Spread the love

অসহায়দের পাশে বর্ধমানের স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা ‘সম্পর্ক’

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,

      দীর্ঘদিন ধরেই অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে টুকটাক করে ছোটখাটো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন ওরা, বর্ধমান শহরের কালাচাঁদ তলার কয়েকজন বাসিন্দা। কিন্তু আকাশ ছোঁয়া যাদের স্বপ্ন তাদের তো এখানেই থেমে থাকা সাজেনা। অসহায়দের সঙ্গে সম্পর্কটা দৃঢ় করার লক্ষ্যে ওরা গড়ে তুললেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা 'সম্পর্ক'। সদস্য শতাধিক। ঘটনাটা সেদিনের, ২০২১ এর জুন মাসের। সংস্হা গড়ে তুলেই ওরা থেমে থাকেনি। বারবার ছুটে গেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। দাঁড়িয়েছে অসহায় মানুষের পাশে।

      গত ৩ রা অক্টোবর সংস্হার সদস্য সুজিত দে, বনানী সামন্ত, অলোক বিশ্বাস, তারকনাথ অধিকারী, সোনালী দে, সুভদ্রা বিশ্বাস, অপরূপ মুখার্জ্জী, বৈশাখী ঘোষ প্রমুখরা হাজির হয়ে যান পুরুলিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত রুগরুঘুটু গ্রামে। সাতসকালে গ্রামের সরল সাধাসিধে মানুষরা ওদের দেখে প্রথমে চমকে ওঠে। অবাক বিষ্ময়ে দেখে সঙ্গে আনা গাড়ি থেকে একে একে নামছে নতুন বস্ত্র, খাদ্যসামগ্রী। বিভিন্ন বয়সের শতাধিক শিশু, নারী, পুরুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাদের প্রয়োজনীয় নতুন বস্ত্রগুলি। একইভাবে শতাধিক পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় চাল, ডাল, আলু, সরষের তেল, লবণ, সয়াবিন সহ দশ রকমের খাদ্য সামগ্রী এবং অ্যালুমিনিয়ামের বালতি ও প্লাস্টিকের মগ। ক্রাচ ও হুইল চেয়ার দেওয়া হয় দু'জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষকে। এছাড়া কয়েকজন শিশু ও মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হয় হরলিক্স ও ওষুধ। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর  হাতে তার প্রয়োজনীয় বই, খাতা, পেন সহ সমস্ত শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।     

  অযোধ্যা পাহাড়ে থাকাকালীন 'সম্পর্ক' খবর পায়  দ্বারকেশ্বর নদের জলোচ্ছাসে আরামবাগের কালিপুর  অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করে কালিপুর স্বামীজী হাইস্কুল এবং কলেজে আশ্রয় দিয়েছে। অযোধ্যা থেকেই দ্রুত বর্ধমানে থাকা সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তারা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সংগ্রহ করে ফেলে মুড়ি, চিঁড়ে, কলা, বিস্কুট, পাউরুটি, চিনি ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রী ও পরিধেয় বস্ত্র সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সেগুলি নিয়ে ৫ ই অক্টোবর ‘সম্পর্ক’ পৌঁছে যায় আরামবাগের বন্যা দুর্গত কালিপুরে।। কালিপুর স্বামীজী হাইস্কুলে আশ্রিত ৮০ জন ও কলেজে আশ্রিত ৭৫ জনের হাতে সেইসব সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় । সাথে বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুজোর নতুন পোশাক। সেগুলি বিতরণের সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কালিপুর স্বামীজী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীরা।
সংস্হার অন্যতম কনিষ্ঠা সদস্য বৈশাখী ঘোষ বললেন – করোনার সময় সমাজসেবার কাজ করেছি। কিন্তু সব থাকতেও বন্যায় সব হারানো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা এই প্রথম। খুবই বেদনাদায়ক দৃশ্য।
সংস্হার সহ সম্পাদিকা আপাদমস্তক গৃহবধূ বনানী সামন্ত বললেন – আমাদের লক্ষ্য আপদে-বিপদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের সদস্যদের অধিকাংশ জনই আর্থিক দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং বহু সহৃদয় মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কাজের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধা হয়। তিনি আরও বললেন – আগামী দিনে আমাদের লক্ষ্য প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা খরচে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা। জানা যাচ্ছে সংস্হার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তিনটি স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *