Spread the love

আনন্দমেলা কবি সম্মেলন হলো কলকাতায়,

নীহারিকা মুখার্জ্জী

          সাহিত্যকে ভালবেসে কেবলমাত্র সাহিত্যচর্চা করার জন্য যে চাকরি ছেড়ে দেওয়া যায়  করোনা অতিমারিতে জন্মসূত্রে আসামের মেয়ে কলকাতার গৃহবধূ গোপা ভট্টাচার্যের সৌজন্যে সেই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল আপামর সাহিত্যপ্রিয় বাঙালি। শুধুমাত্র এই ধরনের সাহিত্যপ্রিয় মানুষের জন্যই আপাত ঝিমিয়ে পড়া বাংলা কাব্য-সাহিত্য জগতে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। সমাজ মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য উন্নত মানের সাহিত্যচর্চা গ্রুপ। সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন কবি প্রতিভার। রাজ্যের বিভিন্ন  প্রান্তে অনুষ্ঠিত সাহিত্য অনুষ্ঠানে প্রকাশিত ভিন্ন স্বাদের বই কাব্য পিপাসু পাঠকের কাব্য পিপাসা মেটাচ্ছে।
         গত ২৩ শে অক্টোবর সাহিত্যবন্ধু সোমনাথ নাগের সক্রিয় সহযোগিতায় এবং  'আনন্দমেলা' সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে শিয়ালদহের কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠিত 'আনন্দমেলা কবি সম্মেলন-২০২১' এর সাক্ষী থাকল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বেশ কয়েকজন বাঙালি কবি-সাহিত্যিক।
    এই অনুষ্ঠানে 'আনন্দমেলা সাহিত্য পত্রিকা'-র প্রথম শারদ সংখ্যা ও যুথিকা সাহিত্য পত্রিকা পরিচালিত শারদীয়া 'পরমাণু কাব্যমেলা' পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।  এছাড়াও একুশ জন কবি-সাহিত্যিকের একক কাব্য সংকলন ও প্রাবন্ধিক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য রচিত 'চেতনায় রবীন্দ্রনাথ' নামে একটি প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়।
     এই অনুষ্ঠানে ৫৪ জন কবিকে  গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে ও হাতে স্মারক সম্মাননা তুলে দিয়ে সম্মান জানানো হয়। সঙ্গীত, স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তিতে অনুষ্ঠানটি ভরপুর ছিল। প্রবীণ কবিরা তাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার নবীন কবি প্রতিভাদের সামনে তুলে ধরেন। আলোচিত হয় কবিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী দেবীকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
       এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিরা।
      এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাডেমির পৃষ্ঠপোষক বর্ষীয়ান কবি দেবপ্রসাদ বসু ও উপদেষ্টা 'পঞ্চবান' কাব্যস্রষ্টা সুশান্ত ঘোষ, পরমাণু কাব্য স্রষ্টা তথা বিশিষ্ট সাহিত্য সংগঠক সোমনাথ নাগ, অক্ষর সোপান কাব্য স্রষ্টা  মনোরঞ্জন আচার্য্য,  ডঃ পিনাকী বসু, আনন্দমেলা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা গোপা ভট্টাচার্য সহ আরও অনেক কবি-সাহিত্যিক।
       প্রসঙ্গত জন্মসূত্রে আসামের মেয়ে গোপা ছোট থেকেই সাহিত্যচর্চা করতেন। সাহিত্যচর্চায় সময় দেওয়ার জন্য আসামের চা বাগানের চাকরি ছেড়ে দেন। বিয়ের পর গত তেরো বছর  ধরে তিনি কলকাতায় বাস করছেন। এখানে আসার পর তিনি  সাহিত্যবন্ধু সোমনাথ নাগ, কবি সুশান্ত ঘোষ প্রমুখ সাহিত্যপ্রেমী মানুষের সংস্পর্শে আসেন। এরপর থেকেই তার সাহিত্যচর্চা অন্যমাত্রা পায়। ইতিমধ্যে তার কয়েকটি কাব্যগ্রন্হ সাহিত্যপ্রিয় মানুষের সমাদর লাভ করেছে। বাংলা সাহিত্যের প্রসারের লক্ষ্যে মাত্র আট মাস আগে তিনি সমাজ মাধ্যমে 'আনন্দমেলা' নামক একটি সাহিত্য গ্রুপ চালু করেন। তারপর সোমনাথ নাগের উৎসাহে পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে গোপা দেবীর লেখা কয়েকটি কাব্য গ্রন্থ মুদ্রিত আকারে দিনের আলোর মুখ দেখেছে এবং পাঠকের সমাদর লাভ করেছে।
      গোপা দেবী বললেন - পার্ট টাইমার হয়ে নয় ফুল টাইমার হয়েই সাহিত্যের সেবা করতে চেয়েছি। নিজের মনে কিঞ্চিৎ দ্বিধা থাকলেও এক্ষেত্রে স্বামী-পুত্রের উৎসাহ ছিল বেশি। আমি চাই প্রকৃত সাহিত্যপ্রিয় মানুষেরা সাহিত্যের সেবা করার জন্য এগিয়ে আসুন। আমার বিশ্বাস সবার মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্য আবার গৌরবের উচ্চ শিখরে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *