Spread the love

হাইকোর্টে সাময়িক স্বস্তি পেলেন মন্দারমণির হোটেল মালিকরা

বৈদূর্য ঘোষাল

শুক্রবার সাময়িক আইনী স্বস্তি পেল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার  মন্দারমণির  হোটেল ব্যবসায়ীরা।’অবৈধ’ হোটেল বা লজ কোনওটাই আপাতত ভাঙা যাবে না। শুক্রবার এই নির্দেশই দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সম্প্রতি  মন্দারমণির ‘অবৈধ’ হোটেল-লজগুলি ভেঙে ফেলার যে নির্দেশ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন, তাতেই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতির নির্দেশ -‘আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ থাকবে’। আগামী ১০ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। মন্দারমণিতে ১৪০টি হোটেল, রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলতে হবে, এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই নির্দেশ নিয়ে সরব হলেও জেলাশাসকের নোটিস নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন মন্দারমণির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মামলাও করেন কলকাতা হাইকোর্টে। অবশেষে সেই মামলায় স্থগিতাদেশ দিল আদালত। আপাতত ভাঙা যাবে না মন্দারমণির কোনও হোটেল।পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে ১৪০টি হোটেল ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক।  শুক্রবার ছিল সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি। বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন, -‘আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেল ভাঙার উপর অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ থাকছে। অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেলগুলির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না’। আগামী ১০ ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।হোটেল মালিকদের তরফে আদালতে সওয়াল করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন ওঠে, ১৯৯৯ সালের নির্দেশের পর, এখন কেন হোটেল ভাঙার কথা বলা হচ্ছে? আইনজীবী বলেন, “কমিটির যদি কোনও ক্ষমতা না থাকে বন্ধ করার, তাহলে সে কি পারে ভেঙে ফেলতে? সেখানে একটা শিল্প চলছে। পর্যটক শিল্প।” বিচারপতি হোটেল মালিকদের কাছে জানতে চান, -‘তাঁদের কোনও রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে কি না? কোনও পদক্ষেপ করা  হয়েছে কি না? ‘সেটাও জানতে চান তিনি।এই নির্দেশে আপাতত স্বস্তি পেলেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। হোটেল মালিক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে , -‘ তাঁদের নোটিস বারবার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সীমারেখা কোথায়, সেটা জানানো হয়নি। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে উত্তর না আসায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা’।মন্দারমনি মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ ডিসেম্বর। ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা শাসককে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।মন্দারমনিতে সমুদ্র সৈকত দখল করে একের পর এক হোটেল তৈরি হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে বহু হোটেল তৈরি হয়েছে। সমুদ্র সৈকতের ওপর প্রাচীর দিয়ে পর্যটকদের জন্য রীতিমতো আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করা হয়েছে হোটেলগুলোতে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে  ২২ নভেম্বরের মধ্যে শতাধিক ‘বেআইনি’ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নোটিস দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০২২ সালে এই বেআইনি হোটেলগুলি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। কারণ, হোটেলগুলি উপকূল বিধি না-মেনেই গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে শুধু দাদনপাত্রবাড়েই রয়েছে ৫০টি হোটেল, সংলগ্ন সোনামুইয়ে ৩৬টি, সিলামপুরে ২৭টি, মন্দারমণিতে ৩০টি হোটেল এবং দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর মৌজায় একটি লজ রয়েছে। এ সবই ভাঙা পড়ার কথা।তবে এই নোটিসকে ঘিরে প্রশাসন স্তরে রীতিমতো চাপান উতোর শুরু হয়। অভিযোগ শীর্ষস্তরের কোনও জেলা আধিকারিক এই নোটিসের বিষয়ে জানতেন না। এমনকী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও এই নোটিসের বিষয়ে অন্ধকারে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়ে দেন কোনও বুলডোজার চালানো হবে না। এই বিষয়ে হোটেল মালিকদের সঙ্গে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে দেখে মন্দারমনির হোটেল মালিকরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁরা হাইকোর্টে জানান, ‘এই হোটেলের ওপর নির্ভর করেই সংসার চলে কয়েক হাজার পরিবারের। এই হোটেলগুলো তৈরির আগে প্রশাসনের তরফে সব ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তাই এখন এই হোটেলগুলো অবৈধ ঘোষণা কোনওভাবে করা যেতে পারে না।’ শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে মন্দারমনিতে হোটেল ভাঙার নির্দেশের ওপর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়। ১০ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে মামলার সব পক্ষকে রিপোর্ট হাইকোর্টে পেশ করতে হবে বলে হাইকোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *