ের কোনও কারণ দেখি না ‌। শুধু সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হয় ‌। স্কুলের ছেলে মেয়েদের জন‍্যে অভিভাবক সহ স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা এবং বিশেষ নজরদারি ব‍্যাবস্থা করা কারণ তারা তো দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বন্দী ছিল । নতুন নতুন তাদেরকে একটু সময় লাগবে ‌‌। আর আমরা বড়রা বেলাগাম না হয়ে মুখ লাগাম অর্থাৎ মুখাবরণ পরে চলাফেরা করা বিধেয়। আমরা যদি অতিমারীকে জয় করতে পারি ,অতিভয়কে কেন জয় করতে পারব না ? মহামারী কখনও অতিভয় হয় কিন্তু অতিমারী কখনও মহামারী হয় ? আমরা অতিভয়কে দূর করে দ্রুত কোভিড মুক্ত হব ‌।

সুবল সরদার
মগরাহাট
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
তাং ০১ ১১ ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *