Spread the love

অমাবস্যার পর রঙ হয় ছেলেকালীর,

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

       যেমন হয় আরকি, গ্রামের রাখাল ছেলেদের শখ। আর্থিক সামর্থ্য ছিলনা। কিন্তু পুজো করার ইচ্ছে ছিল। ইচ্ছে পূরণ করার জন্য গরু চড়াতে গিয়ে অমাবস্যার দিনে গ্রামের বাইরে অবস্হিত শ্মশানে খেলার ছলে কালীমূর্তি তৈরি করে তারা শুরু করে দেয় পুজো। আনুষ্ঠানিক পুরোহিত বা মন্ত্র অথবা ফলমূল না থাকলেও তাতে আন্তরিকতার অভাব ছিলনা। পুজোর কথা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের গ্রামে। পুজোর কথা কানে যায় গ্রামের দুই বাসিন্দা সৌরেন্দ্র নাথ মিশ্র ও মাধবলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের কানেও। হয়তো কাকতলীয়, একই রাতে দু'জনেই মায়ের স্বপ্নাদেশ পান।  মায়ের নির্দেশে শ্মশান থেকে মা'কে আনা হয় গ্রামে। যেহেতু ছেলেদের দ্বারা মা প্রথম পূজিত হন তাই মায়ের নাম রাখা হয় ছেলেকালী। ঘটনাটি পশ্চিম মঙ্গলকোটের পালপাড়া গ্রামের এবং প্রায় তিনশ বছর আগেকার। 
        আগে একুশটি শরিক ছিল।   বর্তমানে মিশ্র বাড়ির কেউ নেই। কেবলমাত্র গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির সদস্যরা আছেন। গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির যেকোনো সদস্য অনুমতি  দিলেই তবেই মায়ের চক্ষুদান করা হয়। মাঝরাতে ঠাকুরের ঘট আসে। দূর দূরান্তের মানুষ জন মায়ের কাছে মানত করে। ভোগ হয়। মায়ের ভোগ খাওয়ার জন্য আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে হাজির হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো কেউ কিন্তু নিমন্ত্রিত থাকেন না। শুধুমাত্র মায়ের টানে চলে আসেন। সেই ভোর থেকে শুরু হয় ভোগ খাওয়া। চলে অনেক বেলা পর্যন্ত। অথচ কোনোদিন ভোগে কম পড়েনি। শেষ মানুষটিও ভোগ খান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ একসঙ্গে বসেই ভোগ খান। ভাতৃদ্বিতীয়ার পর মায়ের মূর্তি বিসর্জন করা হয়। মায়ের কোনো কাজ মেয়েরা করতে পারেনা।
         ভোগের কথা বলতেই দীর্ঘদিনের পুরোহিত আনন্দ ব্যানার্জ্জী বললেন - সবই মায়ের লীলা। এখানে নিমন্ত্রিত কেউই থাকেন না। ফলে সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। অথচ আজ পর্যন্ত শুনতে পাইনি ভোগে টান পড়ায় কেউ ভোগ না খেয়ে ফিরে গেছে। তিনি আরও বললেন মায়ের কৃপায় মুর্ছা, অর্শ, মেয়েদের বিভিন্ন রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়।
        মিশ্র বাড়ি ও গাঙ্গুলি বাড়ির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছে পালপাড়ার শৈলেন মুখার্জ্জীর পরিবার। বর্তমানে তিনি পুজো পরিচালনা করেন। শৈলেন বাবু বললেন - মিশ্র বাড়ির কোনো পুরুষ সদস্য জীবিত নাই। গাঙ্গুলি বাড়ির সদস্যরা উঠে গেছেন প্রতিবেশি গণপুর গ্রামে। পুজোর সময় তারা উপস্থিত থাকলেও মোটামুটি সবার সহযোগিতায় আমিই পুজোর দেখাশোনা করি। সেভাবে প্রচার না থাকলেও মায়ের মন্দিরের পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা মায়ের মূর্তিকে একবার দর্শন করবেই। তিনি আরও বললেন - ত্রিবেণী নিবাসী মিশ্র বাড়ির দৌহিত্র শুভজিৎ ব্যানার্জ্জীর আর্থিক সহায়তায় বর্তমান মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তিনি সমস্ত রকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *