৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী বিধান শিশু উদ্যানেএর
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
আপামর বাঙালি হৃদয়ে বিরাজমান বিধান শিশু উদ্যান। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় স্মরণে তাঁরই ডানহাত অতুল্য ঘোষ গড়ে গেছেন বিধান শিশু উদ্যান থেকে বিধান শিশু হাসপাতাল। যা আজও খাঁটি বাঙালিয়ানার পথে শৈশবকাল কে উন্নতর পথে নিয়ে যাচ্ছে বিধান শিশু উদ্যান। ১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২২। ঠিক ৪৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালের আজকের দিনে বিধান শিশু উদ্যানের পথচলা শুরু হয়েছিল। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মাননীয় রাষ্ট্রপতি ড.ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ। কয়েক দশক ধরে সর্বভারতীয় রাজনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে এসে বিধান শিশু উদ্যান তৈরী করেছিলেন যিনি, তিনি অতুল্য ঘোষ। অনন্য সাধারণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন অতুল্য ঘোষ।যিনি শিশুদের কাছে কানাদাদু হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য ড.বিধান চন্দ্র রায়ের স্মৃতিতে তৈরী করেছিলেন সবরকমের সুবিধা যুক্ত শিশু হাসপাতাল, উত্তর কলকাতার নারকেলডাঙ্গায় ফুলবাগানের কাছে এই শিশু হাসপাতাল টি অবস্থিত।আর সমস্ত বাচ্চাদের জন্য উল্টোডাঙ্গার হাডকো মোড় সংলগ্ন এলাকায় গড়েছিলেন বিধান শিশু উদ্যান। হাজার হাজার মানুষ যাঁরা বেড়াতে আসেন তাঁদের কাছে বিধান শিশু উদ্যান বিনোদন পার্ক। আবার যেসব শিশুরা রোজ নাচ,গান,আবৃত্তি, অঙ্কন,যোগা, টেবিল টেনিস, সাঁতার, ক্রিকেট, রোলার স্কেটিং, এ্যাথলেটিক্স শিখতে আসে তাদের কাছে বিধান শিশু উদ্যান শিক্ষাঙ্গন। বিধান শিশু উদ্যান তাই শুধু বিনোদন পার্ক নয় বা শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়। এই দুইয়ের সংমিশ্রণে অন্য কিছু একটা। তাইতো ছেচল্লিশ বছর পরেও ছোটেদের কাছে বিধান শিশু উদ্যান এতো আকর্ষণীয়। অতুল্য ঘোষ বুঝেছিলেন ভবিষ্যতে বিনোদন পার্ক অনেক তৈরী হবে। কিন্তু বিধান শিশু উদ্যান আর তৈরী হবে না। এখানেই স্রষ্টার দূরদৃষ্টির বাস্তব প্রকাশ। তাই এতো বছর পেরিয়ে এসে অতুল্য ঘোষ এর ভাবনায় বিকশিত হয়ে আমাদের দাদুর ভাবনা পাথেয় করে আমরা এগিয়ে চলেছি বলে জানিয়েছেন বিধান শিশু উদ্যান এর সম্পাদক গৌতম তালুকদার। । তবে চলার পথে বিস্তর কাঁটা। তবুও বিধান শিশু উদ্যান আছে,থাকবে। ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাস্ট্রপতি ড.ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ রাষ্ট্রপতিভবন থেকে দশটি গোলাপের চারা নিয়ে এসেছিলেন বিধান শিশু উদ্যানে। তার মধ্যে দুটি এখোনো আছে। গাছ দুটি অজস্র ডালপালা নিয়ে আট দশ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন উদ্যান বন্ধ ছিল। বাচ্চারা আসতে পারেনি। চারিদিকে গাছ আর গাছ। ছোটোরা তো দূরের কথা বড়দের পক্ষেও সেই ঘন ঘন গাছের মধ্য দিয়ে হাঁটাচলা করা অসম্ভব ছিল। গত দু মাস ধরে সেসব আগাছা পরিষ্কার করার পর দেখা গেল সেই গাছ দুটিতে অজস্র গোলাপ ফুটে আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো ১ লা ফেব্রুয়ারি থেকে খুলে যাবে সমস্ত করোনাবিধি মান্য করে। ধাপে ধাপে শুরু হবে নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কনের ক্লাস। খেলার মাঠে আবার শুরু হবে খেলুড়েদের দৌড়াদৌড়ি। গেটের কাছে সেই গোলাপ গাছটি দাঁড়িয়ে আছে ফুলের সম্ভার নিয়ে তার বন্ধুদের স্বাগত জানাবে বলে। যাদের উপস্থিতিতে বিধান শিশু উদ্যানে প্রানের সঞ্চার হয়।এই শিশু উদ্যানে শৈশব কাল অতিবাহিত করা পল্লিকবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের নিকটাত্মীয় মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান – ” আমি আমার দাদু ( জ্যোৎস্না মল্লিক) এর সাথে নিয়মিত যেতাম বিধান শিশু উদ্যানে।ওখানে ছবি আঁকা থেকে ব্রতচারী সমস্তকিছুই শিখেছি “।