Spread the love

অকাল মৃত্যু মঙ্গলকোটের তরুণ সমাজসেবীর,

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

          অবশেষে তিন মাসের লড়াই শেষ। মারণ রোগ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র বত্রিশ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন পশ্চিম মঙ্গলকোটের জালপাড়ার বিশিষ্ট সমাজসেবী সত্যনারায়ণ মণ্ডল। পিছনে ফেলে গেলেন স্ত্রী, তিন বছরের শিশু সন্তান, বাবা-মা, দাদু-ঠাকুমা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং অসংখ্য গুণগ্রাহীদের। 

           গত ১১ ই আগষ্ট বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার জিভে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য তাকে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তারদের পরামর্শ মত বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে দুটি 'কেমো' দেওয়া হয় এবং পুনরায় মুম্বাইয়ের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষার পর তাকে দুটি 'রে' এবং আরও দুটি 'কেমো' দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেইমত কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৫ ই ও ৬ ই নভেম্বর দুটি 'রে' দেওয়া হয়। দ্বিতীয় 'রে' দেওয়ার পর তার অবস্থার অবনতি ঘটে এবং ডাক্তারদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে গত ৭ ই নভেম্বর ভোর ৫.৪০ মিনিটে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। মৃত্যুর সময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন কাকা, ভাই, দাদা ও 'গিভস' এর সম্পাদক।

       বিকালে গ্রামের বাড়িতে তার মৃতদেহ নিয়ে আসা হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সুদূর বাঁকুড়া থেকে ছুটে আসেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্যামানন্দ মুখার্জ্জী সহ অনেকেই , দুর্গাপুর থেকে আসেন পশ্চিম বর্ধমান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাহুল ঘোষাল, আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, গলসী, খানা, গুসকরা ও আশেপাশের এলাকার অসংখ্য সাধারণ মানুষ। আর ছিল সত্য বাবুর স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা 'গিভস' এর সম্পাদক নাসিমুদ্দিন মল্লিক, স্বরূপ, রূপ, অরিন্দম সহ অন্যান্য সদস্যরা। শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে উপস্থিত থাকতে না পারলেও শোকবার্তা পাঠান পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সহ সভাপতি জাকির হোসেন ও গলসী ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চ্যাটার্জ্জী। 

            ছাত্র জীবন থেকেই সত্যের মধ্যে সমাজসেবার প্রবণতা দেখা যায়। সেই সময়ই পরিচয় হয় আর এক সমাজসেবক নাসিমুদ্দিন মল্লিক ওরফে বাপনের সঙ্গে। তারা যুক্ত হয় একটি সমাজসেবী সংস্হার সঙ্গে। পরে বছর ছ'য়েক আগে একদল যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা 'গিভস'। এর আগেই বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা তথা স্বাস্থ্য শিবির এবং অন্যান্য সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে একটা পরিচিতি তো ছিলই, বর্তমান সংস্হায় এসে সেই পরিচিতি আরও বিস্তৃতি লাভ করে। দুস্থদের বস্ত্রদান, গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের হাতে ক্রাচ ও ট্রাই সাইকেল দেওয়া, রক্তদান করা, এমনকি একটি থানার উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের  'সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ' প্রকল্পেও সত্যকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এইভাবে খুব অল্প বয়সেই সমাজসেবক হিসাবে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সদা হাস্যময় সত্য বাবু বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। 

          শ্যামল বাবু বলেন - সত্য অসুস্থ জানতাম, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে বুঝতে পারিনি। 

          দীর্ঘ ষোলো বছরের ছায়াসঙ্গী সত‍্যর অকাল মৃত্যুতে কার্যত শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন সত‍্যর প্রিয় বাপনদা ওরফে 'গিভস' এর সম্পাদক নাসিমুদ্দিন। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি শুধু বললেন - পারলাম না, হেরে গেলাম। প্রসঙ্গত ১১ ই আগষ্ট থেকে মৃত্যু পর্যন্ত  কার্যত প্রতি মুহূর্তেই সত্যের পাশে ছিল বাপন এবং গিভসের কোনো না কেন সদস্য। প্রিয় সত্য বা সত্যদাকে হারিয়ে 'গিভস' এর সদস্যরা বাকরূদ্ধ। হতাশ দৃষ্টিতে তারা তাকিয়ে সত্যর জ্বলন্ত চিতার দিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *