Spread the love

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জোট শরিক নিশাদ পার্টি

এস.মন্ডল,

, আগামী বছর দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার নির্বাচন রয়েছে। তার আগে থেকেই শাসক দল ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং নিশাদ পার্টির প্রধান সঞ্জয় নিশাদ তাদের জোট শরিক সম্পর্ক ঘোষণা করলো।নেতা সঞ্জয় নিশাদের নামে পার্টির পরিচিতি হলেও দলের আসল নাম নির্বল ইন্ডিয়ান শোসিত হামারা আম দল।উত্তর প্রদেশে জেলেরা মূলত নিশাদ সম্প্রদায়ভুক্ত। সঞ্জয়ের দাবি, দেশের বৃহত্তম রাজ্যটির জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ এই সম্প্রদায়ের এবং ১৬০টি বিধানসভায় তাদের ভোটেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিধানসভা ভোটের আগে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ময়দানে নেমেছেন। তবে ধর্মীয় সমীকরণের পাশাপাশি জাতপাতের রাজনীতিরও গর্ভগৃহ গো-বলয়ের এই রাজ্যটি। ধর্মীয় সমীকরণ স্পষ্ট করতে যোগী বিরোধীদের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘তোষণ গোলা’ নিক্ষেপ করছেন। ক’দিন আগেই বলেছেন, আগের জমানায় ‘আব্বাজান’ বলা মানুষেরাই রেশন ব্যবস্থায় বেশি সুবিধা পেতেন। তাঁর কথায় স্পষ্ট পাঁচ কোটি মুসলিমের ভোট হারানোর বিনিময়ে অখণ্ড হিন্দু ভোট পদ্মফুলের সাজিতে জড়ো করাই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যপূরণ হতে পারে অন্যান্য অনুন্ন শ্রেণির ভোট আদায় করা গেলে। সেই লক্ষ্যে মোদী-অমিত শাহরা মাস দুয়েক আগে যোগীর মুখ চেয়েই উত্তরপ্রদেশ থেকে নতুন করে আরও সাতজনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। যাঁদের পাঁচজন অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির নেতা। এছাড়া পুরনো বন্ধু আপনা দল তো আছেই। ওবিসি ভোট ব্যাঙ্কের অঙ্ক মেনে আপনা দলের নেত্রীকে ফের মোদী তাঁর মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে এনেছেন। উচ্চবর্ণের পার্টি হিসাবে পরিচিত বিজেপি ক্ষমতার রাজনীতিতে কোনও ছুত্‍মার্গ নিয়ে চলে না উত্তরপ্রদেশেই অতীতে তার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। দু-আড়াই দশক আগে তারা দলিত নেত্রী মায়াবতীর হাত ধরে সরকারও গড়েছিল দেশের সবচেয়ে বেশি ভোটারের এই রাজ্যটিতে। তবে এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যোগীকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেও বিজেপি নেতৃত্ব আসল সত্যটা জানে। দল শাসিত বাকি রাজ্যগুলির তুলনায় যোগী সরকারের কাজকর্ম মোটেই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য নয়। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা হল যোগীর বিকল্প কেউ নেই যাঁকে সামনে রেখে লখনৌয়ের কুর্সি দখলে রাখার লড়াই করা যায়। আর উত্তর প্রদেশে খারাপ ফল হলে পরের লোকসভা ভোটের লড়াই কঠিন হয়ে যাবে। তাই গদি বাঁচাতে দলিত এবং অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণিকে খুশি করার রাস্তায় হাঁটছে তারা। এই কাজে তারা এতটাই অসহায় অবস্থা থেকে মরিয়া হয়ে পথে নেমেছে যে বর্তমান বিধানসভায় এক বিধায়কের পার্টি সঞ্জয় নিশাদের পার্টির হাত ধরল তারা। বিজেপির এই অঙ্ক আবার অনেকটাই সফল করে তুলছে সামাজিক ন্যায়ের রাজনীতি করা দুই দল সমাজবাদী ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি। অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী সাফ জানিয়েছেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তারা হাত ধরাধরি করে চলবেন না। যদিও যোগী জমানাতেই লোকসভার একটি উপনির্বাচনের ফলাফলে বোঝা গিয়েছিল পিসি (মায়াবতী) এবং ভাইপো (অখিলেশ) একে অপরের হাত ধরলে বিজেপির ঘোর বিপদ। সঞ্জয় নিশাদকে নিয়ে সম্প্রতি রাজনীতি সরগরম হয়েছিল একটি নিউজ পোর্টালের স্টিং অপারেশন ঘিরে। দেখা যায়, সঞ্জয় বলছেন তিনি বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট বিলির বিনিময়ে টাকা নেবেন। এদিন সাংবাদিকরা বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্রকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাঁর জবাব ছিল, আমরা এরপরও এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তি নিয়েছি। তবে সাংবাদিক বৈঠকে দু-পক্ষই একটি বিষয় এড়িয়ে যায়। নিশাদ হালে বিজেপির হাত ধরা নিয়ে প্রকাশ্যে দাবি করেন, তাঁকে ভোটের আগেই ‘উপ-মুখ্যমন্ত্রী’ ঘোষণা করতে হবে। এদিন সেই শর্তের ব্যাপারে কোনও নেতাই কিছু বলতে চাননি। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে নানান রাজনৈতিক পেক্ষাপট দেখা যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *