Spread the love

‘আগুনপাখি’ নেই, শোকাহত মঙ্গলকোট 
 মোল্লা জসিমউদ্দিন, 
দুই বাংলার আপামর বাঙালির প্রিয় কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক আর নেই।গত সোমবার রাতে বাংলাদেশে মারা গেছেন তিনি। বাঙালির সাহিত্য জগতে কিংবদন্তী এই লেখকের জন্মভিটে এপার বাংলার পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার নিগন সংলগ্ন যবগ্রামে। শৈশব থেকে তরুণকাল কেটেছে এখানেই।পরবর্তীতে বাংলাদেশ গঠন হওয়ায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এই সাহিত্যিক চলে যান বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায়।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে কয়েক দশক  কর্মজীবন অতিবাহিত করে গেছেন। তবে মঙ্গলকটের যবগ্রামের টানে ছুটে এসেছেন বারবার। তিনি যে ‘শঙ্খচিল’। দেশের কোন সীমানা তার নেই যে মানা।সাম্প্রতিক সময়ে এই অসুস্থ কথাসাহিত্যিক কে রাজশাহী থেকে চিকিৎসার জন্য এয়ারএম্বুলেন্স করে আনা হয়েছিল ঢাকায়।চিকিৎসা চলছিল, হঠাৎই সোমবার রাতে মারা যান তিনি।তাঁর জন্মভূমি মঙ্গলকোট জুড়ে আপনজন হারানোর যন্ত্রণা ফুটে উঠে চারিদিকে। পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই জানতেন না বাঙালির প্রিয় কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এর পৈতৃক ভিটা এই মঙ্গলকোটের যবগ্রামে। …এ যেন তাঁর জননীর কাছে ফেরা। জননী মানে  শত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে কোল পেতে থাকা আবহমানের বাংলা মা। তিনি হাসান আজিজুল হক। শুধু বাংলাদেশের নয়,  বাংলা ভাষার একজন অনন্য কথাশিল্পী। ঘটনা হল তাঁর নাড়ি পোঁতা আছে এই বাংলায়। কাটোয়া মহকুমার মঙ্গলকোটের যবগ্রামে গত ১৯৩৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী  জন্ম। সময়ের ঘাত প্রতিঘাতে দেশ ছেড়েছিলেন  হাসান আজিজুল হক। ‘পরদেশি’ হাসান আজিজুল পাশপোর্ট ছাড়া নিজের জন্মভূমিতে আসতে পারতেন না, তাঁর আক্ষেপ ছিল ভিসা নিয়ে কেন জন্মভূমি আসতে হবে তাঁকে? প্রায় আশি বছরের এই কথা সাহিত্যিক একান্ত আলাপচারিতায় বাংলা ভাষা নিয়ে ভীষণ আক্ষেপ করেছিলেন। তাঁর আক্ষেপ ছিল বর্তমান সময়ে  নাকি বাংলা সাহিত্য  ‘বামন’ হয়ে যাচ্ছে। আর একটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর পাওয়া যাবে না। বাংলা সাহিত্যের নানান পুরস্কারপেয়েছেন  হাসান আজিজুল হক, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন যেমন, তেমনই ১৯৯৫ সালে রাস্ট্রের দমনের প্রতিবাদ জানাতে ‘একুশে  পুরস্কার’ প্রত্যাখান করেছিলেন তিনি।২০০৭ সালে ‘আগুন পাখি’ লেখার জন্য ভারত থেকে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন এই কথাসাহিত্যিক । দর্শনের অধ্যাপকের জীবনে সঙ্কটময় পঞ্চাশ বছর সময়কাল উত্তীর্ণ আত্মজীবনীতে আছে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে দেখা হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কের ওঠানামা বিভিন্ন অধ্যায় । রাস্ট্রের নির্মাণ, বি-নির্মাণ  জাতীয় বিপর্যয় বিষয়ক সব কথা ‘ফিরে যায় ফিরে আসি’ লিখতে বসে ভাবতেন সেই বাংলা আর নেই। পশ্চিমবাংলা আর বাংলাদেশে স্থান সঙ্কুলান ঘটেছে। বিভাজন বড়ই বেদনার। কাটোয়ার সাহিত্যিক সাংবাদিকদের প্রতি আলাদা টান ছিল হাসান আজিজুল হক সাহেবের।সাহিত্যিক তুষার পন্ডিত, কিংবা সাংবাদিক রণদেব মুখোমুখি – চন্দ্রনাথ মুখার্জির সাথে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এই প্রয়াত সাহত্যিকের। গবেষণাধর্মী লেখক তথা সাংবাদিক রণদেব মুখোপাধ্যায় বলেন – ” সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটাতে তিনি সর্বদা আন্তরিক ছিলেন। আমরা কাটোয়া মহকুমাবাসি হিসাবে ভূমিপুত্র হাসান আজিজুল হক সাহেব কে নিয়ে গর্ববোধ করি”। সাহিত্যিক তুষার পন্ডিত বলেন – ” উনি কাটোয়ার সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চাতে বেশ কয়েক বার অংশগ্রহণ করে গেছেন। গত ২০১২ সালে শেষ এখানে এসেছিলেন “।  আগামী ৩ রা মার্চ মঙ্গলকোটের কোগ্রামে  পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের জন্মদিন পালনে কুমুদ  সাহিত্য মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চটি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক  হাসান আজিজুল হক স্মরণে রাখা হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি যেসব গবেষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের সাথে তাঁর অতীত কেটেছে। সেইসব ব্যক্তিদের নিয়ে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে বলে কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির তরফে জানা গেছে। 

ছবি ; কাটোয়ায় এক গবেষণাধর্মী লেখক রণদেব মুখোমুখি এর সাথে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *