সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে বার্তা প্রধান বিচারপতির,
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের তরফে রিপোর্ট জমা পড়লো। দিল্লির বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার পয়গম্বর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে অশান্তিকর পরিস্থিতি চলে হাওড়ার একাংশে । রাস্তা, রেল অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজিতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে জনজীবন। হাওড়া ছাড়াও রাজ্যের একাধিক জেলায় চলে তাণ্ডব। এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে ৬ টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।হাওড়া সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় অশান্তির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল হাইকোর্ট এর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ । বুধবার এই রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য। এদিন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে । কোন জেলায় কতগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছে? কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? বিস্তারিত খতিয়ান এদিন তুলে ধরা হয়েছে রাজ্যের পক্ষে।এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে।কলকাতা হাইকোর্টের তরফে।বুধবার রাজ্যের তরফে এজি আদালতে জানান, -‘ অশান্তির ঘটনায় রাজ্যে মোট ২৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য সব পদক্ষেপ করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হাওড়ায় মোট পাঁচ জায়গায় সমস্যা হয়েছিল’। এফআইআর হয়েছে মোট ১৭ টি, ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে হাওড়ায়। এ ছাড়া হাওড়া গ্রামীণে ৯ টি এফআইআর হয়েছে, ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে চারটি এফআইআর হয়েছে, পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি জায়গায় সমস্যা হয়েছে বলে দাবি রাজ্যের, এই জেলায় ৫টি এফআইআর হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে তিনটি এফআইআর হয়েছে, যার ভিত্তিতে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেথুয়াডহরিতে ৩টি এফআইআরের ভিত্তিতে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারে একটি এফআইআর হয়েছে ও ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিধাননগরে এফআইআর হয়েছে একটি।মামলাকারীদের দাবি, – ‘ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা নামাতে হবে কারণ প্রতিটি জীবন গুরুত্বপূর্ণ’। পাশাপাশি বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে। বুধবারের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এজলাসে জানান , -‘ একজন নাগরিক হিসেবে যাতে শান্তি বজায় থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে আমাদের’। হাওড়া-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় অশান্তির পর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে মামলা দাখিল করে থাকেন এক আবেদনকারী,পরবর্তীতে এই নিয়ে আরও মামলা দাখিল হয়েছে । এই মামলায় হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করেছে রাজ্য সরকার।রাজ্যের রিপোর্টে জানা গেছে -‘ হাওড়ার পাঁচটি স্থানে অশান্তি ঘটেছিল, ১৭ টি এফআইআর করা হয়, ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বারাসাতে ৩ টি জায়গায় অশান্তি হয়েছে, ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ৪ টি এফআইআর করা হয়েছে। এই ঘটনায় মুর্শিদাবাদের ৩ টি স্থানে অশান্তি হয়েছে, ৫ টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অশান্তির ঘটনা ঘটেছে কৃষ্ণনগর, খড়গপুর, ডায়মন্ডহারবার, শিয়ালদহ, বিধান নগরে। প্রায় সর্বত্রই বেশকিছু সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, করা হয়েছে এফআইআর। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পেশ করা হয়েছে। শেষ ৪৮ ঘণ্টায় কোনো ঘটনা ঘটেনি।মামলাকারীরা জানিয়েছেন -‘ প্রতিবাদের নামে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কেন হবে?’ রাজ্যে সমস্ত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মিছিল বন্ধ করার দাবি করেছেন অনেকেই। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন অটুট রাখতে নাগরিকের অধিকার যথাযথভাবে পালনের আবেদন রেখেছেন প্রত্যেকের কাছে।