Spread the love

আন্তর্জাতিক সম্মান এনে দিল বাংলা ছবি ‘খুর’

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

       লেখিকা সুনয়নী গাঙ্গুলি ও প্রযোজিকা সুকন্যা রায় - দুজনেই নারী এবং নির্দেশক অঙ্কুর দাস নবীন ও তরুণ। হৃদয়-মন স্পর্শ করা কাহিনী হলেও ভারতীয় প্রেক্ষাপটে একরাশ দ্বন্দ্ব ছিল মনে। কিন্তু সমস্ত দ্বিধা, দ্বন্দ্ব কাটিয়ে যখন সেটা চলচ্চিত্রের রূপ পেল তখন ঘটল 'মিরাকেল'।  টার্কি চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের স্বীকৃতি পেল হুসনে শবনম ও অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত নিখাদ বাংলা ছবি জগৎগুরু  প্রোডাকশনের 'খুর'। জানা যাচ্ছে দেশ-বিদেশের প্রায় দুই সহস্রাধিক ছবির মধ্যে যে সতেরোটি ছবিকে নির্বাচিত করা হয় তার অন্যতম হলো 'খুর'।
      বর্তমান যুগের অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হলো 'ডোমেস্টিক রেপ'। প্রায় প্রতিদিন কাগজের পাতায় এই বীভৎস ঘটনা মানুষের চোখে পড়ে। সেই ঘটনা নিজের কলমে ফুটিয়ে তোলেন লেখিকা সুনয়নী গাঙ্গুলি। কাহিনী পরিবেশন করেন তরুণ চিত্র পরিচালক অঙ্কুর দাসকে। কাহিনী শুনে এগিয়ে আসেন প্রযোজিকা সুকন্যা রায়। দুই প্রধান চরিত্রের একদিকে দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে অভিনয় জগতের প্রায় সমস্ত প্লাটফর্ম কাঁপিয়ে বেড়ানো জাতশিল্পী অনিন্দ্য ব্যানার্জ্জী। অন্যদিকে অভিনয় জগতে মোটামুটি নবাগতা উচ্চ শিক্ষিতা হুসনে শবনম। অভিনয়ের ক্ষেত্রে পরিচালকের স্বাধীনতা ও শক্তিশালী কাহিনীর উপর ভর করে প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে দুই অভিনেতা বিশেষ করে শবনমের অসাধারণ স্বাভাবিক অভিনয় ছবিটিকে বিশেষ মাত্রা এনে দেয়। একঘণ্টা পনেরো মিনিটের ছবিটি দেখলে কখনোই মনে হবেনা মানুষের আদিম রিপুতে সুড়সুড়ি দেওয়া কোনো মোটা দাগের ছবি। উল্টে চোখের সামনে ধরা পড়বে এক উচ্চ মার্গের বাস্তব শিল্প। ফলস্বরূপ সবার মিলিত প্রয়াসে জোটে একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
     জানা যাচ্ছে দি লিফট অফ সেশনস সেপ্টেম্বর ২০২০, ফার্স্ট টাইম ফিল্ম মেকার সেশনস সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১ দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফেসটিভ্যাল ২০২১, পি.আই.এফ.এফ পারানা ইণ্টারনেশানাল ফিল্ম ফেসটিভ্যাল চতুর্থ এডিশন আর্জেণ্টিনা ২০২১  অনারেবল জুরি মেনশনের পর অবশেষে  টার্কির অ্যাণ্ড্রোমেডা চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১ শে জুটল সেরা ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড।
        শ্রেষ্ঠত্বের পুরষ্কার পাওয়ার পর চলচ্চিত্র নির্দেশনা জগতের নবীন প্রতিভা অঙ্কুরের চোখে-মুখে ধরা পড়ল উচ্ছ্বাস। প্রাথমিক উত্তেজনা কাটিয়ে তিনি বললেন - এই সাফল্য আমাদের সবার মিলিত প্রয়াস। সুনয়নীর শক্তিশালী কলম, দুই অভিনেতা-অভিনেত্রীর দুরন্ত ও স্বাভাবিক অভিনয় এবং সর্বোপরি প্রযোজিকা সুকন্যা রায় এগিয়ে না এলে কখনোই আমাদের প্রচেষ্টা দিনের আলো দেখত না। সুনয়নীর ছোট্ট প্রতিক্রিয়া - অবশেষে আমার ভাবনা আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিল এ যে বড় আনন্দের।
         বরাবরের মেধাবী ছাত্রী বায়ো-টেকনোলজির মাস্টার ডিগ্রিধারী এবং ক্যানসার গবেষক নায়িকা সুন্দরী হুসনে শবনম হতে পারতেন কোনো কলেজের অধ্যাপিকা। কিন্তু অভিনয়কে ভালবেসে এই চলচ্চিত্রে তিনি যে ধরনের স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। শবনম বললেন - এই সিনেমায় অভিনয় করে আমি  খুবই খুশি। এরজন্য আমি এই ইউনিটের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। শবনমের বিপরীতে আছেন শতাধিক সিনেমা, অসংখ্য সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ এবং ত্রিশ বছর ধরে অভিনয়-মঞ্চ কাঁপানো অনিন্দ্য ব্যানার্জ্জী। তিনি বললেন - এই ধরনের শক্তিশালী বাস্তব কাহিনী যুক্ত সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া সত্যিই গর্বের।
         ভারতীয় নারী হিসাবে বিতর্কিত গল্প নিয়ে সিনেমা করার ক্ষেত্রে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন প্রযোজিকা সুকন্যা। তিনি বললেন - একটা শক্তিশালী গল্প যে  চলচ্চিত্র জগতে বিপ্লব ঘটাতে পারে তার প্রমাণ 'খুর'। শক্তিশালী গল্প পেলে আবার তিনি প্রযোজনা করতে এগিয়ে আসবেন।
      গল্পের শুরু 'ডোমেস্টিক রেপ'-কে কেন্দ্র করে। নর-নারী, দেহ-আত্মা-র ধাপ অতিক্রম করে শেষে উত্তরহীন প্রশ্ন 'সো হু ওন'। গল্পের দুই প্রধান চরিত্র শবনম ও অনিন্দ্য অসাধারণ। যোগ্য সঙ্গত করে গেছেন রবি শঙ্কর, অমৃতেন্দু ও ঋদ্ধিমা। আপাতত বড় পর্দায় মুক্তির প্রতীক্ষায় 'খুর' এবং শেষ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দর্শককে বইটি দেখতেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *