স্কুল ফি নিয়ে পড়ুয়া কে বিতাড়িত করা যাবেনা, কলকাতা হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জির ডিভিশন বেঞ্চে স্কুল ফি সংক্রান্ত মামলায় জানিয়ে দেওয়া হলো – ‘কোন পড়ুয়া কে স্কুল ফি নিয়ে বিতাড়িত করা যাবেনা। পাশাপাশি তাকে পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে’। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন একদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে অভিভাবকরা অভিযোগ জানায়। অভিভাবকরা যাতে দুটি ভাগে বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ, ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া অংকের টাকাও স্কুলকে মেটাতে হবে। স্কুল এই টাকা পৃথকভাবে জমা রাখবে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। কোন পড়ুয়ার থেকে কত টাকা পাওয়া গেল, তা ২৫ অক্টোবরের পর স্কুলগুলি পৃথকভাবে সেই তালিকা তৈরি করবে। আগামী ৩ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানিতে সেই তালিকা আদালতকে জমা দিতে হবে।এর আগে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির বেতন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুলগুলির বিরুদ্ধে ফি বাড়ানোর অভিযোগ করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন অভিভাবকরা।মারণ ভাইরাস করোনা আবহে দেড় বছরের বেশি সময়কাল ধরে দেশের স্কুল কলেজে পঠন পাঠন বন্ধ।স্কুল বন্ধ তাই স্কুল ফি কিসের? এই দাবি কে সামনে রেখে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট অবধি মামলায় গিয়েছেন বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকদের একাংশ। তবে বেসরকারি স্কুল বন্ধ থাকলেও সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ স্কুলের অশিক্ষক কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ গুলি আসবে কোথা থেকে? তাই বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষরাও আইনী লড়াইয়ে থেকেছেন একান্ত বাধ্য হয়েই।এই পরিস্থিতিতে গত শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জির ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল বেসরকারি স্কুল ফি সংক্রান্ত মামলা।সেখানে বিচারপতিরা স্কুলের অভিভাবকদের স্কুল ফি নিদিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জমা দিতে বলেছেন। তবে ৫০% ফি দিতে হবে, বাকি ২৫% দু সপ্তাহের পর।এখন বেসরকারি স্কুল গুলিতে অনলাইনে চলছে পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে বেতন সংক্রান্ত নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আগের শুনানিতে জানিয়েছে, -‘ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যে সমস্ত বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা এখনও পর্যন্ত বেতন জমা করেনি, অবিলম্বে তাদের বকেয়া বেতন দিতে হবে স্কুলকে। বকেয়া বেতনের ৫০ শতাংশ অবিলম্বে জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে উচ্চ আদালত। বাকি ২৫ শতাংশ দিতে হবে দুই সপ্তাহের মধ্যে’। এদিকে অভিভাবকদের তরফে অভিযোগ, অতিমহামারী পরিস্থিতিতে বাড়তি বেতন নিচ্ছে বেসরকারি স্কুলগুলি। যে সমস্ত ক্ষেত্রের পরিষেবা তারা দিচ্ছে না, তার বেতনও নেওয়া হচ্ছে। কিছুতেই রেয়াত করা হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন -‘অবিলম্বে বিদ্যালয়গুলিকে বেতনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সেই বিল অভিভাবকদের কাছে পাঠাতে হবে’। পাশাপাশি বকেয়া বেতন কত রয়েছে তার তালিকাও আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানা গেছে। এর আগের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জি এবং বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল বকেয়া স্কুল ফি সংক্রান্ত মামলা।ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিল – ‘ ৩ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে বকেয়া স্কুল ফির ৫০% না মেটালে পড়ুয়াকে কোন আগাম নোটিশ ছাড়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড কিংবা বিতাড়িত করতে পারে। শুধু তাই নয় মাধ্যমিক ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের শংসাপত্র স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে নাও দিতে পারে ‘। কোভিড ও লকডাউনে অনেক পড়ুয়াই স্কুল ফি জমা করেনি।কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে – ‘ ৩ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া স্কুল ফির ৫০% মেটাতে হবে অভিভাবকদের।তা না হলে ওই পড়ুয়ার বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ‘। এর আগের শুনানি তে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ – ‘ এটা খুব দুঃখজনক যে, বহু অভিভাবক সরকারি চাকরি করছেন। তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে। তাও তারা স্কুল ফি দিচ্ছেন না।স্কুল ফি ছাড়া তারা অন্য সব ব্যাপারে খরচ করছেন। কিন্তু এ ব্যাপারেই তাদের সব অনিহা।নুন্যতম স্কুল ফি না দিলে বেসরকারি স্কুল চলবে কিভাবে? শিক্ষক শিক্ষিকা স্কুল কর্মীদের বেতন সহ পরিকাঠামোগত খরচ আছে। সেটা কেন বুঝছেন অভিভাবকেরা’? এহেন কড়া পর্যবেক্ষণ জানিয়ে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল – ‘ ৩ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া স্কুল ফি এর ৫০% জমা দিতে হবে অভিভাবকদের।না দিলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া কে সাসপেন্ড কিংবা বিতাড়িত করতে পারে আগাম কোন নোটিশ ছাড়াই। এমনকি মাধ্যমিক ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের শংসাপত্র স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে নাও দিতে পারে ‘। এর আগের নির্দেশে বকেয়া স্কুল ফি এর ৮০% জমা দিতে বলা হয়েছিল।আগে তা ৫০% করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি শংসাপত্র প্রদান থেকে সাসপেন্ড / বিতাড়িত করার ক্ষমতা স্কুল কর্তৃপক্ষ কে দেওয়ায় খুশি বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ গুলি। তবে গত মাসে অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিদিষ্ট সময়সীমা বেঁধে স্কুল ফি এর ৫০% দ্রুত মিটিয়ে দিতে বলেছিল। দু সপ্তাহের পর ২৫% স্কুল ফি দিতে হবে। আগামী ৩ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় – স্কুল ফি নিয়ে কোন পড়ুয়া কে বিতাড়িত করা যাবেনা। আবার পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা যাবেনা।২৫ অক্টোবরে মধ্যে বকেয়া ফি মেটাতে হবে অভিভাবকদের কে।